প্রকাশিত:
৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:০৪
বেশ কয়েক মাস ধরেই আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন নিয়ে জটিলতা চলছিল। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনাও ঘটেছে। স্থগিত হয়েছে সংগঠনের সব ব্যাংক হিসাব। অবশেষে উচ্চ আদালতের নির্দেশে বুধবার (২৯ নভেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রিহ্যাবে প্রশাসক বসিয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস আদেশে বলা হয়েছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশে রিহ্যাবের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনাসহ কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন আয়োজনের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জান্নাতুল ফেরদৌসকে প্রশাসক নিয়োগ করা হলো। তিনি যথাসময়ে রিহ্যাবের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিতদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন।
জানা যায়, রিহ্যাবের কমিটির মেয়াদ গত ১৩ অক্টোবর শেষ হয়। তিন দিন পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ওই কমিটির মেয়াদ পাঁচ মাস বৃদ্ধি করে। এ সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে মামলা করেন হাভেলি প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ আউয়াল। তখন আদালত রিহ্যাবের কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধিসংক্রান্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তটি তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে রিট আবেদন করে।
সর্বশেষ গত ১৩ নভেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম তিন মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন সম্পন্ন করার আদেশ দেন। তিনি সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালককে এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।তারপরই গতকাল প্রশাসক নিয়োগ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
রিহ্যাবে প্রশাসক বসানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘আমরা বাণিজ্য সংগঠনটির মেয়াদ পাঁচ মাস বাড়িয়েছিলাম। তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশে পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনের জন্য প্রশাসক বসিয়েছি।’
হাভেলি প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্টের এমডি এম এ আউয়াল অভিযোগ করেন, ‘উন্মুক্ত ভোটের মাধ্যমে সঠিক নেতৃত্বের হাতে সংগঠনকে তুলে দিতেই আমি উচ্চ আদালতে গিয়েছি। কারণ, আবাসন খাত মুখ থুবড়ে পড়েছে। চাঙা ভাব আনতে হলে সঠিক নেতৃত্ব দরকার।’
এদিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় সদ্য সাবেক হওয়া কমিটির বাড়তি মেয়াদ বাতিল হওয়ার পর রিহ্যাবের সব কটি ব্যাংক হিসাব স্থগিত হয়ে গেছে। ন্যাশনাল ও যমুনা ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, রিহ্যাবের হিসাবগুলো স্থগিত করা হয়েছে। এসব হিসাবে কোনো লেনদেন হচ্ছে না। সংগঠনটির নামে দুই ব্যাংকে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা জমা আছে বলে জানা গেছে।
অবশ্য রিহ্যাবের এই হযবরল অবস্থার সূত্রপাত কয়েক মাস আগে। গত আগস্টে নির্বাচন কমিশন গঠনের সময় সংগঠনের গঠনতন্ত্র মানা হয়নি—এমন অভিযোগ তুলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেয় রিহ্যাবের একটি পক্ষ। আর ভোটার তালিকায় অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন স্থগিত চেয়ে আদালতে যান বর্তমান পর্ষদের একাধিক সদস্য। একপর্যায়ে নির্বাচন বোর্ড ও আপিল বোর্ডের সদস্যরা পদত্যাগ করেন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের সব কার্যক্রম বাতিল করে বিদায়ী কমিটি।
নির্বাচনী কার্যক্রম বাতিল হওয়ার আগে রিহ্যাবের ২০২৩-২৫ সাল মেয়াদি পরিচালনা পর্ষদের ২৯টি পদের বিপরীতে দুটি প্যানেলে প্রার্থী হন ৪৮ জন ব্যবসায়ী। তাঁদের মধ্যে ঢাকার ২৬ পরিচালক পদের বিপরীতে ৪৬ জন এবং চট্টগ্রামে তিন পদে ছিলেন দুজন।
রিহ্যাবে একসময় উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাভুটি হতো। ২০১৪ সালে ভোট ছাড়াই সভাপতি পদে আসেন আলমগীর শামসুল আলামিন। পরের তিন মেয়াদেও সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি হয়েছে। তাই এবারের নির্বাচন নিয়ে সদস্যদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। ভোটারসংখ্যা ছিল ৮৫০।
জানতে চাইলে রিহ্যাবের সদ্য বিদায়ী সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন গত রাতে বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করে বর্তমান অস্থিরতা শেষ করতে হবে। সেটি আবাসন খাতের জন্য মঙ্গলজনক।’
মন্তব্য করুন: