প্রকাশিত:
১৪ জানুয়ারী ২০২৪, ১০:৩৯
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনী তফসিল চলতি মাসেই ঘোষণা করা হবে। সংসদের প্রথম অধিবেশনে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম সর্বোচ্চসংখ্যক ১০ জন সংরক্ষিত নারী এমপি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হবেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে স্বতন্ত্র জোটের মনোনয়ন পেতেও জোর তদবিরে নেমেছেন আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পদধারী, ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী, আইনজীবী, উদ্যোক্তা, উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা, শিক্ষক, অভিনেত্রীসহ বিভিন্ন মাধ্যমের তারকারা।
দলীয় ও স্বতন্ত্র জোটের মনোনয়ন নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। এ ক্ষেত্রে সদ্যঃসমাপ্ত সংসদের নারী এমপিদের অনেককে বাদ দিয়ে আনা হতে পারে নতুন মুখ। বর্তমান নারী এমপিদের আমলনামা এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার হাতে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নারী নেত্রীরা গণভবনে যাওয়া-আসা বাড়িয়ে দিয়েছেন।
তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৭১ জন এমপিকে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে যে সংস্কার শুরু হয়েছে, সংরক্ষিত নারী আসনের ক্ষেত্রেও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ১১টি আসনে বিজয়ী জাপার দুটি সংরক্ষিত আসনে দলের দুই কো-চেয়ারম্যান শেরীফা কাদের ও সালমা ইসলামের মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত। এর বাইরে ৪৮ জনের মনোনয়ন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করছে। তাই আওয়ামী লীগের সাবেক এমপিদের পাশাপাশি অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টায় আছেন।
সাধারণ নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনেও বেশ কিছু নতুন মুখ আসবে বলে জানা গেছে।
সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী হতে চান ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও শহীদ স ম আলাউদ্দিনের মেয়ে শিক্ষক লায়লা পারভীন সেঁজুতি। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মাঠে ও তৃণমূলে কাজ করছি। গত তিনটি সংসদ নির্বাচন দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম, কিন্তু পাইনি। সংরক্ষিত আসনেও মনোনয়নপত্র কিনেছিলাম, এবারও কিনব।
বাকিটা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিবেচনার বিষয়।
একই ধরনের মতামত তুলে ধরেন সমাজকল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান জেসমিন প্রেমা। তিনি বলেন, দলীয় নেতাদের পাশাপাশি নারী নেত্রী, অধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সংসদে নেওয়ার বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাই গতবারের মতো এবারও সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের জন্য দলের কাছে আবেদন জানাব।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও একাদশ সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী একাদশ সংসদে কাজ করেছি। জনগণের কাছে প্রধানমন্ত্রীর সেবা পৌঁছে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী চাইলে আবারও দায়িত্ব পালন করব।
সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার পরপরই সংরক্ষিত নারী আসনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহম্মদ খান। তিনি বলেন, সংসদ সচিবালয়ের পাঠানো ভোটার তালিকা অনুযায়ী এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এবার সর্বোচ্চ ১০টি সংরক্ষিত আসন পেতে যাচ্ছেন। এটি নজিরবিহীন।
ইসি সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলের সরকারি গেজেট প্রকাশের পর ৯০ দিনের মধ্যে সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গত ৯ জানুয়ারি নির্বাচনে বিজয়ীদের গেজেট প্রকাশ হওয়ায় আগামী ৮ এপ্রিলের মধ্যে এ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।
আইন অনুযায়ী, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা জোট গঠন করে নারী এমপি নির্বাচিত করতে পারবেন। ফলে বিরোধী দলের স্বীকৃতি পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন নিয়ে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের জোটবদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এবারই প্রথম রেকর্ডসংখ্যক ৬২ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্য থেকে ৬০ জন মিলে ১০টি সংরক্ষিত আসনের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবেন। এর আগে দশম সংসদে ১৬ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মিলে তিনজন সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য নির্বাচিত করেছিলেন। আর একাদশ সংসদে তিনজন সংসদ সদস্য অন্যদের সঙ্গে মিলে একজন নির্বাচিত করেন।
মন্তব্য করুন: