প্রকাশিত:
২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:৩১
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারে ‘নৌকা’য় ভোট চাইতে রংপুরে এসে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সকালে তিনি রংপুরে পৌঁছে তারাগঞ্জ ওয়াকফ স্টেট সরকারি কলেজ মাঠের জনসভায় যোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন রংপুর-২ আসনের নৌকার প্রার্থী আবুল কামাল মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার এই সফরে তারাগঞ্জ ছাড়াও মিঠাপুকুর এবং পীরগঞ্জে পৃথক নির্বাচনি জনসভায় অংশ নিবেন। এসব জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা।
পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পীরগঞ্জে স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার কবরও জিয়ারত করবেন। পাঁচ বছর পর শ্বশুরালয়ে তার এই আগমনকে ঘিরে সাজ সাজ রব উঠেছে পুরো জেলায়।
প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে সাটানো হয়েছে ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড ও ফেস্টুন। গেট সাজানো হয়েছে পুরো জেলাজুড়ে। পীরগঞ্জে জনসভাস্থলে প্রস্তুত রয়েছে নৌকার আদলের তৈরি সভামঞ্চ।
মঞ্চের পাশেই করা হয়েছে মিডিয়া বক্স, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অতিথি কর্নার। সামনে থাকবে জনতা। নারীদের জন্য বাঁশের ডিভাইডার দিয়ে আলাদা করা হয়েছে স্থান।
রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক, প্রধানমন্ত্রীর ভাসুরের ছেলে একেএম ছায়াদত হোসেন বকুল জানান, এর মধ্যে সভাস্থলগুলোর সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। জনসভাগুলোয় প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে মিছিল স্লোগানসহ ব্যাপক লোক সমাগম ঘটবে। একই সঙ্গে নিকটবর্তী গাইবান্ধা, দিনাজপুর জেলা থেকেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে মানুষের ঢল নামবে জনসভায়। দলীয় প্রধানের সাক্ষাৎ পেতে উদগ্রীব রংপুরের নেতাকর্মী-সমর্থকরা।
তিনি জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার আরও বেশি সরগরম কর্মী-সমর্থকরা। এবার প্রার্থীরা আরও বেশি সমর্থক নিয়ে জনসভাস্থলগুলোতে আসবেন।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (২৬ ডিসেম্বর) মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে বিমানযোগে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নীলফামারীর সৈয়দপুরের উদ্দেশে রওনা হন।
সেখান থেকে তিনি সড়কপথে তারাগঞ্জ ওয়াকফ স্টেট সরকারি কলেজ মাঠে রংপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আবুল কামাল মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের পথসভায় যোগ দেন।
বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী যাবেন পীরগঞ্জের লালদীঘি ফতেহপুরে তার শ্বশুরবাড়ি জয় সদনে। সেখানে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও তার স্বামী প্রয়াত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করবেন। পরে শ্বশুরালয়ে দুপুরের খাবার খাবেন প্রধানমন্ত্রী।
বিকেল ৩টায় পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত রংপুর-৬ আসনের প্রার্থী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন শেখ হাসিনা।
এদিকে তারাগঞ্জ থেকে পীরগঞ্জে যাবার পথে মিঠাপুকুরের জায়গীরে আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে রংপুর-৫ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাশেক রহমানের নির্বাচনী সভায়ও অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে তার। সেখানেও সভামঞ্চ তৈরি করাসহ অন্যান্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এদিকে পাঁচ বছর পর পীরগঞ্জে শ্বশুরালয়ে পুত্রবধূর আগমনে গোটা উপজেলায়ও সাজসাজ রব, চলছে পোস্টারিং ও মাইকিংসহ ব্যাপক প্রচার। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে বরণ করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে দলের নেতারা।
পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামীম জানান, শেখ হাসিনাকে বরণ এবং জনসভা সফল করতে সব প্রস্ততি সম্পন্ন করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এ জনসভায় প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে মিছিল স্লোগানসহ মানুষের ঢল নামবে।
তারাগঞ্জ এবং পীরগঞ্জের জনসভাস্থল এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে জনসভাস্থল। প্রস্তুত মাঠ-মঞ্চ, বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষের জন্য গাড়ি পার্কিং এবং যাতায়াতের রুট ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমনে জনসভাস্থল এবং সড়ক মহাসড়কগুলোতে সাত স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আব্দুল বাতেন।
এসএসএফসহ রাষ্ট্রীয় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্কতায় মাঠ ও মঞ্চ প্রস্তুত করেছেন। জনসভাকে ঘিরে মাঠসহ আশেপাশের এলাকায় বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। পোশাকি ও সাদা পোশাকের বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে সভাস্থলসহ আশপাশের এলাকায়।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে সৈয়দপুর থেকে পীরগঞ্জ পর্যন্ত সড়ক মহাসড়কগুলোতেও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক জানান, পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসভা শেষে সড়কপথে সৈয়দপুর হয়ে বিমানযোগে ঢাকা ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর তারাগঞ্জ ও পীরগঞ্জে একই মাঠে জনসভা করেছেন। তারও আগে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পীরগঞ্জের তরফমৌজা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পথসভা ও লালদীঘির ফতেহপুরের জয়সদনে কর্মীসভা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবশেষ এ বছরের ২ অগাস্ট রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে রংপুর-২ আসনে আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, রংপুর-৪ আসনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, রংপুর-৫ আসনে রাশেক রহমান ও রংপুর-৬ আসনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতার কারণে রংপুর-১ আসনে দলীয় প্রার্থী রেজাউল করিম রাজু ও রংপুর-৩ আসন থেকে তুষার কান্তি মণ্ডলকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, রংপুর জেলার ছয়টি আসনে দলীয় ও স্বতন্ত্র মিলে ৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে রংপুর-১ আসনে নয়জন, রংপুর-২ আসনে তিনজন, রংপুর-৩ আসনে ছয়জন, রংপুর-৪ আসনে তিনজন, রংপুর-৫ আসনে আটজন এবং রংপুর-৬ আসনে সাতজন প্রার্থী।
মন্তব্য করুন: