প্রকাশিত:
৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫:৪০
ঢাকার বাজারে এক দিনের ব্যবধানে দেশি ও আমদানি করা উভয় ধরনের পেঁয়াজের দাম কেজিতে অন্তত ৫০ টাকা বেড়েছে। কোনো কোনো বাজারে দাম বেড়েছে আরও বেশি। ভারত সরকার নিজের দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আগামী মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়েছে শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) এমন খবর আসার পর থেকেই এই পণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। ৮ ডিসেম্বর কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা দাম বাড়ার পর শনিবার ৯ ডিসেম্বর সকাল থেকে পেঁয়াজের বাজার রীতিমতো তেতে উঠেছে।
সকালে রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার, রামপুরা ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, একেক বাজারে বিক্রেতারা পেঁয়াজের একেক রকম দাম রাখছেন। বেশির ভাগ বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম রাখা হচ্ছে মানভেদে ১৬০ থেকে ১৯০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজের দাম বেশি ও মান এখন ততটা ভালো না হওয়ায় অধিকাংশ ক্রেতাকে আমদানি করা পেঁয়াজ কিনতে দেখে গেছে। চীন থেকে আমদানি করা বড় আকারের পেঁয়াজের দাম পড়েছে ১২০–১৩০ টাকা। দেশের বাজারে পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ এসেছে। এই সুযোগে তার দামও কেজিতে ১০–২০ টাকা বেড়ে ৮০–৯০ টাকায় উঠেছে।
মালিবাগে বাজারে কথা হয় ক্রেতা কামরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি একটা মেস চালাই। ৯ ডিসেম্বর সকালেও ভারতীয় পেঁয়াজ ১৩০ টাকায় কিনেছি। সেই পেঁয়াজ নিলাম ১৮০ টাকায়। ভাবছিলাম নতুন পেঁয়াজ আসতেছে, এখন আর দাম বাড়বে না, বরং কমবে। এ জন্য আগেভাগে পেঁয়াজ কিনেও রাখিনি। এখন যে অবস্থা হলো, তাতে বিশেষ কী আর বলব।’
তিনি জানান, আমদানি করা পেঁয়াজের মান একটু ভালো আর দামও দেশি পেঁয়াজ থেকে কম হওয়ার কারণে তিনি আমদানি করা পেঁয়াজের দিকেই ঝুঁকেছিলেন।
বাজারে যেসব ব্যবসায়ী দাম একটু কম রাখছেন, তাঁদের কাছে আগের কেনা পেঁয়াজ ছিল। নতুন যেসব পেঁয়াজ বাজারে আসছে, সেসব পেঁয়াজের দাম বেশি রাখা হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা অভিযোগ করছেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা রাতারাতি একযোগে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
পাইকারি দোকান থেকে পাওয়া একাধিক খুচরা বিক্রেতার রসিদ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে শ্যামবাজার থেকে ৯ ডিসেম্বর সকালে কেনা দেশি পেঁয়াজের দাম ধরা হয়েছে কেজিপ্রতি ১৭৫–১৯৫ টাকা পর্যন্ত আর আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারিতে কিনতে হয়েছে ১৫৫–১৮০ টাকা পর্যন্ত। কোনো কোনো খুচরা বিক্রেতা এটাও জানিয়েছেন, পাইকারি বাজারের যেসব ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তাঁরা পণ্য কেনেন, তাঁরা অনেক সময় মাল দেওয়ার জন্য ফোন দিতেন। আজ সকালে থেকে এসব পাইকারি ব্যবসায়ীর ফোন বন্ধ পাচ্ছেন। তাতে অনেক খুচরা দোকানে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে।
রামপুরা বাজারের তামিম এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা মাহমুদ হাসান বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন সকালে শ্যামবাজার থেকে পাইকারিতে মালামাল নিয়ে আসি। এরপর কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা লাভ রেখে বিক্রি করি। ৯ ডিসেম্বর সকালে পেঁয়াজ আনতে গিয়ে নিজেও রীতিমতো অবাক হয়েছি। দাম এতটা বাড়বে, তা আমার নিজেরও ধারণার বাইরে ছিল। মূলত ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধের এ খবরেই দাম বেড়েছে।’
রাজধানীর শ্যামবাজারভিত্তিক একাধিক আমদানিকারক ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাজার কারওয়ান বাজারে দেখা গেছে, অধিকাংশ ব্যবসায়ী পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখে দোকানের বাইরে অবস্থান করছেন। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের হট্টগোল করতেও দেখা গেছে। বিক্রেতাদের কেউ কেউ জানালেন, তাঁরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন।
ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড বা বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয় ৭ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। রপ্তানি নীতি সংশোধন করে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
সেই দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে গত ২৯ অক্টোবর প্রতি টন পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য ৮০০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর আগে কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। তখন এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এমনকি তাঁরা ধর্মঘটও করেন।
ভারতের ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহারাষ্ট্রে অসময়ে ভারী বৃষ্টির কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে।
মন্তব্য করুন: