প্রকাশিত:
২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:০৪
ঢাকার শিল্প-কারখানাগুলোতে বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) থেকে ভোলার গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে। এই গ্যাস সিএনজিতে (সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস) রূপান্তর করে তিতাস গ্যাসের বিতরণ এলাকার শিল্পে সরাসরি সরবরাহ করবে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং লিমিটেড। দ্বীপজেলা ভোলা থেকে উত্তোলিত গ্যাস সঞ্চালন লাইন না থাকায় জাতীয় গ্রিডে আনা যাচ্ছিল না। দেশের গ্যাসসংকট নিরসনে এবং শিল্প-কারখানার উৎপাদন ঠিক রাখতে ভোলার কূপ থেকে গ্যাস সিএনজিতে রূপান্তর করে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, (২১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. নূরুল আলম।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইন্ট্রাকো কম্পানি ভোলার গ্যাস সিএনজি করে আনতে চলতি বছরের মে মাসে সুন্দরবন গ্যাস কম্পানির সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে। চুক্তি সূত্রে জানা গেছে, ইন্ট্রাকো সরকারের কাছ থেকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ১৭ টাকায় কিনে ৪৭ টাকা ৬০ পয়সায় বিক্রি করবে।
জানতে চাইলে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রিয়াদ আলী বলেন, ‘দৈনিক পাঁচ মিলিয়ন ঘনফুট হারে শিল্পে গ্যাস দেওয়ার সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে আমরা সফলভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করেছি।’
তিনি বলেন, ‘উদ্বোধনের দিন প্রথমে গাজীপুরের গ্রাফিকস টেক্সটাইলে গ্যাস দেওয়া হবে। শিল্প-কারখানার চাহিদার ভিত্তিতে সরাসরি গ্যাস সরবরাহ করব।
’পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে চার-পাঁচ মাসের মধ্যে দৈনিক পাঁচ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস রূপান্তর করে তা ঢাকায় সরবরাহ করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এক বছরের মধ্যে সরবরাহ করা হবে। মূলত গ্যাসকে চাপের মাধ্যমে তরলে পরিণত করে তা ট্যাংকে জমানো হয়। এই প্রক্রিয়ায় গ্যাসকে তরলীকরণ করে তা পরিবহন করা হবে।
জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সঞ্চালন লাইন না থাকায় ভোলা থেকে উত্তোলন করা গ্যাস জাতীয় গ্রিডে আনা যাচ্ছে না।
এ অবস্থায় ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে পরিবহন করে শিল্প-কারখানায় সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটিই দেশে প্রথমবারের মতো কোনো গ্যাসক্ষেত্র, যা থেকে সরাসরি সিএনজি করে গ্যাস নিয়ে শিল্পে সরবরাহ করা হচ্ছে। সিএনজি আকারে এই গ্যাস এনে শিল্পে দেওয়া গেলে তা শিল্প খাতে বড় ভূমিকা রাখবে বলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।
জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ইন্ট্রাকো বেশ কয়েক দিন ধরেই ভোলার গ্যাস পরীক্ষামূলকভাবে সিএনজি করে আনছে। এটির উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আনা শুরু হবে। এই গ্যাস কিছুটা হলেও শিল্পের সংকট কাটাতে সহায়ক হবে বলে তিনি জানান।
শিল্প-কারখানায় বর্তমানে পাইপলাইন থেকে প্রতি ইউনিট (ঘনমিটার) গ্যাস পান ৩০ টাকায়। আর সিএনজি স্টেশন থেকে পরিবহনে গ্যাস বিক্রি হয় ৪৩ টাকায়। প্রস্তাব অনুসারে, ভোলার গ্যাস সিলিন্ডারে করে কারখানায় পৌঁছে দেওয়া হবে ৪৭ টাকা ৬০ পয়সায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোলা থেকে সিএনজি করে আনা গ্যাস পাইপলাইনের গ্যাসের তুলনায় অনেক ব্যয়বহুল হবে। তাই উচ্চমূল্যের এই গ্যাস শিল্প-কারখানার মালিকরা ব্যবহারে কতটুকু আগ্রহ দেখাবেন, সেটা নিয়েও চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, শিল্প বাঁচাতে শিল্পোদ্যোক্তারা মূল্য বেশি পরিশোধেও গ্যাস পেতে আগ্রহী হওয়ায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
১৯৯৫ সালে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে বাপেক্স। একই সংস্থা ২০১৮ সালে আবিষ্কার করে ভোলার দ্বিতীয় গ্যাসক্ষেত্র ভোলা নর্থ। চলতি বছরে ইলিশা-১ কূপকে ভোলার তৃতীয় গ্যাসক্ষেত্র এবং দেশের ২৯তম গ্যাসক্ষেত্র ঘোষণা করা হয়। ভোলায় এই তিনটি গ্যাসক্ষেত্রে ৯টি কূপ রয়েছে।
মন্তব্য করুন: