প্রকাশিত:
১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫:১৪
আগের মনোভাব থেকে সরে এসে ফিলিস্তিনের গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভারত সায় দিল। ১২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জরুরি ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পক্ষে ভারতসহ পৃথিবীর ১৫৩টি দেশ ভোট দিয়েছে। গত অক্টোবরেও একই ধরনের প্রস্তাব আনা হয়েছিল, কিন্তু তখন ভারত ভোটদানে বিরত ছিল।
এবারের প্রস্তাবেও হামাসের নিন্দা করে যুক্তরাষ্ট্র একটি সংশোধন এনেছিল, কিন্তু তা নাকচ হয়ে যায়। তা সত্ত্বেও ভারত মনোভাব বদলে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়।
কেন এই সিদ্ধান্ত, সেই ব্যাখ্যায় জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রুচিরা কম্বোজ বলেছেন, গাজার বর্তমান পরিস্থিতি ভয়াবহ। প্রতিদিন শত শত বেসামরিক মানুষ নিহত হচ্ছেন। ভারত মনে করে, শান্তিপূর্ণ যুদ্ধবিরতি জরুরি। সমস্যা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় দ্বিরাষ্ট্র সমাধান। এটাই ফিলিস্তিনিদের একমাত্র দাবি।
রুচিরা বলেন, এই যুদ্ধের অনেক দিক রয়েছে। ৭ অক্টোবরের ‘সন্ত্রাসী’ হামলা, মানবিক সংকট, স্থায়ী দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান। এসবের মধ্যে ভারসাম্য রেখে সমাধানের দিকে এগোনো দরকার। এই যুদ্ধ বৈশ্বিক রাজনীতিকে টালমাটাল করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক দুনিয়া এক নজিরবিহীন কঠিন সময়ের মুখোমুখি। সে কারণেই এই প্রস্তাবকে ভারত সমর্থন করেছে।
জাতিসংঘের মোট ১৯৩ সদস্যের মধ্যে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রিয়া, ইসরায়েলসহ ২৩টি দেশ। ভোটদানে বিরত থেকেছে জার্মানি, আর্জেন্টিনা, ইউক্রেনসহ ১০ দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া এবারও প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে।
গাজা এই মুহূর্তে ধ্বংসস্তূপে পরিণত। নির্বিচার ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৮ হাজার ৬০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি। তাঁদের মধ্যে নারী ও শিশু ১২ হাজার। হামাস যোদ্ধাদের হামলায় মারা গিয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি ও অন্য দেশের কিছু নাগরিক। হামাসের হাতে বন্দী হয়েছিলেন ২৪২ জন ইসরায়েলি।
সমাধানের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা ভারত বারবার করেছে। যেমন হামাসের হামলার নিন্দা ও মানবিক সংকট সুরাহার দাবি। হামাসের সমালোচনার দাবি নাকচ হওয়ায় অক্টোবরের প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকার দরুণ দেশের অভ্যন্তরে যেমন, তেমনই পশ্চিম এশিয়ায় ভারতের অবস্থান প্রশ্নের মুখে পড়েছিল।
কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র বলেছিলেন, ভারতের ভোট না দেওয়া তাঁকে বিস্মিত ও লজ্জিত করেছে। লাখো মানুষের কাছে খাদ্য, পানীয়, ওষুধ পৌঁছানো যাচ্ছে না। নির্বিচার নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ভূমিকা না নিয়ে নীরব থাকা মানবতাকে অস্বীকারের শামিল। জাতি হিসেবে ভারত চিরকালই এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। ভারত দেশটা গড়ে উঠেছে অহিংসা ও সত্যের ওপর।
হামাসকে সন্ত্রাসবাদী তকমা দেওয়ার দাবিও ভারত এখনো মানেনি। সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে অনড় থেকেও মানবিক সমাধানের জন্য জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্তের পেছনে ইসলামি দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্কও বড় ভূমিকা নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সেপ্টেম্বরে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আসরে ভারত-পশ্চিম এশিয়া-ইউরোপ করিডরের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’-এর পাল্টা এই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে গেলে পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে সখ্য জরুরি। মন বদলে জাতিসংঘের প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়া তারও একটা বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
আগামী শনিবার ওমানের সুলতান ভারত সফরে আসছেন। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটাই হতে চলেছে উপসাগরীয় দেশগুলোর কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথম ভারত সফর। তার আগে এই সিদ্ধান্ত কূটনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
মন্তব্য করুন: