প্রকাশিত:
১২ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:৫৫
অনলাইনে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য ভারতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এটা কবে নাগাদ চালু হবে, তার নিশ্চয়তা নেই।
রোববার (১২ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি’ নামের অ্যাপ ও ‘অনলাইন নমিনেশন সাবমিশন সিস্টেম’ (ওএনএসএস) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, অনলাইন ভোটিং, ঘরে বসে ভোট এটা পৃথিবীর কোথাও হয়নি এখনো। তবে ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে, তারা চেষ্টা করছেন, ঘরে বসে মোবাইলে অনলাইন ভোটিংয়ের ব্যবস্থা করার। আমার বিশ্বাস ওটা হয়তো বাস্তবায়িত হবে। বাস্তবায়িত হলে আমরা হয়তো বলতে পারবো, আমরাও সেটা করতে পারবো কি-না। কিন্তু তার আগে আমরা এখন কোনো রকম নিশ্চয়তা দিতে পারবো না যে অনলাইন ভোটিং সিস্টেম কবে চালু হবে।
সিইসি বলেন, প্রথম যে প্রযুক্তিটা আমরা ব্যবহার করতাম, সেটা হলো রেডিওতে খবর শুনতাম, এখন মোবাইলেও খবর শুনতে পাই। প্রযুক্তির যে পরিবর্তন গত ৫০-৬০ বছরে হয়েছে তা অবিস্মরণীয়। এই পরিবর্তন-উন্নয়নকে যদি আমরা গ্রহণ করতে না পারি, তাহলে আমরা পিছিয়ে যাবো।
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সিইসি বলেন, ১৯৯৭ বা ৯৮ সালে আমি কম্পিউটার ব্যবহার করি। তখন বিভিন্ন দেশ থেকে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক থেকেও প্রতিনিধিরা আসতেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্যিক, যাতে তাদের কম্পিউটারগুলো কেনা হয়। সে ফাঁকে আমাদেরকে প্রযুক্তির ব্যবহার শেখাচ্ছিলেন তারা। তখন অনলাইন শপিং সম্পর্কে আমাদের বলা হলো আপনার বাজারে যেতে হবে না। ওইটুকু বুঝেছি। আমি যে টাকা দেব শপিংটা আসবে, কিন্তু কোন ফাঁক দিয়ে, আমি দুই কেজি গরুর মাংস কিনবো বা এক কেজি রসগোল্লা কিনবো, কীভাবে এসে পৌঁছবে! সিপিইউ দিয়ে ঢুকবে, না প্রিন্টার দিয়ে ঢুকবে। প্রিন্টার দিয়ে তো কাগজ বের হয়। বুঝতে গিয়ে একটু ভুল বুঝে ফেলেছিলাম। আবার কাউকে জিজ্ঞেস করতেও লজ্জা পাচ্ছিলাম, যে আমি বুঝিনি। কিন্তু আমি কিছুতেই বের করতে পারলাম না, এই তারের ভেতর দিয়ে দুই কেজি মাংস কীভাবে আসবে!
তিনি আরও বলেন, এখন ইন্টারনেটে ইউলিটি বিল পে করছি। বিগত পাঁচ সাত বছর অনলাইন পেমেন্ট করছি। এটা খুবই স্বস্তিদায়ক এবং খুবই সহজ। এগুলো কিন্তু আমাদের জীবনকে খুব সহজ করে দেয়।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আজকে যে পদ্ধতি যেটা প্রবর্তনের কথা বলা হচ্ছে, এটা শুধু আমাদের তথ্য সরবরাহ সহজ ও দ্রুত করে দেবে তা নয়, স্বচ্ছতার ক্ষেত্রেও এটি খুবই সহায়ক হবে। অর্থাৎ দুই ঘণ্টা পরে কী (ভোট পড়ার হার) পেলাম, চার ঘণ্টা পরে কী পেলাম, ছয় ঘণ্টা পরে কী পেলাম, হঠাৎ করে আকাশচুম্বি কিছু একটা হয়ে যায়, তখন কিন্তু বিশ্লেষণের একটা সুযোগ হবে। কাজেই এটা কিন্তু স্বচ্ছতার সৃষ্টি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সিইসি বলেন, আমাদের একটু কষ্ট করে শিখে নিতে হবে অ্যাপের মাধ্যমে কিভাবে বিভিন্ন তথ্যগুলো আমরা অবলোকন করবো। আর অনলাইন মনোনয়নপত্র দাখিলের বিষয়টা যেটা বলা হয়েছে, এটা কিন্তু বেশ কয়েকটি উপ-নির্বাচনে এটা আমরা করেছি। এটা অসম্ভব কিছু না। এটা ব্যবহারের মাধ্যমে সহজ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির মাধ্যমে। আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে প্রযুক্তির মাধ্যমে। ভারতে এটা আছে। অনুকরণ করে আমরা আরো আধুনিক করেছি। নিমেনেশন পেপারে তোলা বা জমা দেওয়ার সময় শোডাউনটা আমাদের কালচারে পরিণত হয়েছে। এতে আচরণবিধি ভঙ্গ হতে পারে। অনেক সময় সংঘাতও হতে পারে। কাজেই এটা সহজ করা হয়েছে।
সিইসি আরো বলেন, নমিনেশন পেপার তুলতে বাধা প্রদান যেমন করা হয়, তেমনি অনেক জমা দেওয়ার সময় চাপ প্রয়োগ করা হয়, যে প্রত্যাহার করো। এই যে অনাচারগুলো, অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে কমে আসতে পারে এবং টোটাল নির্বাচনি ব্যবস্থাটা আরো নির্ভরযোগ্য, আরো সহজ এবং আরো পরিশুদ্ধ হতে পারে।
সিইসি বলেন, আমরা বিশ্বাস অ্যাপটা নির্ভরযোগ্য হবে। অনলাইন নমিনেশন দলগুলো ব্যবহার করবেন। অ্যাপটা সাধারণে যদি অ্যাপটা ব্যবহার করে উপকৃত হবেন। অ্যাপল, অ্যানড্রয়োমেড যে কোনো ফোনেই এটা ব্যবহার করতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে অন্য চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন: