প্রকাশিত:
১৬ জানুয়ারী ২০২৪, ১৭:৩৯
কাশ্মীর, ভূস্বর্গ ও বরফ—শব্দ তিনটি পর্যটকদের সঙ্গে যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কাশ্মীরের কথা উঠলেই তুষারঢাকা পাহাড়, গাছপালা, রাস্তাঘাটের ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কিন্তু এ বছর পর্যটকদের কাছে কাশ্মীরের সেই চেনা ছবির সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই। এবার ভূস্বর্গ হতাশ করছে পর্যটকদের।
তুষারপাত হলেও তা সামান্য। এই মৌসুমে তাপমাত্রা যেখানে জম্মু-কাশ্মীরের অধিকাংশ অঞ্চলে হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায়, এবার তার বিপরীত। ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে রবিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কার্গিলে যখন এই সময়ে চারদিক শুধু বরফের পুরু স্তরে ঢেকে থাকে, সেই চেনা ছবিও দেখা যাচ্ছে না সেখানে। রবিবার কার্গিলের দ্রাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে জম্মু-কাশ্মীরের যে আকর্ষণ, এবার তা থেকে প্রায় বঞ্চিত হতে হচ্ছে পর্যটকদের।
একদিকে কাশ্মীরে পর্যটকদের বরফ নিয়ে খেলার ইচ্ছা পূরণে এবার ‘ব্যর্থ’ ভূস্বর্গ।
স্কি প্রেমীরাও হতাশ। অন্যদিকে কাশ্মীরের এমন প্রাকৃতিক বদল দেখে স্তম্ভিত আবহবিদরাও। সঙ্গে আশঙ্কা প্রকাশও করেছেন তাঁরা। শ্রীনগরের আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তা মুখতার আহমেদ এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, যা পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, তাতে আগামী গ্রীষ্মে পরিস্থিতি আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। কারণ পাহাড়ে বরফ না জমলে হিমবাহসৃষ্ট নদীগুলোতে পানির টান পড়বে।
এ ছাড়া মহেশ পালাওয়াত নামের এক আবহবিদ জানিয়েছেন, যদি তুষারপাত কম হয় বা একেবারেই না হয়, তা হলে হিমবাহগুলোর গলে যাওয়া অংশ ভরাট হবে না। শুধু তাই-ই নয়, হিমবাহগুলো দ্রুত গতিতে গলতেও শুরু করবে।
অন্যান্য বছর শীতের মৌসুমে যে হারে তুষারপাত হয়, এবার তা অধরা থেকে গেছে। ফলে শ্রীনগর, সোনমার্গ ও গুলমার্গের মতো আকর্ষণীয় পর্যটনস্থলগুলোতে বরফের দেখা না মেলায় হা-হুতাশ করতে হচ্ছে পর্যটকদের।
প্রতিবেদন অনুসারে, কাশ্মীর আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, গোটা ডিসেম্বর ও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ একবারে ‘শুকনা’। আগামী দিনে বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত আবহাওয়া পুরোপুরি শুকনা থাকবে। তিন-চার বছর ধরে তুষারপাতের একটি ধরন দেখা যাচ্ছিল। নির্ধারিত সময়ের আগেই তুষারপাত হচ্ছিল, কিন্তু এবার সেটাও দেখা যাচ্ছে না। নভেম্বর থেকে ‘এল নিনো’র প্রভাব চলছে। আগামী মাসেও এর প্রভাব দেখা যাবে বলে মনে করছেন কাশ্মীরের আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তা।
এল নিনোর প্রভাবে যেমন বৃষ্টিপাত থমকে গেছে, তেমনই তুষারপাতের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। গোটা ডিসেম্বরে ৭৯ শতাংশ ঘাটতি ছিল বৃষ্টিপাতের। যার জেরে তাপমাত্রাও খুব একটা নামেনি। ফলে সেভাবে তুষারপাতও হচ্ছে না।
আবহবিদরা বলছেন, প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম হলো, দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল থেকে উষ্ণ সমুদ্রের পানি পশ্চিমে সরে গিয়ে কেন্দ্রীভূত হয় এশিয়া-অস্ট্রেলিয়া উপকূলের কাছে। এর উল্টো প্রক্রিয়াটাই ‘এল নিনো’। এর ফলে প্রশান্ত মহাসাগরের যে অংশের অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা থাকার কথা, সেটি উষ্ণ হতে শুরু করে। সমুদ্রের সেই অতিরিক্ত তাপ নির্গত হয় সমুদ্রপৃষ্ঠের বাতাসে। তার জেরে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে থাকে।
মন্তব্য করুন: