প্রকাশিত:
২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:১৮
নরসিংদীর সদর উপজেলার জেলখানা মোড় ওভারব্রিজের নিচে ভাপাপিঠার ছোট্ট চুপড়ি দোকান। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে মালেক মামার পিঠার দোকান নামে পরিচিত।
বছরের অন্য সময়ে সকালে রিকশা ও রাতে পানের দোকান চালান মালেক মিয়া। জেলায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই মালেক মিয়ার ভাপাপিঠা। প্রতি বছরের মতো এবারও শীতের শুরুতেই তার পিঠার আকার ও উপাদানের ভিন্নতা দিয়ে এরই মধ্যে কেড়েঁছেন ভোজনরসিকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে সুখ্যাতি অর্জন করেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিক্রি করা হয় বিশেষ ধরনের এই ভাপাপিঠা। এখানে ৩০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকার পিঠা পাওয়া যায়। তবে এক দিন আগে অর্ডার দিলে বানিয়ে দেওয়া হয় ৫ হাজার টাকার ভাপাপিঠা। মালেক মিয়ার ভাপাপিঠা খেতে আসা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। সেখানে সন্ধ্যার পর থেকে ভিড় করেন পিঠাপ্রেমিরা। অনেকে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে খেয়ে যান, আবার কেউ বাসায় নিয়ে যান। একবার খেয়ে অনেকে দ্বিতীয়বার আসেন এই পিঠা খেতে। প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার ভাপাপিঠা বিক্রি করেন মালেক মিয়া।
এদিকে যদি কেউ এমন পিঠা বানিয়ে খাওয়াতে পারেন তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন পিঠা বিক্রেতা মালেক মিয়া।
জানা যায়, প্রায় ১১ বছর আগে নরসিংদী পৌর শহর উত্তর সাটিরপাড়া মহল্লার স্থায়ী বাসিন্দা মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে মালেক মিয়া ভাপাপিঠার ব্যবসা শুরু করেন জেলখানার মোড়ে। তার এই বিশেষ ধরনের ভাপাপিঠার সঙ্গে আতপ চালের গুঁড়া, খেজুরের গুড় ও নারিকেলের পাশাপাশি মালাই, সুগন্ধি পোলাও চাউল, কিসমিস, খেজুর, পেস্তাবাদাম, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম ও মাওয়াসহ বিভিন্ন উপাদান যুক্ত করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, মালেক মিয়ার ভাপাপিঠা খেতে শহরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসেন পিঠা প্রেমিরা। এর অনেকে এই সুস্বাদু পিঠা খেয়ে বাসাবাড়িতেও নিয়ে যান।
পিঠা খেতে আসা রিপন মিয়াসহ তিন সহকর্মী রাজধানীর উত্তরা থেকে মোটরসাইকেলে এসেছেন। তারা বলেন, ‘অন্য বন্ধুরা জেলখানা মোড়ে এসে ভাপাপিঠা খেয়ে বেশ প্রশংসা করেছিলেন। তাই এই পিঠার স্বাদ নিতে চলে এসেছেন এখানে।’ এ সময় তারাও মালেক মিয়ার ভাপাপিঠার প্রশংসা করেন।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন মো. রিয়াজ মিয়া। তিনি পাঁচদোনা থেকে জেলখানা মোড়ে প্রায় সময়ই আসেন ভাপাপিঠা খেতে। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে মনে হলো নাস্তা করব। তাই পিঠার লোভ সামলাতে না পেরে চলে এসেছি মালেক মিয়ার দোকানে। গতবারের চেয়ে পিঠা আকারে একটু ছোট হলেও স্বাদ আগের মতোই।’
মালেক মিয়ার সহকারী ও শৈশবের বন্ধু কবীর হোসেন আফ্রাদ বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে পিঠা খেতে আসেন অনেক মানুষ। এই পিঠার কোনো জুড়ি নেই। এমন ভাপাপিঠা কেউ বানিয়ে খাওয়াতে পারবে বলে মনে হয় না।’ তিনি প্রতিদিন বিকাল থেকে বন্ধু মালেক মিয়াকে সহযোগিতা করেন।
এই সুস্বাদু ভাপাপিঠাগুলো হাঁড়ি থেকে নামানোর আগে লাইনে দাঁড়িয়ে অর্ডার করতে থাকে ক্রেতারা। আর ক্রেতাদের মন রক্ষা করে এই পিঠা বিক্রিতে সহযোগিতা করে যাচ্ছে মালেক মিয়ার ভাগিনা রনিসহ আরও চার কর্মচারী।
এ সময় রনি মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল থেকে মালেক মিয়ার বাড়িতে পিঠা বিক্রির উপদানগুলো প্রস্তুত করে দুপুরে জেলাখানা মোড়ে এসে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয়। মালিক মিয়া পিঠা তৈরি করে দেন। আর রনি ক্রেতাদের হাতে তুলে দেন পিঠা।
মালেক মিয়া বলেন, ‘এবার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সর্বনিম্ন ৩০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে একটি পিঠা। তবে বেশি বিক্রি হয় দুই শ টাকা ও দেড় শ টাকার পিঠা। এক হাজার টাকার একটি পিঠার ওজন হয় দুই কেজি থেকে আড়াই কেজি। আর পাঁচ হাজার টাকার পিঠা নিতে হলে আগে অর্ডার দিতে হবে। যদি কেউ এমন পিঠা বানিয়ে খাওয়াতে পারেন, তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেব।’
মন্তব্য করুন: