প্রকাশিত:
১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:৫১
জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) কর্মকর্তা পরিচয়ে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে ফোন করেন এক প্রতারক। বলেন, ‘আমি এনএসআইর ডিডি (ডেপুটি ডিরেক্টর) হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আছি। জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংক্রান্ত ইস্যুতে কাজ করছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমি কয়েকজনকে বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন পাইয়ে দিয়েছি। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এরইমধ্যে কয়েকজনের মনোনয়নের বিষয়টি আমি নিশ্চিত করেছি।’
মোবাইল ফোনে এমন পরিচয়ে কথা বলে আস্থা অর্জনের পর ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতাকে ওই প্রতারক বলেন, ‘আপনার মনোনয়নের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। এজন্য ৫০ লাখ টাকা নগদ দিতে হবে।’ এরপর ভুক্তভোগীকে প্রধানমন্ত্রীর কন্যা পুতুল পরিচয়ে এক নারীর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয় চক্রের সদস্যরা। পরে বিভিন্ন কায়দায় তার কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে চক্রটি। শনিবার (৯ ডিসেম্বর)রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের টার্গেট করে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দেশব্যাপী সক্রিয় হয়। এমন প্রতারকদের ফাঁদে পা দেন ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী দীপক কুমার রায় (৬৩)। প্রতারকের ফাঁদে পড়ে ৫০ লাখ টাকা খোয়ান তিনি। পরে ২৬ নভেম্বর মনোনয়ন তালিকা চূড়ান্তভাবে প্রকাশ হলে সেখানে তার নাম না থাকায় ভুক্তভোগী বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। পরে ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতা দীপক কুমার রায় বাদী হয়ে মামলা করেন।
মামলার পর তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর)রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো নুরুল হাকিম (৩১), হাসানুল ইসলাম জিসান (২২) ও হারুন অর রশিদ (২৯)।
ডিবি প্রধান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্র করে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নুরুল হাকিম নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর সচিব মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও অপর আসামি হাসানুল ইসলাম জিসান নিজেকে একান্ত সচিব-২ জয় মোর্শেদের পরিচয় দিয়ে তিনটি নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মনোনয়ন পাইয়ে দেবে বলে ফোন করে। এজন্য তাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা দিতে বলা হয়। তবেই তারা মনোনয়ন পাবেন বলে জানায়।
এছাড়া প্রতারক চক্রের সদস্যরা নিজেদের ঢাকা জেলার সমাজসেবা অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক শেখ কামাল হোসেন এবং সাভার উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোহাম্মদ শিবলী জামান পরিচয়ে বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে বিভিন্ন সরকারি ভাতা কার্ড দেওয়া হবে বলেও তালিকা করার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতো। প্রতারক চক্রের সদস্য নুরুল হাকিমের বিরুদ্ধে তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
মন্তব্য করুন: