প্রকাশিত:
১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭:৪০
আমাদের হাতের কাছেই এমন সব উপাদান রয়েছে, যেগুলো দিয়ে রূপচর্চা করা যায়। এসব উপাদানের ব্যবহার ও উপকারী দিক নিয়ে পরামর্শ দিলেন হার্বোকেয়ার বাংলাদেশের সিইও ও আয়ুবের্দিক চিকিৎসক ডা. মো. শরিফুল ইসলাম, লিখেছেন মোনালিসা মেহরিন।
ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক, ভেষজ ও ঘরোয়া উপাদান সবচেয়ে ভালো। হাতের কাছে থাকা উপাদান দিয়ে রূপচর্চার চল চিরন্তন।
আধুনিক প্রসাধনীর প্রসারে এসব উপাদানের ব্যবহার রূপচর্চায় এখন অপ্রচলিত মনে হলেও আদতে তা নয়। এসব অপ্রচলিত উপাদান ত্বকের জন্য উপকারীও।
চাল ধোয়া পানি
প্রতি বেলা ভাত রান্নার আগে চাল ধোয়া পানিটুকু ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু এ পানিতেই রয়েছে ত্বকের উপকারের নানা গুণ।
চাল ধোয়া পানিতে ভিটামিন-বি থাকে, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। প্রচুর ক্ষারজাতীয় পদার্থ থাকায় ত্বক পরিষ্কারেও কাজে দেয়। এক টেবিল চামচ মুলতানি মাটি ও এক চা চামচ মেথি পাউডার পরিমাণমতো চাল ধোয়া পানিতে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর হবে। মেছতার দাগ দূর করতে চাল ধোয়া পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে কয়েক দিন ব্যবহার করুন। দাগ দূর হবে। চাল ধোয়া পানি দিয়ে মুখ ধুতে পারেন। ত্বক উজ্জ্বল হবে।
ভাতের মাড়
ত্বকের যত্নে ভাতের মাড়ের উপকারিতা অনেক। ত্বকে টান টান ভাব আনতে চান তরুণীরা। এ জন্য ভাতের মাড় ভালোভাবে ছেঁকে ফ্রিজে রেখে দিন। এরপর তুলার সাহায্যে মুখের ত্বকে ১০ মিনিট মালিশ করুন। তারপর শুকনা সিট মাস্ক মাড়ের ওপর বসিয়ে দিন। শুকিয়ে গেলে ধীরে ধীরে টেনে তুলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের আর্দ্রতা, উজ্জ্বলতা বাড়বে। ত্বকের দাগ কমাতেও সাহায্য করবে। ব্রণ কমাতে ভাতের মাড়ে লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। বলিরেখা ও চোখের নিচে কালো দাগ দূর করতেও ভাতের মাড় ব্যবহার করতে পারেন।
চালের গুঁড়া
চালের গুঁড়া স্ক্র্যাব হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। ক্লিনজারের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ভাতের মাড়, চালের গুঁড়া মিশিয়েও স্ক্র্যাবার বানাতে পারেন। ত্বকের মরা চামড়া দূর করতে এবং ত্বকের গভীর থেকে ময়লা দূর করতে কাজে দেবে এই স্ক্র্যাব। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে, ব্রণ ও মেছতার দাগ দূর করতে টক দই, ডিমের সাদা অংশ, লেবুর রসের সঙ্গে চালের গুঁড়া মিশিয়ে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। মধু, দুধ ও চালের গুঁড়ার প্যাক বানিয়ে ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।
তরল দুধ
কাঁচা দুধ স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী, তেমনি ত্বকের জন্যও। ন্যাচারাল ক্লিনজার হিসেবে তরল দুধের সুনাম রয়েছে। দুধ দিয়ে গোসল করার ঘটনা তো শুনেছেনই! তাই ত্বক পরিষ্কারে কাঁচা তরল দুধ ব্যবহার করতে পারেন। কটন বলের সাহায্যেও মুখে দুধ লাগাতে পারেন। কাঁচা দুধ লোমকূপের ময়লা দূর করে। ত্বক নরম ও কোমল করে। ত্বকের আর্দ্রতা বৃদ্ধিতেও কাঁচা দুধ উপকারী।
টক দই
ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া ও চামড়া ঝুলে যাওয়া রোধে টক দই ব্যবহার করতে পারেন। শসা ব্লেন্ড করে টক দইয়ে মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করবে এবং স্কিন টোন ঠিক করবে।
চা পাতা
যাঁদের ত্বক রুক্ষ ও শুষ্ক, তাঁরা দুই চা চামচ চা পাতা, এক চা চামচ মধু ও আধা চা চামচ লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে ঘন পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ত্বকে কোমলতা চলে আসবে।
চিনি
স্ক্র্যাবার হিসেবে চিনি খুব উপকারী। এক টেবিল চামচ চিনি, এক চা চামচ অলিভ অয়েল ও আধা চা চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে স্ক্র্যাব বানিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। মৃত কোষ দূর হবে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে চিনির সঙ্গে অলিভ অয়েল ও লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। ঠোঁট ফাটা রোধে মধু ও চিনি মিশিয়ে ঠোঁটে লাগাতে পারেন। ত্বকের রুক্ষতা দূর করতে চিনির সঙ্গে বাদাম তেল মিশিয়ে মালিশ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
লবণ
লবণে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান ত্বকে আর্দ্রতা জোগায়। ত্বক টান টান ও সতেজ রাখে। দুই চা চামচ লবণ ও চার চা চামচ মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে আলতো করে ঘষে তুলে ফেলুন। কিছুদিনের মধ্যেই ফলাফল পাওয়া যাবে। লবণের টোনার ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। এক কাপ কুসুম গরম পানিতে কয়েক চিমটি লবণ মিশিয়ে তুলা বা স্প্রের সাহায্যে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। লবণও ভালো ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে। লবণ ও মধু মিশিয়ে স্ক্র্যাবার বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। ত্বক পরিষ্কার ও নরম হবে। এ ছাড়া ব্লাকহেডস ও বলিরেখা দূর করতেও সাহায্য করে লবণ।
মন্তব্য করুন: