সোমবার, ২৫শে নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • সংঘর্ষে না জড়িয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের
  • যাত্রাবাড়ী-ডেমরায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
  • ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে অটোরিকশাচালকরা
  • ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন
  • ঢাকার ৫ এলাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’
  • রাজধানীর বেশির ভাগ ফুটপাত দখলে, যানজটের পাশাপাশি বাড়ছে দুর্ঘটনা
  • সম্পদের হিসাব দিতে আরও ১ মাস পাবেন সরকারি কর্মচারীরা
  • শপথ নিলেন নতুন সিইসি ও ৪ নির্বাচন কমিশনার
  • বঞ্চিত কর্মকর্তাদের গ্রেড-১ দেওয়া হবে
  • ৫ বিসিএসে ১৮ হাজার প্রার্থী নিয়োগ দেবে সরকার

গরিব অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে ইসলাম কি বলে ? 

হাফিজ মো: ছালিম আহমদ খান

প্রকাশিত:
১৪ জানুয়ারী ২০২৪, ২৩:০০

মানবতার মুক্তির দূত, বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) মানব সেবার উদ্দেশ্যে আরবের যুবকদের নিয়ে গঠন করেছিলেন "হিলফুল ফুজুল"নামক একটি মানবিক সংগঠন । দরিদ্র ও দুস্থদের সহায়তা করেছেন নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে। কখনো কখনো তিনি নিজে না খেয়ে দরিদ্র ও অসহায়দের খাবার দিয়ে দিতেন । 
তাইতো আমাদের নবী মানব সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন চূড়ান্ত পর্যায়ের। 
আপনারা জানেন হিলফুল ফুজুল এর মাধ্যমে মহানবী সা: গরিব অসহায়দের মাঝে বিভিন্ন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করতেন । 
আপনারা লক্ষ্য রাখবেন আমরা যখন চলাফেরা করি , অনেক মানুষ আমাদেরকে বিভিন্ন প্রকার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে থাকে , তারা আমাদেরকে জিজ্ঞেস করে আমরা যে এই কাজগুলো করছি এটা কি কোন বেনিফিট আছে? , আসলে আমরা স্বেচ্ছাসেবী সমাজ তাদেরকে বলতে চাই আমরা কোন বেনিফিটের জন্য কাজ করি না , আমরা নিজের দেশকে সুন্দর করতে ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে নিজেদের পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার সামাজিক কার্যক্রম করে থাকি । অনেকেই তো আমাদের এই কার্যক্রম গুলো দেখে আমাদেরকে পাগল বলে থাকে , আমাদেরকে বলে যে কোন বেনিফিট না থাকলে আমরা কেন এমন কার্যক্রম করব ।
আসলে তারা ভুলেই জাই দেশের গাছগুলো কাটার কারণে বর্তমান প্রজন্মর এবং আগামী প্রজন্মের অনেক বড় একটি ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে , আগামীতে তাদের পরের প্রজন্মের যারা থাকবে তাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে কি না , কিংবা শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হবে এটা কখনো আমাদের মাথায় আসে না । 
এই গাছগুলো কাটার কারণে তারা যে সমস্যার সম্মুখীন হবে সেটা তারা কখনো বুঝেনা । 
আমাদের এই স্বেচ্ছাসেবী সমাজের প্রিয় তরুণ ভাই ও বোনেরা আগামী প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে কোন স্বার্থ ও বিনিময় ছাড়া দেশকে রক্ষা করতে সব সময় ওই ধরনের সামাজিক কাজগুলো করে থাকে । 
পবিত্র কোরআনের বহু জায়গায় মহান আল্লাহ তায়ালা গরীব, অসহায়, দিনমজুর ও মিসকিনদের খাবার দান করার কথা বলেছেন। 
আল্লাহ তাআলা বলেন,
  وَ هَدَیۡنٰهُ النَّجۡدَیۡنِ ﴿ۚ۱۰﴾فَلَا اقۡتَحَمَ الۡعَقَبَۃَ ﴿۫ۖ۱۱﴾وَ مَاۤ اَدۡرٰىکَ مَا الۡعَقَبَۃُ ﴿ؕ۱۲﴾فَکُّ رَقَبَۃٍ ﴿ۙ۱۳﴾اَوۡ اِطۡعٰمٌ فِیۡ یَوۡمٍ ذِیۡ مَسۡغَبَۃٍ ﴿ۙ۱۴﴾یَّتِیۡمًا ذَا مَقۡرَبَۃٍ ﴿ۙ۱۵﴾ اَوۡ مِسۡکِیۡنًا ذَا مَتۡرَبَۃٍ ﴿ؕ۱۶﴾
‘আমি তাকে দুটি পথ প্রদর্শন করেছি। অতঃপর সে ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি।
আপনি জানেন, সে ঘাঁটি কী? তা হচ্ছে দাসমুক্ত করা কিংবা দুর্যোগ ও সঙ্কটের দিনে এতিম আত্মীয়স্বজন ও ধুলো-ধূসরিত মিসকীনদের অন্নদান করা।’ (সূরা বালাদ, আয়াত : ১০-১৬)’
মানব সেবায় আল্লাহর রাসূলের সাহাবিদের দৃষ্টান্তও কম নয়। নিজেরা অভুক্ত থেকে তারা অন্যদের খাওয়াতেন। একবার আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর কাছে একজন এসে নিজের ক্ষুধার কথা জানালে তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি আজ রাতে তাকে খাওয়াতে পারবে?
তখন এক আনসারী সাহাবী বললেন, আমি খাওয়াব। সাহাবির নিজের ঘরেই ছিল খাবার সঙ্কট। একজন খেতে পারে এতটুকু খাবারই কেবল অবশিষ্ট ছিল। তবুও তিনি লোকটিকে তার বাসায় নিয়ে গেলেন এবং স্ত্রীকে বললেন,এই লোক নবীজী (সা.)-এর মেহমান। আমাদের সাধ্যমতো তাকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। স্ত্রী বলল, ঘরে যা খাবার আছে তাতো যথেষ্ট পরিমাণম নয়! তাছাড়া বাচ্চারাও ক্ষুধার্ত। 
স্ত্রীর কথা শুনে সাহাবি বললেন,বাচ্চাদের না খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দাও। আমি মেহমান নিয়ে খেতে বসলে তুমি ঘরের বাতি নিভিয়ে দেবে। যেন মেহমান আমি খেলাম কি খেলাম না তা বুঝতে না পারে। পৃথিবীর বুকে মানবতার এরচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত আর হতে পারে না।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) যখনই খাবার খেতেন, সঙ্গে একজনকে নিয়ে খেতেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা তার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, 
وَ یُطۡعِمُوۡنَ الطَّعَامَ عَلٰی حُبِّهٖ مِسۡکِیۡنًا وَّ یَتِیۡمًا وَّ اَسِیۡرًا ﴿۸﴾اِنَّمَا نُطۡعِمُکُمۡ لِوَجۡهِ اللّٰهِ لَا نُرِیۡدُ مِنۡکُمۡ جَزَآءً وَّ لَا شُکُوۡرًا ﴿۹﴾
আর তারা আল্লাহকে ভালোবেসে খাদ্য দান করে মিসকিন, অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দিদের। তারা বলে, কেবল শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদের খাদ্য দান করেছি, তোমাদের কাছে আমরা এর জন্য কোনো বিনিময় চাই না এবং কোনো কৃতজ্ঞতাও না।’ (সূরা : দাহর, আয়াত : ৮-৯)
এছাড়াও মানুষদের সাহায্য করার ব্যাপারে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন ,وَاللهُ فِى عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِىْ عَوْنِ أَخِيْهِ، ‘আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদেরকে ততক্ষণ পর্যন্ত সাহায্য করতে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে’। মুসলিম হা/২৬৯৯;
হযরত ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত , একজন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল ,ইসলামের মধ্যে কোন কাজটি উত্তম ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে বললেন 
 أَىُّ الإِسْلاَمِ خَيْرٌ قَالَ تُطْعِمُ الطَّعَامَ،
 ‘তুমি (অভাবীকে) খাদ্য খাওয়াবে’।
অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে ,হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো মুসলিম তার (অসুস্থ) মুসলিম ভাইয়ের সেবায় নিয়োজিত হয়, সে ফিরে আসা পর্যন্ত জান্নাতের ফল বাগানে (তার ছায়ায়) অবস্থান করতে থাকে।’ (সহিহ মুসলিম, ২৫৬৮)
অভুক্ত ব্যক্তিকে আহার্য দেয়ার ফজিলত বলতে গিয়ে রাসূল (সা.) বলেছেন, মানুষের কল্যাণ-সংশ্লিষ্ট যত কাজ আছে, তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম হচ্ছে দরিদ্র ও ক্ষুধার্তকে খাবার দান করা। (বুখারি, হাদিস : ১২)
রাসূল (সা.) আরও বলেছেন, ‘কোনো বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্যরত থাকে, আল্লাহ তায়ালাও ততোক্ষণ তাকে সাহায্য করতে থাকেন।’ (তিরমিজি)
আজ আমাদের আশেপাশে যারা গরীব অসহায় দরিদ্র রয়েছে , যারা চলাফেরা করতে পারেনা কিংবা তাদের কোন আয়ের উৎস নেই , যদি তাদের আয় করার সামর্থ্য থেকে থাকে তাহলে তাদেরকে কোন আয় করার ব্যবস্থা করে দেওয়া , যারা দুবেলা খাবার খেতে পারে না তাদেরকে খাবার খাইয়ে সাহায্য করা , কিংবা কোন বিপদে পড়লে তাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে আমাদের এগিয়ে আসা , এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
মুক্তির ধর্ম ইসলাম আমাদেরকে এটাই শিক্ষা দিয়েছেন । 
আজই আমাদের মোক্ষম সময়, রাসূলের মহানুভবতা, মানবতা ও আতিথেয়তার নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বৃদ্ধ, দিনমজুর, মিসকিন ও শিশুদের মুখে একটুখানি হাসি ফোটানোর!

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর