প্রকাশিত:
১৪ জানুয়ারী ২০২৪, ১৭:০৭
শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের পশ্চিম সাতখামাইর গ্রামে অবস্থিত খামারটি। খামারের প্রবেশমুখ থেকেই দেখা যায় থোকায় থোকায় গাছে ঝুলে আছে হলুদ ও সবুজ বর্ণের কমলা। প্রতি থোকায় কমপক্ষে ১০টি করে কমলা। মৌসুমের শেষদিকে প্রায় প্রতিটি গাছে শোভা পাচ্ছে দার্জিলিং জাতের কমলা। আর চায়না জাতের হলুদ-সবুজ বর্ণের মেন্ডারিন কমলার ভারে গাছের ডালপালা নুয়ে পড়ছে।
চার কৃষি উদ্যোক্তা বন্ধু নিজেদের খামারে রোপণ করেছিলেন দুই জাতের ১৫০টি কমলাগাছ। তিন বছরের মাথায় প্রায় ৭০টিতে হয়েছে দারুণ ফলন। প্রতিটি গাছে ২০ কেজি করে অন্তত দেড় হাজার কেজি কমলা উৎপাদনে বেশ খুশি উদ্যোক্তারা।
বাগানের চার উদ্যোক্তা ওয়ালিউল্লাহ বায়েজীদ, ফারুক আহমেদ, আবদুল মতিন ও আইনুল হক। শ্রীপুর উপজেলার টেংরা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামান্য পূর্ব পাশে কমলা বাগানটি চোখে পড়ে। কমলা ছাড়াও বাগানে পাওয়া যায় বিভিন্ন জাতের আম, বলসুন্দরী বরই, সফেদা, জাম্বুরা ও ড্রাগন ফল।
ওয়ালী উল্লাহ বায়েজীদ বলেন, দার্জিলিং ও মেন্ডারিন জাতের কমলা ভারত ও সিলেটের লাল মাটিতে হয়ে থাকে। ২০০০ সালে ঝিনাইদহে কমলার উৎপাদন দেখে চাষে উদ্যোগী হই। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেফিরে দেখি গাজীপুরের লাল মাটিতে কমলা উৎপাদন সম্ভব। এখানে রোপণের পর উৎপাদনের প্রথম বছরই কখনও ২টা আবার কখনও ৩টা করে কমলা ১ কেজি পরিমাণ ওজন হয়েছে। ২০২৩ সালে দার্জিলিং ও চায়না মেন্ডারিন ভালো হয়েছে। গাজীপুরের ফাঁকা লাল মাটির জমি ফেলে না রেখে কৃষি অফিসের সহায়তা নিয়ে ওইসব জায়গায় কমলা উৎপাদন সম্ভব। সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে দেশেই ভালো মানের কমলার উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। কমলার ফুল আসা থেকে শুরু করে হার্ভেস্ট পর্যন্ত কোনো ওষুধ দিতে হয় না। ফুল আসার আগে গাছের সুস্থতার জন্য কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। দেশের মাটিতে যে কমলা হয়, সেগুলো স্বাদও দারুণ। আমাদের মতো আরও উদ্যোগ নিলে দেশের বাইরে থেকে কমলা আমদানির প্রয়োজন হবে না ভবিষ্যতে।
উদ্যোক্তা সবুজ মিয়া বলেন, আমরা চার বন্ধু মিলে বাগানের পরিকল্পনা করি। এখানে শুরুতে আকাশমনির বাগান ছিল। পরবর্তীতে আমরা নাটোরের কৃষিবিদ গোলাম মাওলাসহ অভিজ্ঞ কয়েকজনের কাছ থেকে চারা ও পরামর্শ নিয়ে বাগান শুরু করি। আমরা আশা করছি আগামীতে এর চেয়ে তিনগুণ বেশি ফলন হবে।
উদ্যোক্তারা জানান, খামারের প্রায় দেড় একর জায়গায় দেড়শ কমলার চারা রোপণ করা হয়েছে। ১০০টি দার্জিলিং এবং ৫০টি চায়না মেন্ডারিন জাতের। এ পর্যন্ত দার্জিলিং জাতের ৭০টি গাছে ফলন এসেছে। প্রতিটি গাছে কমপক্ষে ২০ কেজি করে কমলা এসেছে। ২০০ টাকা কেজি দরে দার্জিলিং কমলা বিক্রি করছেন তারা।
প্রায় প্রতিদিনই চার বন্ধুর এই কমলা বাগান দেখতে আসে স্থানীয়রা। বাগান ঘুরেফিরে দেখতে গিয়ে কেউ ছবি তোলে, কেউ গাছ থেকে কমলা ছিড়ে খায়। এমনই একজন দর্শনার্থী বলেন, এখানে এসে ভালো লেগেছে। গাজীপুরের লাল মাটিতে কমলা হয়, এটা অবাক করার মতো। আগ্রহীরা আমাদের এই অঞ্চলে কমলা চাষ করে সাফল্য পেতে পারেন।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বলেন, আমদানিনির্ভরতা কমানোর জন্য অনেক চাষিকে কমলা চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে চাষিদের দার্জিলিং জাতের কমলার চারা সরবরাহ করছি। আমরা আমাদের কৃষি প্রদর্শনী থেকে অনেক চাষিকে দার্জিলিং জাতের কমলার চারা বিতরণ করেছি। সবদিক থেকে বলা যায় শ্রীপুর উপজেলা কমলা চাষে একটা উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় জায়গা।
মন্তব্য করুন: