প্রকাশিত:
২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৭
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বহুল আলোচিত গাজীপুর-৩ আসনে নৌকার সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থির ট্রাক মার্কার হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
তবে বেশিরভাগ ভোটার মনে করছেন যেহেতু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এবং এই আসনটিসহ গাজীপুর আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় দূর্গ সেকারনে স্বতন্ত্র প্রার্থির ব্যক্তি ইমেজ যত বিস্তৃতই হোক না কেন শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ যারা করেন তারা সব মতভেদ ভুলে নৌকার পক্ষেই তাদের অবস্থান গ্রহন করবেন।
তারা মনে করছেন, যেখানে প্রায় অর্ধেক ভোটার নারী সেই কারনে নৌকার টিকেট পাওয়া নারী প্রার্থি রুমানা আলী টুসির দিকেই নারী ভোটারদের অধিক সমর্থন থাকবে।
এছাড়া নৌকার কান্ডারি রুমানা আলী টুসি যেহেতু সংরক্ষিত আসনের এমপি ছিলেন এবং তার পিতা প্রয়াত রহমত আলী সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের ৫ বারের এমপি থাকার সুবাদে এই আসনে তাদের অভেদ্য রাজনৈতিক শক্তি রয়েছে।
এছাড়াও তার ভাই এ্যাড জামিল হাসান দুর্জয় রাজনীতিতে সক্রিয় এবং তার অগনীত অনুসারী রয়েছে সে কারনে ভাইয়ের আশীর্বাদ বোনের জন্য বাড়তি সুবিধা নিয়ে আসবে।
অন্যদিকে শ্রীপুরের ৪ বারের পৌর মেয়র আনিছুর রহমান,সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বিএসহ মাওনা, গাজীপুর,কাওরাইদ ইউপি চেয়ারম্যাসসহ এখানকার রাজনৈতিক বোদ্ধারা নৌকার সাথে সরাসরি জড়িত থাকায় নৌকার প্রার্থি বাড়তি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন।
নৌকাপ্রাপ্তদের ধারনা ব্যক্তি ইমেজ নয় আওয়ামী লীগের দূর্গে নৌকায় আসল ম্যাজিক ও নিয়ামক শক্তি।নৌকার বিরুদ্ধে ভোটের মাঠে ব্যক্তি ইমেজ তেমন কোন কাজে আসবে না।এই জনপদের আওয়ামী প্রিয় মানুষ শেষ পর্যন্ত নৌকাকেই বেছে নেবে এবং নৌকার জয়লাভ নিশ্চিত করবে।
অপরদিকে এই আসন থেকে নৌকার টিকেট না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থি হয়েছেন বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ।তৃণমূলের সাধারন মানুষের কাছে তিনি ভীষণ জনপ্রিয় থাকলেও নৌকার বিরুদ্ধে খুব একটা সুবিধা করতে পারবেন না বলে নৌকা সমর্থকদের ধারনা।
বিশেষ করে নারী ভোটারদের ভোট তিনি কম পাবেন বলে তারা মনে করছেন।তারা বলছেন, তৃণমূল নেতা কর্মি ও রাজপথের সক্রিয় নেতাদেরকে তিনি যথাযথ মূল্যায়ণ না করায় তার বিরুদ্ধ এদের মনে রয়েছে নিরব ক্ষোভ।যে কারনে একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে যে উত্তাল জনস্রোত তার পাশে ছিল তা এখন আর নেই।ভাটা পড়েছে হতাশ নেতা কর্মিদের সক্রিয়ভাবে মাঠের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না হওয়ায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে গাজীপুর সদরের ৩ টি ইউনিয়ন যা গাজীপুর-৩ আসনের আন্তর্ভূক্ত সেসব ইউনিয়নসমুহের মধ্যে পিরুজালী ইউনিয়নে ১৭ হাজার ৩'শ ৭৯ ভোট রয়েছে।
ভাওয়াল গড় ইউনিয়নে ভোটের সংখ্যা ৫৪ হাজার ৮'শ ১৫ টি। মির্জাপুর ইউনিয়নে মোট ভোট ৩০ হাজার ২'শ ৩০টি অর্থাৎ মোট ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার ৪'শ ২৪ টি।
এসব ভোটের মধ্যে প্রদেয় ভোটের ৭০% ভোট স্বতন্ত্র প্রার্থি ইকবাল হোসেন সবুজ এমপির পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নে মোট ভোটা ৩৮ হাজার৬'শ ৭৮টি এবং তার নিজ ইউনিয়ন প্রহলাদপুরে মোট ভোট ২৪ হাজার ২'শ ১৯টি,যার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ভোট স্বতন্ত্র প্রার্থির ঝুলিতে যোগ হতে পারে।
এছাড়া গোসিংগা ইউনিয়নে মোট ভোট ৩২ হাজার ১৭ টি, যার ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ভোট স্বতন্ত্র প্রার্থির পক্ষে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ আসনের বরমী ইউনিয়নে মোট ভোট রয়েছে ৫৪ হাজার ৮'শ ১২ টি ভোট।এই ইউনিয়নে নৌকা স্বতন্ত্র তুমুল লড়াই হতে পারে।তবে কিছু ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করবে ইকবাল হোসেন সবুজ।
উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নে মোট ভোটের সংখ্যা ৪৪ হাজার ৪'শ ৩৫ টি।এখানে নৌকা-স্বতন্ত্র হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।তবে এই ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থির জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি বলে জানা গেছে।
উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নে মোট ভোটের সংখ্যা ৪৩ হাজার ৬'শ ৯৩ টি।এই ইউনিয়নের সিংহভাগ ভোট নৌকার পক্ষে যেতে পারে বলে মনে করছেন ভোটাররা।
উপজেলার মাওনা ইউনিয়নে মোট ভোটারের সংখ্যা ৩৯ হাজার ৪'শ ১৬ টি। এই ইউনিয়নের সিংহভাগ ভোট নৌকার প্রার্থির পাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছেন এখানকার ভোটাররা।
এই আসনের গাজীপুর ইউনিয়নে ভোটের সংখ্যা ৪০ হাজার ৮'শ ৬৭টি। এখানকার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকের সাথে কথা বলে জানা গেছে এই ইউনিয়নেও নৌকার প্রার্থি জয়লাভ করবে ২ থেকে ৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে।
গাজীপুর-৩ আসনের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হচ্ছে শ্রীপুর পৌরসভা।৯ টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ পৌরসভায় মোট ভোটার রয়েছেন ৭১ হাজার ৮'শ ৬৫টি।
পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান নৌকার প্রার্থির পক্ষে সক্রিয় ও ব্যাপকভাবে অন্যতম নীতি নির্ধারকের ভূমিকায় থাকায় এখানকার ৬০ থেকে ৬৫% ভোট নৌকার প্রার্থির পক্ষে পড়বে বলে রাজনীতি সচেতন মানুষ মনে করছেন।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর-৩ আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ৯২ হাজার ৪'শ ৪০ জন। যদি ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ ভোট কাস্ট হয় তবে নৌকা ও স্বতন্ত্রের মধ্যে প্রাপ্ত ভোটের খুব বেশি ব্যবধান থাকবে না।
এখানকার সচেতন মহল বলছেন, নারী ভোটার,প্রথমবার ভোটার হওয়া তরুন ভোটার,নির্বাচনে না আসা বিএনপি জামাত,ওলামা মাশায়েখ ও অতি সাধারন শ্রেনীর মানুষের ভোট যে প্রার্থির পক্ষে যাবে, এদের ভোটেই মূলত নির্ধারিত হবে নৌকা ও ট্রাকের জয় পরাজয়।
মন্তব্য করুন: