প্রকাশিত:
২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭:৩৯
সবজির জন্য সারাবিশ্বের ভান্ডার খ্যাত জেলা গুলোর মধ্যে অন্যতম নরসিংদী। শীতকালীন সবজির ভরা মৌসুমেও উৎপাদন সরবরাহ কম থাকায় এখনো সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে। চাহিদার তুলনায় সবজির সরবরাহ কম থাকায় এখানকার বাজার গুলোতেও উর্ধমুখী চড়া।
জেলার রাধাগন্জ, চরসুবুদ্দি, মাহমুদাবাদ নামাপাড়া, জঙ্গি শিবপুর, গুগল নগর, বারৈচা, নারায়নপুর, মরজাল, পুটিয়াসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সাপ্তাহিক হাট জমে।
দাম বাড়ার কারণ খোঁজতে গিয়ে পাইকারি হাট বাজার গুলো ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণার মুখর। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে সবজি কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন।
এ দিখে দাম ভালো পাওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের মুখে কিছুটা হাসি ফুটেছে।
চাষীরা বলছেন, কিছুদিন পূর্বে টানা বৃষ্টির কারণে সবজির খেত ব্যাপক বিনষ্টে উৎপাদন কমে যায়। উৎপাদন কম থাকায় বাজারে সরবরাহ কম। খরচ উঠাতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম চাহিদা বেশি থাকায় সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। তারা আরও বলছেন, এভাবে চড়া দামে সবজি বিক্রি হওয়ায় মধ্যবিত্ত ও নিন্ম আয়ের মানুষের কষ্টের সীমা নেই। সবজির দাম মাঝে কমলেও আবার কবে কমবে তাও জানে না। পাশাপাশি প্রশাসনের তদারকির অভাবে এক শ্রেণীর মধ্যসত্বভোগী ফায়দা লুটছে।
জানা যায়, জেলার রায়পুরা, বেলাব, শিবপুর উপজেলায় সমতল ও উঁচু জমিতে সারা বছর সবজি চাষ হয়ে থাকে। কৃষকরা সারা বছর সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করেন। এসব উৎপাদিত সবজি দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা চাহিদা পূরণে সরবরাহে বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে। বাধ্য হয়েই সবজি ভান্ডার খ্যাত কৃষকরা স্থানীয় বাজারে বিক্রিতে ভালো দাম পাচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে, ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, সব ধরনের সবজি পাইকারী এবং খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রির হচ্ছে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আলু ৭০ টাকা, পেঁয়াজ ১শ থেকে ১৩০ টাকা, সিম ৭০ টাকা, বেগুন ৫০-৭০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০-৯০ টাকা, পাকা টমেটো ৬০-৬৫ টাকা, শসা ৪০ টাকা কেজি, করলা ৯০, গাজর ৪০ টাকা, পেপে ৪০ টাকা কেজি, প্রতি পিচ লেবু মাঝারি ৫-৭ টাকা, মিস্টিলাউ ৫০-৬৫ টাকা, লাউ ৪০-৭০ টাকা ফুলকপি ৩০-৪০ টাকা, ফুলকপি ৩০-৪০ টাকা, পাতাকপি ৪০-৫০ টাকা পিচ, লালসাক ৪০ টাকা, ধনিপাতা ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মধ্যস্বত্বভোগীদের কারনে খুচরা বাজার গুলোতে দাম বেশ চড়া। প্রতি কেজি আলু ৮০ টাকা, বেগুন ৭০-৯০ টাকা, পেয়াজ ১৩০-১৫০ টাকা পেঁয়াজের টুসা ৫০ টাকা, সিম ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ১২০ টাকা, পেপে ৫০ টাকা, টমেটো পাকা ৭০-৮০ টাকা, গাজর ৫০, শসা ৫০, কাঁচা টমেটো ৪০ টাকা, ধনিপাতা ১০০টাকা কেজি, প্রতি পিচ লেবু মাঝারি ৫-১০ টাকা, মিস্টিলাউ ৫৫-৯০ টাকা, লাউ ৮০-১০০ টাকা পিচ, লালশাক ৫-১০ আটি। ডটা ও লাউশাক প্রতি আটি ১০-২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি ক্রেতা সুরুজ মিয়া জানান, 'জেলার বিভিন্ন হাটবাজার থেকে শত শত ট্রাকযোগে সবজি সরবরাহ করে থাকি। এখানকার উৎপাদিত সবজি বিশ্ব বাজারে রপ্তানি এবং রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করি। পাইকারি বাজারে বেশি দামে কিনে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। আমাদের লাভ খুব কম।'
কামাল, মজনু, স্বপ্ন বিশ্বাস আ:মালেক, শ্যামল, কাওছারের মত অনেকের দাবি 'কিছুদিন পূর্বে টানা বৃষ্টির কারণে সবজির খেত ব্যাপক বিনষ্টে উৎপাদন সরবরাহ কম। পাশাপাশি ফসল উৎপাদনে খরচ বেড়ে গেছে। কৃষি যন্ত্রপাতি, ডিজেল, সার, কীটনাশকের দাম বেশি। এ সবের দাম কমাতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করি।'
আঃ রহমান নামে এক কৃষক জানান, 'প্রতি হাটবার বাজার থেকে সারাদেশে ট্রাকযোগে সবজি সরবরাহ হয়। পাইকারী সবজি বাজারেও এখন ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা বেশি। উর্ধ্বমুখী বাজার হলেও খরচ উঠাতেই হিমশিম খাচ্ছি।'
উত্তর বাখর নগর গ্রামের কৃষক স্বপন বিশ্বাস (৩০)জানান, আমি ৪৬ শতক জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার। ১০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পেরেছি। এখনি লাভের মুখ দেখতে ছিলাম। হঠাৎ বৃষ্টি ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খরচ পুশাতে হিমশিম খাচ্ছি। দামে বিক্রি করলেও শ্রমিক কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে খরচ উঠা নিয়ে চিন্তিত।'
খুচরা বিক্রেতা কবির মিয়া বলেন, সবজির হাটে বেশি দামে কিনে এনে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। কৃষকেরা জানান কিছুদিন পূর্বে বৃষ্টির কারণে সবজি ব্যাপক নষ্ট হওয়ায় উৎপাদন কমে যাওয়ায় দাম এখনো উর্ধ্বমুখী।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের তুলনায়, এলাকায় সবজির আবাদ বেড়েছে। বর্তমানে সবজির দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকে মুখে হাসি ফুটেছে। বিদেশে সবজি রপ্তানির পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রপ্তানি বৃদ্ধিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন: