প্রকাশিত:
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭:৫৬
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বরেন্দ্র অঞ্চলে চাষ হচ্ছে দার্জিলিং পাহাড়ের সুমিষ্ট রসালো কমলা। বিদেশে যাওয়ায় প্রস্তুতি নিয়ে প্রতারণার শিকার এক যুবক কমলার চাষ করে তার সংসারে এনেছেন সোনালী দিন। দুইশটি কমলার গাছ তাকে দেখিয়েছে নতুন দিনের পথ।
গত দুই বছরে এই দুইশ কমলা গাছ থেকে তিনি আয় করেছেন প্রায় ছয় লাখ টাকা। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আব্দুল হালিম নামের ওই যুবক এখন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কমলা চাষ করে বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচানোর পাশাপশি এখন অনেকের কাছে সৌভাগ্যের মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছেন গোবিন্দগঞ্জের কমলাচাষি যুবক আব্দুল হালিম।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দুরে শাখাহার ইউনিয়নের বাল্যা গ্রাম। আব্দুল হালিম (২৭) এই গ্রামের আব্দুস সামাদের পুত্র। কয়েক বছর আগে বেকারত্ব ঘোচানোর লক্ষ্যে বিদেশ যাওয়ার প্রস্ততি নেন। কিন্ত প্রতারণার শিকার হওয়ায় অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েন হালিম। সে সময় আবার বিশ্ব জুড়ে চলছিল করোনার প্রাদুর্ভাব।
ওই সময়ে ইউটিউবে তার নজরে আসে কমলা চাষের বিষয়টি। তখন এক বন্ধুর পরামর্শে ২০১৯ সালে তিনি নিজেদের পুকুরপাড়ের তিন বিঘা জমিতে শুরু করেন কমলা চাষ।
সেখানে দুইশত কমলা গাছ দিয়েই শুরু হয় তার কমলার বাগান। এই বাগানে কমলা ধরতে শুরু করে ২০২২ সালে। ওই বছরই স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে প্রায় ৩ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেন। তার বাগানের কমলার স্বাদ-রস ও মিষ্টতা তুলনামুলক ভাল হওয়ায় এ খবর ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকায়। এ বছর উৎপাদিত কমলা বিক্রি হয়েছে এক লাখ টাকারও বেশি। এখনও গাছে বিক্রির মতো কমলা রয়েছে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার।
তার এই সাফল্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন তার বাগান দেখতে ভিড় করছে অনেকে। পাহাড়ি ফল হিসেবে কমলার পরিচিতি থাকলেও সমতলের এই এলাকায় চাষ হওয়ায় অনেকের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। তার বাগানে বারি-২, চায়না-থ্রি ও দার্জিলিং জাতের কমলা রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, শুরুতে তার এই কাজটিকে তেমন গুরুত্ব না দিলেও এখন গাছ ভর্তিপাকা কমলা দেখে আমরা অভিভূত। হালিম এখন এই এলাকার জন্য অনুকরণীয় এক আদর্শ কমলা চাষি।
কমলাচাষি আব্দুল হালিম জনকণ্ঠকে জানান, বিদেশে না গিয়েও সদিচ্ছার সফল প্রয়োগ করলে ও সবার উৎসাহ পেলে দেশের মাটিতেই অনেক কিছু করা সম্ভব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চাকরি না খুঁজে উদ্যোক্তা হওয়ার যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা আমাকে উদ্বুদ্ধ করে। আমাকে উদ্যোক্তা হতে সাহায্য করেছে তাঁর এই কথা। সেদিনের বেকার যুবক আমি এখন আমার গ্রামের বেশ কয়েকজন মানুষের কর্মসংস্থান করতে পেরেছি।
বাগান দেখতে আসা উপজেলার কোচাশহর ইউনিয়নের শক্তিপুর গ্রামের রানা বলেন, বাংলাদেশের তথা আমাদের উপজেলার মাটিতেও যে কমলা চাষ করা সম্ভব তা এখানে এসে দেখলাম। এখানকার কমলা বেশ মিষ্টি এবং রসালো।
একই কথা বললেন চাঁদপাড়া এলাকার সানু মিয়া। তিনি বলেন, এই কমলা বাগান দেখে আমি উৎসাহ পাচ্ছি। এসেছি। কমলাকে আগে বিদেশি ফল হিসেবে জানতাম। এখন মনে হচ্ছে এটি আর বিদেশি ফল নয়। এ ভাবে চাষিরা কমলা চাষ শুরু করলে বিদেশ থেকে আর কমলা আমদানি করতে হবে না। এতে দেশের অর্থ যেমন বাঁচবে, তেমনি টাটকা ফলও পাওয়া যাবে।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রেজা-ই-মাহমুদ জনকণ্ঠকে জানান, কমলা চাষ করে হালিম যে সফলতা দেখিয়েছে তা কৃষি বিভাগের জন্যও একটি গৌরবময় সাফল্য। আগামীতে কৃষি বিভাগ থেকে তাকে আরো প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা হবে।
মন্তব্য করুন: