প্রকাশিত:
৮ নভেম্বর ২০২৩, ১৫:৪৪
সিংড়া উপজেলাকে আগামীতে আরও উন্নত, আধুনিক ও নিরাপদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ২৭টি বিশেষ অঙ্গীকার করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
একই সঙ্গে চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলার মানুষের উন্নয়ন, সুশাসন নিশ্চিত করতে চলনবিল নামে একটি পৃথক উপজেলা ও থানা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে যোগ করেন তিনি।
মঙ্গলবার (০৭ নভেম্বর) দিনগত রাতে নাটোরের সিংড়ায় প্রতিমন্ত্রীর বাসভবনে সিংড়া উপজেলার সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, ধারা ভাষ্যকার ও ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে সুপারিশ ও উপদেশসহ স্থানীয় উন্নয়ন-চিন্তা, ইশতেহারের অঙ্গীকার পূরণ, মূল্যায়ন পর্যালোচনা, আধুনিক ও নান্দনিক-মানবিক স্মার্ট সিংড়া বিনির্মাণে করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মো. ওহিদুর রহমান।
এর আগে রোববার (০৫ নভেম্বর) দিনগত রাতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে এবং সোমবার (০৬ নভেম্বর) দিনগত রাতে সিংড়া পৌরসভার বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও বিভিন্ন মাদরাসার অধ্যক্ষ ও মুহতামিমগণের সঙ্গে একই বিষয়ে মতবিনিময় করেন প্রতিমন্ত্রী।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত খেলোয়াড়, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, ধারাভাষ্যকার ও ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও বিভিন্ন মাদরাসার অধ্যক্ষ ও মুহতামিমগণ এবং গণমাধ্যম কর্মীরা তাদের মতামত এবং সুপারিশ তুলে ধরেন। সুপারিশমালা গ্রহণ করে প্রতিমন্ত্রী পলক সাংবাদিকসহ সব পেশাজীবীদের পরামর্শের ভিত্তিতেই সিংড়া নির্বাচনী এলাকার জন্য ইশতেহার প্রণয়ন করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে এ মতবিনিময় সভা।
মতবিনিময় সভায়- খেলোয়াড়, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, ধারা ভাষ্যকার ও ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনীতি হবে টেকসই, পরিবেশ বান্ধব ও কাগজবিহীন। আর সরকার হবে কাগজবিহীন, ইন্টারনেট সংযুক্ত ও স্বয়ংক্রিয়। সমাজটা হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের, বৈষম্যমুক্ত সোনার বাংলার রূপ, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ইনক্লুসিভ, প্রগ্রেসিভ র্স্মাট সোসাইটি। যেখানে হরিজন সম্প্রদায়সহ সবার সমান অধিকার থাকবে। এটাই হচ্ছে র্স্মাট বাংলাদেশের রূপরেখা। সরকার সেই র্স্মাট বাংলাদেশ গড়তে চায়।
তিনি বলেন, স্মার্ট রূপরেখার মূল বা প্রধান স্তম্ভ হচ্ছে, স্মার্ট নাগরিক। সেই র্স্মাট নাগরিককে প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক, উদ্ভাবনী ও সমাধানকারী নাগরিকে পরিণত করতে হয়। এজন্য প্রয়োজন ক্রীড়া, সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতি। এসব ছাড়া আমরা স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো না। ক্রীড়া, সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতি সর্ম্পকে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে উৎসাহ দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য যেমন খেলাধুলার প্রয়োজন, তেমনি মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজন সাহিত্য এবং সঙ্গীত। আমি চেষ্টা করছি সিংড়ার তরুণ প্রজন্মের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ ঘটানোর জন্য। আপনাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ পেলে ইনশাআল্লাহ্ আমরা সিংড়াকে উন্নত আধুনিক মানবিক স্মার্ট সিংড়া হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো।
পলক বলেন, গত সাড়ে ১৪ বছরে ক্রীড়া, সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যে উন্নয়ন ও অবদান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা রেখেছেন, সেটা অসামান্য। আগে নারীদের খেলার মাঠে নামতে দেয়নি। সেই কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ থেকে বের করে সামাজিক ও মানসিক পরিবর্তন এনে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া স্বাধীনতার পর জননেত্রী শেখ হাসিনাই কেবল শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। যা অন্য কোনো সরকার পারেননি।
সভায় মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও বিভিন্ন মাদরাসার অধ্যক্ষের উদ্দেশ্যে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, বাংলাদেশের চেয়ে বেশি কুরআনের হাফেজ পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই। পৃথিবীর কোনো শিক্ষাই পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া।
আমরা যদি সন্তানদের কুরআন-হাদিসের শিক্ষা দেই, তাহলে সে তার জীবনে নৈতিকতা নিয়ে চলতে পারবে। তিনি বলেন, ক্ষমতার মালিক আল্লাহ্, তিনি যখন যাকে খুশী ক্ষমতা দেন, যখন খুশী সেটা কেড়ে নেন। মহান আল্লাহ্ তাআলা যদি আমাকে আবারও নির্বাচিত করে আনেন তাহলে ইনশাআল্লাহ মসজিদ-মাদরাসাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের যে অসমাপ্ত কাজগুলো আছে সেগুলো সুসম্পন্ন করবো।
তিনি আরও বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিটি নির্বাচনের আগে তাদের একটি ইশতেহার বা অঙ্গীকার প্রকাশ করে। সেই ইশতেহার প্রণয়নের আগে সব শ্রেণিপেশার মানুষদের চাহিদা-প্রয়োজন-মতামত-সুপারিশ আমাদের প্রাণপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা শুনতে চান। সেই অনুসারে নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন করা হয়। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ইশতেহার প্রণয়ন করে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তাঁর সততা, সাহসিকতা দূরদর্শিতার মাধ্যমে সেই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন।
মতবিনিময় সভায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, বঙ্গবন্ধু ছাত্রজীবনে একজন সাংবাদিক ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তার সারাটা জীবন সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের পক্ষে কাজ করেছেন। তিনি বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছেন সংবিধানে। আর প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি গণমাধ্যমকে অনুমোদন দিয়ে এ খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা যারা রাজনৈতিক নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি রয়েছি আমাদের পক্ষে কোনো সংবাদ দেখলেই আমরা খুশি হই। আর বিপক্ষে দেখলেই সাংবাদিককে শত্রু মনে করি। কিন্তু নিজেদেরকে সংশোধন করার চেষ্টা অনেক সময় করি না। এ পরিস্থিতি থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে।
পলক আরও বলেন, নাটোরে সাংবাদিকতার ইতিহাসে অনেক সাংবাদিক অনেক অবদান রেখে গেছেন। তাদের এ অবদান অতুলনীয়। যা চিরকাল স্মরণ করবে মানুষ। বর্তমানে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রী সব গণমাধ্যমকে স্বাধীন করেছেন।
তিনি বলেন, নাটোরকে আমরা যেভাবে বাংলাদেশের বুকে তুলে ধরতে চাই, তার সব উপাদান নাটোরবাসী ও নাটোরের মাঝে আছে। নাটোরকে আমাদের স্বপ্নের স্মার্ট নাটোর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই।
সভায় তিনি আরও বলেন, গত নির্বাচনের আগে সিংড়ার উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য যেসব অঙ্গীকার করেছিলাম তার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হয়তো পূরণ করতে পারিনি। আমার চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতা, করোনা মহামারি, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংকটসহ বিভিন্ন কারণে তা পূরণ করা যায়নি। তবে সেগুলো বাস্তবায়ন কাজ চলমান রয়েছে, ইনশাআল্লাহ্ সেগুলোও শিগগিরই বাস্তবায়িত হবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মওলানা রুহুল আমিন প্রমুখ।
মন্তব্য করুন: