প্রকাশিত:
৯ জানুয়ারী ২০২৪, ১৩:১০
পটিয়ার পশ্চিম ডেঙ্গাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার ছিলেন ২ হাজার ৬৩২। এ কেন্দ্রে ৮৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ১৯২ ভোট পেয়েছেন নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের সামশুল হক চৌধুরী পেয়েছেন মাত্র ১৮ ভোট।
শুধু এ কেন্দ্রে নয়, আরও পাঁচটিতে ৮০ শতাংশের ওপর ভোট পড়েছে। সব কটিতেই নৌকার প্রার্থী হাজারের ওপর ভোট পেয়েছেন। বাকিরা পেয়েছেন হাতেগোনা। কোনো কোনো প্রার্থী শূন্য ভোটও পেয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ১ লাখ ২০ হাজার ৩১৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থী। স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী পেয়েছেন ৩৫ হাজার ২৪০ ভোট।
নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১০৮ কেন্দ্রে গড়ে ৫১ দশমিক ২৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। মোট ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২৯ হাজার ৪২৮ জন। ভোট দিয়েছেন ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭৮৮। বাতিল হয় ২ হাজার ৮২৮ ভোট। ৪০ শতাংশের নিচে ভোট পড়েছে ২৬ কেন্দ্রে। বাকিগুলোতে ৪০ থেকে ৮০ শতাংশের নিচে। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে চরকানাই বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই কেন্দ্রে ভোটার ছিলেন ২ হাজার ৯৭৪। ভোট দেন ৫৭৬ জন। নৌকা পেয়েছেন ২৬৭, ইগল ২১৭। ভোটের হার ১৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
এ আসনে ৯ প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দুজন ছাড়া বাকি সাতজনই জামানত হারিয়েছেন। মোমবাতি প্রতীকের এম এ মতিন পেয়েছেন ৮ হাজার ২৯৮, নোঙ্গর প্রতীকের এম ইয়াকুব আলী ১ হাজার ৪৬, চেয়ার প্রতীকের কাজি মুহাম্মদ জসীম উদ্দিন ৩৬৫, ডাব প্রতীকের ছৈয়দ মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন ১৩৩, ট্রাক প্রতীকের মোহাম্মদ ইলিয়াছ মিয়া ৭৪, লাঙ্গল প্রতীকের মোহাম্মদ নুরুচ্ছফা সরকার ৩৭৮, সোনালী আঁশ প্রতীকের রাজীব চৌধুরী ১১৩ ভোট পেয়েছেন।
ভোট গ্রহণের দিন কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়া ও নৌকার সমর্থকেরা জালভোট দিয়েছেন, এমন অভিযোগ করেছেন এম এ মতিন। তিনি গত রোববার রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর এ অভিযোগ দেন। এম এ মতিন বলেন, সকাল ১০টার পর থেকে মোমবাতির এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়। দুপুর ১২টার পর একতরফা জাল ভোট দেওয়া হয়েছে।
৮০ শতাংশ ভোট আরও যেখানে
চাপড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিলেন ৩ হাজার ২২ জন। এ কেন্দ্রে ৮৩ দশমিক ০৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোট দিয়েছেন ২ হাজার ৫১০, বাতিল হয়েছে ২৫টি। কেন্দ্রটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছেন ১ হাজার ৯৩০ ভোট, ঈগল প্রতীক পান ৩৫৮ ভোট। ছয় প্রার্থী ৫টি করে ভোটও পাননি।
ইউনিয়ন কৃষি স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভোট পড়ার হার ৮৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ। কেন্দ্রটিতে ভোট দিয়েছেন ১ হাজার ৭৭৭ জন। মোট ভোটার ছিলেন ২ হাজার ১০১। নৌকার প্রার্থী পান ১ হাজার ৩৯১, ঈগল ২৮৬।
খানমোহনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। মোট ভোটার ছিলেন ২ হাজার ২২৫। ভোট পড়েছে ১ হাজার ৮৫৫। গত রোববার বেলা ১১টায় কেন্দ্রটিতে সরেজমিন গিয়ে মাত্র ১৮ জন ভোটার দেখা গিয়েছিল। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা পিন্টু কুমার ঘোষ জানিয়েছিলেন সেদিন সকাল ৮ টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ৪৩৭টি ভোট পড়েছে। বুথে নৌকার পোলিং এজেন্ট ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থী দেখা যায়নি। দুপুর ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রটিতে অবস্থান করে তেমন ভোটার উপস্থিতি দেখা যায়নি। তবে কেন্দ্রের বাইরে নৌকার সমর্থকেরা ভিড় করেছিলেন।
অন্যদিকে চাফরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটের হার ৮৩ দশমিক ৪০ ও দক্ষিণ ভূর্ষি কেচিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮১ দশমিক ৮৮ শতাংশ ভোট পড়েছে।
জানতে চাইলে সামশুল হক চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। তারপরও জনগণের সমর্থন পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী চেয়েছিলেন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। পটিয়ায় সেটি হয়নি। অতি উৎসাহী নৌকার সমর্থকেরা প্রকাশ্যে জালভোট দিয়েছেন।’
জালভোট দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে বিজয়ী প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে ফোন করলেও অন্য এক ব্যক্তি বলেন, ‘স্যার এখন ব্যস্ত আছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন ভূঞা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
মন্তব্য করুন: