প্রকাশিত:
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৪১
নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তি চালিত ভাগ্য গঠনে একটি বিশেষ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আমাদের শক্তির ৪০ শতাংশ অর্জনের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে তা থেকে আমাদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে ভূমিকা রাখবে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা থেকে আমাদের মুক্ত করতে পারে। এর পরিবেশগত প্রভাব হ্রাস করতে পারে। তাই জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর দেশের নির্ভরতা কমানো ও এর পরিবেশগত প্রভাব প্রশমিত করা, পরিচ্ছন্ন শক্তির সম্ভাবনা দিক উন্মোচনের জন্য দক্ষতা, প্রযুক্তি ও আর্থিক সংস্থানগুলোকে কাজে লাগাতে আন্তর্জাতিক অংশীদারত্বকে উৎসাহিত করতে আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (আইইউবি) অডিটোরিয়ামে ‘জলবায়ু পরিবর্তন এখন বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের একটি সুযোগ’ প্রতিপাদ্যে ‘প্রিজার্ভ প্ল্যানেট আর্থ ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্স’ শীর্ষক সম্মেলন এ আহ্বান জানানো হয়।
সম্মেলনটির আয়োজন করে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (আইইউবি)।
‘ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্স প্রিজার্ভ প্ল্যানেট আর্থ, ঢাকা-২০২৩’র লক্ষ্য হলো- নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশে বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির অত্যাবশ্যক প্রয়োজনীয়তা পূরণ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভিডিও বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্সের (আইইইই) প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অধ্যাপক সাইফুর রহমান, আইইউবির ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইসিসিসিএডি) পরিচালক ও জলবায়ু বিজ্ঞানী প্রফেসর ডক্টর সেলিমুল হক।
আইইইই’র প্রেসিডেন্ট ও সিইও অধ্যাপক সাইফুর রহমান বলেন, ১৯৫০ সালের পর থেকে যখন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বা কয়লায় ব্যবহার বেড়ে যায় তার পর থেকেই পৃথিবীতে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ অতিরিক্ত আকারে বাড়তে থাকে। ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত প্যারিস কনফারেন্স পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা যেন ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না বাড়ে সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাপমাত্রা যদি ২ ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়ে যায় তাহলে আমারা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারব না। সব কিছুই আমাদের আওতার বাইরে চলে যাবে।
পৃথিবীর তাপমাত্রা ও কার্বনের পরিমাণ কমানোর মাধ্যমে কীভাবে এ সমস্যার সমাধান করা যায়- সে বিষয়ে অধ্যাপক সাইফুর রহমান ৬টি পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, যত জীবাশ্ম জালানি ও কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট আছে সেগুলোর ব্যবহার কমাতে হবে। পাশাপাশি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে।
একই সঙ্গে কম কার্বন জীবাশ্ম জ্বালানি পাওয়ার প্ল্যান্ট ব্যবহারের দিকে যেতে হবে এবং গ্রিন এনার্জি ব্যবহারে আরও বেশি মনযোগী হতে হবে। প্রয়োজনে স্বল্প পরিমাণে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। যদিও নিউক্লিয়ার এনার্জি ব্যবহারে আমরা উৎসাহিত করি না। এর বিকল্প টেকনোলজি ব্যবহার বা উদ্ভাবনে আমাদের যাওয়া উচিত।
অধ্যাপক সাইফুর রহমান বলেন, এমন কিছু টেকনোলজি আছে যেখানে কার্বন ও হাইড্রোজেন স্টোর করে সমুদ্র বা অন্য কোথাও নিঃসরণ করা যেতে পারে। অথবা অন্য কোথাও বা মাটির নিচে মজুদ করা যেতে পারে। একই সঙ্গে ক্রস-বর্ডার পাওয়ার ট্রান্সফার প্রচার করতে হবে। যেখানে দেশগুলো নিজেদের মধ্যে পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন করতে পারে। ফলে অতিরিক্ত যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে যে অপচয় হচ্ছে সেগুলো কমানো সম্ভব। এবং যাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা কম তারাও এর সুবিধা পাবে।
পরের অধিবেশনে জলবায়ু বিনিয়োগে বিশ্বব্যাপী উত্থান এবং সংকট মোকাবিলায় তহবিল প্রবাহের ওপর কথা বলেন সোলশেয়ার লিমিটেড বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. সেবাস্টিয়ান গ্রো। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৬০ লাখ বাড়িতে সোলার ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ইলেকট্রিক যানবাহন ব্যবহার করা হয় প্রায় ৪০ লাখের মতো। যেখানে ইজিবাইক, অটোরিকশাসহ বেশ কিছু পরিবহন আছে। এগুলো তাদের পরিবেশের জন্য ভালো। তবে এগুলোকে আরও উন্নত করে সর্ব সাধারণের ব্যবহার বাড়াতে পারলে কার্বন নিঃসরণ কিছুটা হলেও কমবে। এর জন্য অনেক বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ করতে হবে। যার মাধ্যমে গবেষণা ক্ষেত্র তৈরি করা যাবে। আর বিনিয়োগের ক্ষেত্রও তৈরি হবে। পাশাপাশি টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিগুলো থেকে দূষণ কমাতে গ্রিন ইন্ডাস্ট্রিতে রূপান্তর করতে হবে।
সম্মেলনের আহবায়ক আইইউবি ট্রাস্টি এ কাইয়ুম খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আইইউবি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি আব্দুল হাই সরকার; আইইউবির উপাচার্য অধ্যাপক তানভীর হাসান; আইইউবির ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইক্যাড) পরিচালক ও স্বনামধন্য পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. সালিমুল হক; পাটের ‘প্লাস্টিক’ থেকে তৈরি ‘সোনালি ব্যাগের আবিষ্কারক বিজ্ঞানী মোবারক আহ্মদ খান প্রমুখ।
সম্মেলনে সরাসরি অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার এস্টাবলিশড প্রোগ্রাম টু স্টিমুলেট কম্পিটিটিভ রিসার্চের (ইপিএসসিওআর) গ্রান্ট উইনার ও যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ডাকোটা মাইনস ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক আইইউবি অ্যালামনাই ওয়াহিদুল হাসান। ভিডিও বার্তা দেন ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ওয়াসিকা আয়েশা খান।
আলোচনায় সমাপনী বক্তব্য দেন আইইউবির বে অব বেঙ্গল স্টাডিজের পরিচালক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম। অনুষ্ঠানে আইইউবিসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন: