প্রকাশিত:
৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:২৮
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে তৃতীয় দলকে ক্ষমতায় আনতে আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিলের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের জবাব দেবে দেশবাসী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন বাতিলের জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। অনেকে আন্তর্জাতিকভাবেও জড়িত। তারা বাংলাদেশে তৃতীয় পক্ষকে ক্ষমতায় আনার জন্য কাজ করছে।
আমরা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের উপযুক্ত জবাব দেব।’
প্রধানমন্ত্রী ৩০ ডিসেম্বর শনিবার সকালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ মাঠে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য নির্বাচনী জনসভায় এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী ৭ জানুয়ারি আমাদের নির্বাচন। নৌকা মার্কায় আমরা ভোট করব।
আপনারা সকালে সকলে সশরীরে এসে ভোট দিয়ে এই বিশ্বকে দেখাবেন যে এই নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং আমরা তা করতে জানি ও করতে পারি। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আমরা করতে পারি।’ তিনি বলেন, তিনি চান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হোক।
আওয়ামী লীগ সভাপতি টুঙ্গিপাড়াবাসীর সমর্থনকে নিজের শক্তি হিসেবে উল্লেখ করে তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, ‘আমি ৩০০ আসন দেখি। আর আমাকে দেখেন আপনারা। কাজেই এটাই হচ্ছে আমার সব থেকে বড় পাওয়া, আমার মতো একজন সৌভাগ্যবান প্রার্থী বাংলাদেশে আর নেই। এটা হলো বাস্তবতা। তার কারণ আপনারা।
আপনারাই আমার দায়িত্ব নেন। আপনারা আমাকে দায়মুক্ত করে রেখেছেন বলেই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমরা কাজ করতে পারছি।’
‘আমি একজন প্রার্থী হিসেবে নৌকা মার্কায় ভোট চাই, ভোট দেবেন তো?’ শেখ হাসিনার এই প্রশ্নের উত্তরে সমস্বরে চিৎকার করে জনতা দুই হাত তুলে সম্মতি জানায়। উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি জানি, আপনারা দেবেন।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে সকাল সোয়া ১১টায় সমাবেশস্থলে পৌঁছান এবং সমাবেশে জাতীয় পতাকা নেড়ে জনতাকে শুভেচ্ছা জানান। সমাবেশটি একটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
টুঙ্গিপাড়ার জনসভা শেষে কোটালীপাড়ায় যান শেখ হাসিনা। সেখানে একটি নির্বাচনী জনসভায় যোগদান শেষে মাদারীপুরে আরেকটি নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন। পরে সেখান থেকে ঢাকায় ফেরার কথা।
এর আগে দুই দিনের সফরে গত শুক্রবার সড়কপথে বরিশাল যান শেখ হাসিনা। বিকেলে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জনসভায় যোগদান শেষে সন্ধ্যায় নিজের পিতৃভূমিতে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। নির্বাচনী এই সফরে শেখ হাসিনার সঙ্গে আছেন তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা।
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ আবুল বশার খায়ের। সঞ্চালনা করেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বাবুল শেখ।
নতুন ভোটারদের নৌকায় ভোট দেওয়ার আহবান
কোটালীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান কলেজ মাঠে আয়োজিত আরেকটি মহাসমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নতুন ভোটার ও তরুণদের তাঁর দলের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট দেওয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন, ‘যারা যুবসমাজ ও তরুণসমাজ এবং প্রথমবার যাঁরা ভোটার হবেন শুধু কোটালীপাড়া টুঙ্গিপাড়া নয়, সারা বাংলাদেশের জন্য আমার আহবান—নতুন ভোটাররা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করার সুযোগ করে দিয়ে বাংলাদেশ যেভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ায় তাদের সাহায্য করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের অগ্রগতি, সেটাই আমরা বিশ্বাস করি।’
আধুনিক প্রযুক্তিগত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তরুণ প্রজন্মকে স্মার্ট ও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তাঁর সরকার গড়ে তুলবে উল্লেখ করে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার, আমাদের অর্থনীতি ও আমাদের সমাজব্যবস্থাও স্মার্ট করে গড়ে তোলা হবে। যেন এই বাংলাদেশ শিক্ষা-দীক্ষা জ্ঞানে-বিজ্ঞানে এবং প্রযুক্তিতে উন্নত সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে চলতে পারে। কারো কাছে মাথা নত করে নয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় বিএনপি-জামায়াত জোট মিলে অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষ হত্যা শুরু করেছে। রেলের বগিতে আগুন দিয়ে মা ও শিশুকে পুড়িয়ে মারে। রাস্তাঘাটে যেখানে-সেখানে আগুন দেয় বাসে। আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে—এই দুর্বৃত্তপরায়ণতা আমাদের বন্ধ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘যে যেখানে আছেন, ওই আগুন যারা দেয় বা মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র যারা করে, ওদের ধরিয়ে দিন, উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করে দিন, সেটাই আমি আহবান জানাব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাংলাদেশটা উন্নত ও সমৃদ্ধ হবে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সে জন্যই আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। আর এই সুযোগটা আপনারাই দিয়েছেন, কারণ নৌকা মার্কায় আমাকে ভোট দিয়ে বারবার নির্বাচিত করেছেন।’
দেশি-বিদেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অপবাদ দিতে চেয়েছিল মিথ্যা দুর্নীতির অপবাদ। আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম যে দুর্নীতি কোথায় হয়েছে সেটা প্রমাণ করো। বিশ্বব্যাংক সে দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি। কারণ কোনো দুর্নীতি এখানে হয়নি।’
মন্তব্য করুন: