প্রকাশিত:
৫ জানুয়ারী ২০২৪, ১১:৫১
কথিত আছে ‘খালি কলসি রেখে দিলে ভরে যায় রসে, সেই রসে দিয়ে জ্বাল মন ভরে সুবাসে’। আবার গাভীর সাথে তুলনায় খেজুরগাছ কে বলা হয় ‘মাইট্যা গোয়াল কাঠের গাই-বাছুর ছাড়া দুধ পাই’। কাকডাকা ভোরে খেজুরের রস, মন মাতানো ঘ্রাণ শহরে বিরল। শীতের সকালে খেজুর রস, মিষ্টি রোদ, কৃষক-কৃষাণির হাসি দারুণ প্রাণশক্তি। কবির ভাষায়, ‘এমন শীতলমিষ্টি কোথা আছে নীর? পান মাত্র তৃষিতের জুড়ায় শরীর’। তাই এ গাছকে অনেকে শখের বসে ‘মধুবৃক্ষ’ বলে থাকে।
কাকডাকা ভোরে খেজুরের রস, মন মাতানো ঘ্রাণ শহরে বিরল। শীতের সাকালে খেজুর রস, মিষ্টি রোদ, কৃষক-কৃষাণির হাসি দারুণ প্রাণশক্তি। খেজুরের রস মানবদেহের জন্য উপকারী বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। প্রচলিত খাদ্য হিসেবে খেজুর রস বেশ সস্তা, পুষ্টিকর এবং উপাদেয়। খেজুর রসে অ্যাসপারটিক এসিড, নাইট্রিক এসিড এবং থায়ামিন বিদ্যমান।
শীতে খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে গাছ কাটেন গাছিরা। খেজুরগাছ থেকে রস বের করার উপযোগী করে কাটা শুরু হয় হেমন্তের প্রথমেই। প্রথম গাছ কাটার পর দ্বিতীয়বার চাঁছ দিয়ে সেখানে বসানো হয় কঞ্চির বিশেষভাবে তৈরি নলি। তার পাশে বাঁশের তৈরি ছোট শলাকা পোঁতা হয় ভাড় (কলস) টাঙানোর জন্য। চোখ বেয়ে নলি দিয়ে রস পড়ে ভাড়ে। খেজুরগাছ কাটা ও তা থেকে রস বের করার মধ্যেও কিছু কৌশল আছে। যে কেউ ভালো করে গাছ কাটতে কিংবা রস বের করতে পারেন না।
কখন, কিভাবে, কোনখানে কেমন করে পোঁচ দিতে হবে এবং যার ফলে গাছ মারা যাবে না, অথচ বেশি রস পাওয়া যাবে তা একজন দক্ষ গাছিই ভালো জানেন। একবার গাছ কাটার পর ২-৩ দিন পর্যন্ত রস সংগ্রহ করা হয়। প্রথম দিনের রসকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় জিরেন। এ জিরেন রস স্বাদে ও মানে অনন্য। জিরেন রস দিয়ে তৈরি হয় উন্নত মানের গুড় ও পাটালি। দ্বিতীয় দিনের রসকে বলা হয় দোকাট এবং তৃতীয় দিনের রসকে বলা হয় তেকাট ওলা। যা দিয়ে তৈরি হয় ঝোলা গুড়। রসের জন্য একবার কাটার পর ২-৩ দিন বিরাম থাকে কাটা জায়গা শুকানোর জন্য। শুকিয়ে গেলে আবার রস সংগ্রহ চলে। এ সময় সুমিষ্ট, সুগন্ধে মৌ মৌ চারদিক। এর সুবাস আর স্বাদে ভিড় জমাতে থাকে পিঁপড়া, মৌমাছি, পাখি ও কাঠবিড়ালি।
শ্রীপুরের খেজুর রসের গাছি (রস সংগ্রহকারী) দৈনিক নাগরিক সংবাদকে বলেন, “আগের মত খেজুরের গাছ নেই আর আগের মত খেজুরের রসও পাওয়া যায় না। বাপ-দাদার কাছ থেকে এই কাজ শিখছি এখন নিজেও করি।” পুরো শীতজুড়ে একটি পূর্ণবয়স্ক খেজুরগাছ দৈনিক গড়ে ২-৪ লিটার রস দিয়ে থাক। শীতের শুরুতে খেজুর রস লিটার ৮০ টাকায় বিক্রি করলেও চাহিদার কারণে দাম বেড়ে এখন লিটার ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন।
তিনি কথোপকথনের এক পর্যায়ে হাসতে হাসতে বলেন বলেন মানুষ খেজুরের রস খেতে আসে কম ছবি তুলতে বেশি।
খেজুরের রস নিয়ে বহু কবি কত শত কবিতা রচনা করেছেন। একটি কবিতার বর্ণনায় কয়েকটি লাইন ছিল এরকম-
শীত এসেছে আমার বাড়ি
নিয়ে একটা রসের হাড়ি,
শীত এসেছে আমার দেশে
দেশটাকে ভাই ভালোবেসে,
শীত এসেছে পিঠা নিয়ে
খেজুরের রস মিঠা নিয়ে.....।
মন্তব্য করুন: