প্রকাশিত:
১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭:৩১
বাংলাদেশ উন্নয়ন অভিগামিতায় দ্রুততার সঙ্গে সামনে এগিয়ে চলা এখন নজরকাড়া। সমসংখ্যক নারী যদি পিছিয়ে থাকে তাহলে সামগ্রিক উন্নয়নও পিছু হটে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আধুনিক, প্রযুক্তি ও স্মার্ট বাংলাদেশে সর্ব মানুষের দ্বারে যে উন্নয়ন যাত্রা সেখানে নারীদের দর্শনীয় অবদান সংশ্লিষ্টদের উদ্দীপ্ত করে যাচ্ছে। তেমন উৎসাহ, উদ্দীপনায় নারী সমাজও বিভিন্ন কর্মযোগে শরিক হতে পেছনে তাকাচ্ছে না। তবে উন্নয়ন আর অধোগতি ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় যমজ ভাইয়ের মতো পাশাপাশি অবস্থান করাও পরিবেশ, পরিস্থিতির ন্যায্যতা।
তাই সমাজের অর্ধাংশ নারী শিক্ষায় অনেকখানি এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন কর্মদ্যোতনায় নিজেদের অংশীদারিত্ব প্রমাণ করে যাওয়াও পরিস্থিতির চাহিদা। এমনকি যে ব্যবসা-বাণিজ্যে নারীদের দীর্ঘদিনের অনীহা, পিছিয়ে থাকা সেখানে তাদের যথার্থ অভিগমন দেশ ও জাতির সামনে চলার পথকে বেশখানিক এগিয়েও দিচ্ছে। তবে শুরুতেই উল্লেখ করি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় নানামাত্রিক বিপন্নতাও ভর করতে থাকে সার্বিক প্রেক্ষাপটে। অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী হিসেবে নারীর বিপর্যয় চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশে এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তি বিদ্যার ক্রমোন্নয়ে। কিন্তু শিকড়ের গভীরে যে অপসংস্কার তা কোনোমতেই কমার লক্ষণ নেই।
সঙ্গত কারণে নারী নির্যাতন আর হরেক নেতিবাচক আবর্তে পড়ে যাওয়াও বর্তমান সময়ের এক অনধিগম্য যাত্রা। সম্প্রতি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে ওঠে আসছে আজও নারী সমাজ আধুনিক বলয়কে পেছনে রেখে চিরায়ত অভিশাপকে মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছে। সেখানে বাল্যবিয়ে, যৌতুকের নির্মমতা আর পারিবারিক সহিংসতাতো থাকেই। আর বৃহত্তর সামাজিক প্রেক্ষাপট নারী অগ্রযাত্রাকে কতভাবে ব্যাহত করে যাচ্ছে তাও এক বিষাদ ঘন অনুভব। শুধু কি বাল্যবিয়ে? অকাল মাতৃত্বে জড়ানো ছাড়াও নিরাপদ থাকার ঝুঁকিও যেন দুই পা বাড়িয়েই থাকে। সেই যুগ-যুগান্তরের অমৃত বাণী নিরাপদ মাতৃত্ব অতি আবশ্যিকভাবে যে কোনো নারীর জন্মগত আর আইনগত অধিকার। সেই গর্ভধারণের প্রথম সময় থেকেই।
নতুন প্রজন্ম সমাজ, সভ্যতা, সংস্কারের অভাবনীয় সম্পদ। আর যে জন্মদাত্রি এমন গৌরব আর কৃতিত্বের অংশীদার তার গর্ভকালীন সময় কতখানি নিরাপদ আর নির্বিঘœ তেমন প্রশ্ন আজও সংশ্লিষ্টদের ঝুঁকিপূর্ণ করে রাখছে। আগামীর প্রজন্মকে পৃথিবীর আলো দেখানো খুব সহজসাধ্য কিন্তু নয়। পদে পদে বিপদ, সংশয়, সমস্যা, ঝুঁকিপূর্ণ অসময় পার করাও সংশ্লিষ্টদের ক্রান্তিকাল। তারপর সে বহুকাক্সিক্ষত নতুন প্রজন্ম যখন তার জন্ম জানান দেয় তেমন আনন্দ শুধু মায়ের নয়। বরং পরিবার, সংসার আর সমাজব্যবস্থারও। শুধু কি সন্তান পৃথিবীতে আনা?
তার আগমনেও মাকে সার্বিক নিরাপত্তার বেষ্টনীতে ঘিরে রাখাও সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের দায়বদ্ধতা। সেখানে অদক্ষ ধাত্রী কিংবা মান্ধাতা আমলের অপচিকিৎসা ছাড়াও পারিবারিক গাফিলতি যেন মা ও আগত সন্তানের জীবন বিপন্ন করতে না পারে তেমন নজরদারিও একান্ত আবশ্যক। নিরাপদ মাতৃত্বের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে গত শতাব্দীর শেষ সময়ে নাইরোবিতে। তেমন শুভ যাত্রায় মা ও সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মৃত্যু কমে আসাও আধুনিকতার নির্মাল্য। তবে নারী শিক্ষা, নারীর সচেতন অভিব্যক্তি, নিরাপদ মাতৃত্বে তার প্রাসঙ্গিক অধিকার এমন সব অনন্য বিষয়গুলো অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর ক্ষেত্রে খুব বেশি ফলদায়ক হয়নি।
আমাদের ছোট্ট বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক গ্রামনির্ভর অঞ্চল হিসেবে সমধিক পরিচিত। তাই গ্রামে-গঞ্জে, বিভিন্ন অনুন্নত এলাকায় নারী শিক্ষা যেমন অবারিত হয়নি একইভাবে তাদের সার্বিক অধিকার সেভাবে নিশ্চিত করা অসম্ভবের পর্যায়। এখনো জন্মদাত্রি মাই তার পুত্র এবং কন্যাসন্তানের বেলায় বৈষম্য তৈরি করেন। অনেক তথ্য-উপাত্তে দৃশ্যমান হয়েছে একজন কন্যাসন্তান প্রথম তার পরিবার থেকেই নির্যাতনের শিকার হয়। বৃহত্তর সামাজিক প্রতিবেশ আর শ্বশুরবাড়ি তো আরও পরের বিষয়।
যে মাকে তার স্বামীই প্রত্যাশিত সম্মানটুকুও দিতে কার্পণ্য করে সে মাই তার পুত্রসন্তানের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেন ভাবা মুশকিল হয়ে যায়। আর এটাই গ্রাম-বাংলার ঘরে ঘরে ঘটছে। ক্রমাগত এগিয়ে যাওয়া চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মহাসন্ধিক্ষণে সারা বিশ্ববাসী। আর আধুনিক প্রযুক্তির কার্বন নিঃসরণ ধরিত্রীকে কোন মহাদুর্বিপাকে নিয়ে যাচ্ছে সেটাও ভাবনার বিষয়।
গত শতাব্দীর ক্রান্তিলগ্ন থেকে বিশ্বময় যে আওয়াজ প্রকৃতিকে তার সহজত বৈশিষ্ট্যে টিকিয়ে রাখা সেটাও যেন সীমানা ছাড়ানোর বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় পিষ্ঠ। সেখানে সমসংখ্যক নারীর অবস্থাও প্রতিনিয়তই বিপন্নতার আবর্তে।
আর মাতৃত্বকালীন সময়ে তেমন বিপর্যয় মা ও সন্তানের জন্য দুঃসময় এক কঠিন আবর্ত। পরিবেশ দূষণের শিকার হয়ে নারীর সহজাত মাতৃত্ব শক্তিও এক চরম ঘূর্ণাবর্তের পেষণে। কোনো কিছুই যখন সুস্থ, স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে না সেখানে অপেক্ষাকৃত শারীরিকভাবে দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া নারীদের অবস্থাই সংকটাপন্ন হয় বেশি।
মন্তব্য করুন: