প্রকাশিত:
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৮:২৮
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, তারিখটা বাংলার ফুটবল ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। গত বছর এই দিনে নেপালে কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের হারিয়ে সাফ শিরোপা জয় করে বাংলার নারী ফুটবলকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যায় কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা।
মঙ্গলবার(১৯ সেপ্টেম্বর) শিরোপা জয়ের এক বছর পূর্ণ হয়েছে।
বর্তমান নারী ফুটবলের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। সাফ শিরোপা জয়ের পর নারী ফুটবল দল যেন হাটছে উল্টো পথে। সাফ জয়ের পর যেখানে আরও বেগবান হওয়ার কথা ছিল ঠিক ততটাই যেন স্থবির হয়েছে সব কিছু। সাফ জয়ের পর জানুয়ারিতে ফুটবল থেকে অবসর নেন আনুচিং মোগিনি এবং সাজেদা খাতুন। ক্যাম্প থেকে বাদ পরার ফলে অভিমানে অবসর নেন দুই ফুটবলার।
অভিমানে ফুটবল ছাড়ার ঘোষণা দেন সিরাত জাহান স্বপ্নাও। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের সাফ শিরোপা বিজয়ী ফুটবল দলের অন্যতম সদস্য। কাঠমান্ডুতে তিনি বাংলাদেশের হয়ে চারটি গোল করে দলের সাফল্যে বিরাট ভূমিকা রাখেন। দেশ ছেড়েছেন দলের ডিফেন্সের মূল ভরসা আঁখি খাতুন। বর্তমানে চীনে অবস্থান করছেন তিনি। ফুটবল ছাড়ার বিষয়ে স্পষ্ট কোনও ঘোষণা না দিলেও ইঙ্গিত ছিল তেমনই কিছুর।
ফুটবলারদের অবসরের মিছিলে সবচাইতে বড় ধাক্কাটা ছিল কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের পদত্যাগ। শুরু থেকেই নারী ফুটবলের সঙ্গে ছিলেন ছোটন। এনে দিয়েছেন একের পর শিরোপা। বয়সভিত্তিক থেকে শুরু করে জাতীয় দলে তার সাফল্যের ধারে কাছে নেই অন্য কোনও কোচ। সাবিনাদের পিতৃতুল্য কোচ সেই ছোটনও নারী ফুটবল ছাড়লেন অভিমান নিয়েই। যদিও দায়িত্ব ছাড়ার পর ক্লান্তিকেই কারণ হিসেবে বলেছেন। তবে মূল কারণ আজানা নয় কারোই।
সাফ জয়ের পর যেখানে নারী ফুটবলারদের খেলার চাপ আরও বেড়ে যাওয়ার কথা; সেই নারী ফুটবলারদের ম্যাচ খেলার জন্য অপেক্ষা করতে হয় প্রায় ১০ মাস। ১৩ এবং ১৬ জুলাই নেপালের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলে সাবিনারা। দুটি ম্যাচেই ড্র সঙ্গী হয়েছে তাদের। যেই নেপালকে তাদের মাটিতে হারিয়ে সাফ জিতেছিল বাংলাদেশ ঘরের মাঠে সেই নেপালের বিপক্ষে এক ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র অন্য ম্যাচে গোলশূণ্য ড্র। একটি ম্যাচ মাঠে বসেই দেখেছেন দলের সাবেক কোচ ছোটন। সাফ জয়ের পরে তাদের পারফরম্যান্সে মন ভরেনি তার।
ছোটন বলেন, ‘সাফ জিতে বাংলাদেশের মেয়েরা দেশবাসীকে আনন্দে ভাসিয়েছিল। সেই স্মৃতি এখনো আনন্দ দেয় আমাকে। আমি সেই দলের কোচ ছিলাম এটা আমার জন্য গর্বের। দলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। কারণ এখন আমি দলের সঙ্গে নেই। নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ আমি মাঠে গ্যালারিতে বসে দেখেছি। সেখানে দলের অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। অনেক খেলোয়াড় ছিল না। তবে আমরা নেপালে তাদের বিপক্ষে যেমন আধিপত্য বিস্তারর করে খেলেছি ঘরের মাঠে তেমনটা দেখা যায়নি। নিয়মিত খেলা থাকলে হয়তো মেয়েরা আরও উন্নতি করতে পারতো। ’
ঐ ম্যাচে গ্যালারিতে বসে খেলা উপভোগ করেছেন সিরাত জাহান স্বপ্নাও। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল গ্যালারিতে বসে নিজের দলের খেলা দেখবো। দেখেছিলাম। আমরা আরও ভালো কিছু করতে পারতাম। তবে এখন আমি দলের সঙ্গে নেই ফুটবল ছেড়েছি। দলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। আগের অনেক সমস্যাই ছিল যেগুলো এখন ঠিক হচ্ছে। ধীরে ধীরে দল আরও ভালো অবস্থানে যাবে এটাই আমার প্রত্যাশা। ’
সাফ জয়ের পর নানান সংবর্ধনা পেলেও বেতন ভাতার দাবিতে কয়েক দফায় ক্যাম্প বর্জনের কথা বলতে হয়ছে ফুটবলারদের। বারবার মিলেছে আশ্বাস। অবশেষে দেরিতে হলেও হুঁশ হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে)। গত আগষ্টে বেতন বেড়েছে সাবিনা-সানজিদাদের। পাশাপাশি বিভিন্ন শর্তও দেয়া হয়েছে। বাফুফের সঙ্গে ৬ মাসের নতুন চুক্তিতে আবদ্ধ হন তারা। চুক্তিবদ্ধ ৩১ ফুটবলারের মাঝে ১৫ জন পাবেন মাসিক ৫০ হাজার টাকা। ১০ জন পাবেন মাসিক ৩০ হাজার টাকা। বাকি ৬ জনকে দেয়া হবে মাসিক ১৫-২০ হাজার টাকা। এর আগে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা বেতন পেতেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। বাকিরা পেতেন ১০ হাজার টাকা করে।
প্রথমবারের মত এশিয়ান গেমসে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। বর্তমানে এশিয়ান গেমসে খেলতে চায়নায় অবস্থান করছেন সাবিনারা। প্রথম অংশগ্রহণেই বাংলাদেশের মেয়েরা পড়েছে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জাপানের সামনে। গ্রুপে আছে সর্বশেষ বিশ্বকাপ খেলা ভিয়েতনাম, আর দক্ষিণ এশিয়ার দল নেপাল। সাবেক শিষ্যদের শুভ কামনা জানিয়েছেন কোচ ছোটন। তিনি বলেন, ‘মেয়েরা প্রথমবারের মত এশিয়ান গেমসে খেলবে। এটা তাদের অভিজ্ঞতার জন্য অনেক উপকারী হবে। কারণ জাপান, ভিয়েতনামের মত দলের বিপক্ষে খেললে নিজেদের অবস্থানটা যাচাই করতে পারবে। তাদের জন্য সবসময়ই আমার শুভকামনা থাকবে। এবারের আসরে ভালো কিছু করবে এটাই আমার প্রত্যাশা। ’
মন্তব্য করুন: