প্রকাশিত:
১৭ জানুয়ারী ২০২৪, ১৭:৫৬
একটি দোচালা টিনের ঘরে এক ছেলে, ছেলের বউ ও দুই নাতি নিয়ে বসবাস করেন নারী ইউপি সদস্য। ৫ সদস্যের পরিবারের খরচ যোগাতে একটি ঝুপড়ি দোকান ঘরে চা বিক্রি করেন তিনি। চায়ের ব্যবসার পাশাপাশি করছেন জনসেবাও। এলাকার জনগণ তার জনসেবায় মুগ্ধ হয়ে দুইবার তাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ইউপি সদস্য নির্বাচিত করেছেন।
বলছিলাম সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের ১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য স্বামী পরিত্যক্তা মোছাম্মৎ শামসুন্নাহারের কথা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের সাতুর নতুন বাজারে প্রবেশ করে মাঝের গলিতে গেলেই চোখে পড়ে ইউপি সদস্য শামসুন্নাহারের চায়ের দোকানটি। তিনি নিজেই চা বানাচ্ছেন। তার হাতের চায়ের স্বাদের ভিন্নতা থাকায় চা পিপাসুদের ভিড় তার ঝুপড়ি দোকানে লেগেই আছে।
ইউপি সদস্য শামসুন্নাহার ২০২২ সালে জনগণের অনুরোধে ইউপি নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনে অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয়বার ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। এর পূর্বে ২০১১ সালে প্রথম বারের মতো ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়ে সফলতার সাথে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
ইউপি সদস্য শামসুন্নাহার জানান, সাতুর গ্রাম আমার জন্মস্থান। পিতা-মাতার স্মৃতিজড়িত এ গ্রামে একটুকরো ভিটা ক্রয় করে সেখানে একটি টিনের চালাঘর নির্মাণ করেছিলাম জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার বহু বছর আগে।
একমাত্র ছেলে ঝিনুক মোটরসাইকেল ড্রাইভার। তার সামান্য আয়ে সংসারের খরচ সংকুলান হয় না। তাই জীবন-জীবিকার তাগিদে স্থানীয় সাতুর নতুন বাজারে নিজেই চায়ের দোকান চালাচ্ছি।
তিনি বলেন, ‘এলাকার মানুষের অনুরোধ ও সম্মতিতে ইউপি সদস্য পদে নির্বাচন করি। সেই নির্বাচনে এলাকার ভোটাররা নিজেরাই প্রচার-প্রচারণা করেছেন।
তারাই ভোটের খরচ জুগিয়েছেন।’
বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের দাতিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, ‘মহিলা মেম্বার শামসুন্নাহার একজন পরিচ্ছন্ন জনপ্রতিনিধি। তিনি টানা দুবার ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সৎভাবে তার দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বর্তমান ইউপি সদস্য হয়েও চা বিক্রি করে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করেন।’
বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ বলেন, ‘শামসুন্নাহার আমার পরিষদের একজন ভালো জনপ্রতিনিধি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে চা বিক্রি করে তার সংসার চালাচ্ছেন। জনগণ তাকে দুবার ইউপি সদস্য নির্বাচিত করেছেন। তিনি জীবন যুদ্ধে জয়ী একজন সফল নারী ইউপি সদস্য।’
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অতীশ দর্শী চাকমা বলেন, ‘নারী ইউপি সদস্য শামসুন্নাহারের কথা শুনেছি। তার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মন্তব্য করুন: