প্রকাশিত:
১৭ জানুয়ারী ২০২৪, ১১:০৮
বগুড়ার রিকশা চালক ফেরদৌসের এমএ পাশ স্ত্রী সীমানুর খাতুন এখন শিক্ষক। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বগুড়া কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের প্রাথমিক শাখার সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপত্র পেয়েই যোগদান করেছেন। আরও পেয়েছেন ঋণ পরিশোধের অর্থ, বাড়ির টিন ও আউটসোর্সিং করার জন্য ল্যাপটপ।
স্থানীয়রা জানান, স্ত্রীকে উচ্চ শিক্ষিত করতে রিকশা চালানো ফেরদৌসের সংগ্রাম গল্প-উপন্যাসকে হার মানিয়েছেন। বগুড়ার গাবতলীর নশিপুর এলাকার ফেরদৌস মন্ডল টাকার অভাবে ফরম ফিলাপ করতে না পেরে এসএসসি পরীক্ষা দেয়া হয়নি তার। নিজে পড়াশুনা না করতে পারলেও রিকশা চালিয়ে সংসারে খরচ মিটিয়ে স্ত্রী সীমানুরকে উচ্চ শিক্ষিত করেছেন। স্বামীর রিকশায় যাতায়াত করে এম এ পাশ করেছেন তিনি। বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে মাস্টার্স পাস করেছেন সীমানুর। শত বাধা বিপত্তি ও কষ্ট উপক্ষো করে তীব্র শীত বা দাবদাহের মাঝে রিকশার প্যাডেল ঠেলতে পা ও হাত অসাড় হয়ে আসলেও কখনো দমে যাননি ফেরদৌস।
শত প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে রিকশা চালিয়েই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে স্ত্রীর জন্য চাকরি খুঁজছেন তিনি, এমন প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ভাগ্য বদলে যায় প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র পরিবারটির। রিকশা চালক ফেরদৌস মন্ডলের স্ত্রী এখন বগুড়ার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের প্রাথমিক শাখার সহকারী শিক্ষক। চাকরির সঙ্গে মিলেছে সিমানুরের স্বামী রিকশাচালক ফেরদৌস মন্ডলের রিকশা কেনার ঋণ পরিশোধের ২৫ হাজার টাকা, বাড়ি সংস্কারের টিন ও আউটসোর্সিং'র মাধ্যমে রিকশাচালকের উচ্চশিক্ষিত স্ত্রী যেন শক্তিশালী আর্থিক ভিত্তিতে পৌঁছাতে পারে সে জন্য একটি ল্যাপটপ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম সোমবার সীমানুরের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন। নিয়োগপত্র পেয়ে তিনি স্কুলে গিয়ে যোগদান করেন।
সীমানুর খাতুন জানান, তার স্বামী একদিকে রিকশা চালিয়ে সংসার খরচ চালিয়েছেন আবার তার পড়াশুনার খরচও যুগিয়েছেন। মাঝে মাঝেই কলেজে যাওয়ার ভাড়া না থাকলে স্বামী ফেরদৌস তাকে রিকশায় করে নিয়ে যেতেন আবার ক্লাস শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে সাথে করে নিয়ে আসতেন। তার স্বামী তার জন্য যা করেছেন এমন ঘটনা বিরল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে চাকরি দিয়েছেন তাতে তিনি আননন্দিত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য প্রাণভরে দোয়া করছেন তিনি।
রিকশাচালক ফেরদৌস মন্ডল জানান, তিনি নিজে পড়াশুনা করতে পারেননি, টাকার অভাবে। তাই স্ত্রীকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। রিকশা চালিয়ে সংসারের খরচ যুগিয়ে স্ত্রীকে উচ্চ শিক্ষিত করেছেন। এমএ পাস স্ত্রীর চাকরির জন্য তিনি বিভিন্ন জনের দ্বারস্থ হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন এটা তার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের।
বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, গাবতলীর এই দম্পত্তির সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় তা প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দম্পত্তিকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, তাদের পাশে থাকার জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এই পরিবারসহ এমন আরও যারা সামনে এগিয়ে যেতে চায় তাদের পাশে প্রশাসন সবসময় রয়েছে বলে জানান।
মন্তব্য করুন: