প্রকাশিত:
২১ জানুয়ারী ২০২৪, ১৭:২০
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ফাইনালের ভাইভা পরীক্ষায় মুখমণ্ডল প্রদর্শন করতে বলায় ভাইভায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজা মোবাশশারা তুবা। সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ভাইভায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। ওই শিক্ষার্থী এখনও ভাইভা দিতে পারেননি। এতে ক্যাম্পাসজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ ডিসেম্বর বিভাগটির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষের ভাইভায় নেকাব পরিহিত অবস্থায় অংশ নেয় এক ছাত্রী। এ সময় ভাইভা বোর্ডের শিক্ষকরা তার পরিচয় নিশ্চিতের জন্য নেকাব খুলতে বলেন। এ সময় তিনি নেকাব খুলতে অস্বীকৃতি জানান এবং প্রয়োজনে নারী শিক্ষকদের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু ভাইবা বোর্ডের সকল শিক্ষকদের সিদ্ধান্তে নেকাব পরিহিত অবস্থায় ভাইভা নিতে অস্বীকৃতি জানায় শিক্ষকগণ।
এদিকে রোববার (২১ জানুয়ারি) দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন চত্বরে এ ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ইবি শাখা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, ১৩ ডিসেম্বর আমাদের ফার্স্ট ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষার ভাইভা ছিল। যেহেতু আমি আগে থেকেই নেকাব করি, ওইদিন নেকাব করেই ভাইভায় গিয়েছিলাম। স্যাররা বললো আমাকে নেকাব না খুললে ভাইবা দিতে দিবে না। তারপর আমি নেকাব খুলতে অসম্মতি জানাই। আইডিন্টিফিকেশনের জন্য নারী শিক্ষক দিয়ে চ্যাকিং এর ব্যাপারে বলেছিলাম। একজন ম্যাম উপস্থিত থাকার পরেও আমাকে আলাদাভাবে নারী শিক্ষক দিয়ে আইডিন্টিফাই করতে অসম্মতি জানায় ভাইবা বোর্ড।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরো জানান, শিক্ষকরা এমনও বলছে যে নেকাব না খুলে ভাইভা নিতে দিবে না এবং পরীক্ষায় ফেইলও করতে পারো সেজন্য। আমি বারবার রিকুয়েষ্ট করার পরও স্যাররা এ বিষয়ে সম্মত হয়নি। স্যারদের মূলত উদ্দেশ্য ছিলো যেন আমি নেকাব খুলে ভাইভা দেই। বলতে গেলে তাদের আইডিন্টিফিকেশনের কোনো ইনটেনশনও ছিল না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ভাইবা বোর্ডে তাকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান থেকে একাধিকবার বোঝানো হয়েছে। প্রথম দফায় প্রায় ২৫ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় এসেও সে নেকাব খুলতে অস্বীকৃতি জানায়৷ পরবর্তীতে আমরা তার বাবাকেও ইনফর্ম করি, তিনি তার সন্তানকে আরেকটি সুযোগ দিতে বলেন। সে অনুযায়ী ক্যাম্পাস খোলার পর ১৭ জানুয়ারি সে ৩ জন বান্ধুবি নিয়ে ভাইভা দিতে আসলেও পরিচয় শনাক্তে অস্বীকৃতি জানায়। সেদিনও সে চাইলে ভাইভা দিতে পারতো কিন্তু সে রাজি না হওয়ায় তার ভাইবা নেওয়া হয়নি।
বিভাগের সভাপতি শিমুল রায় বলেন, রেজাল্ট দেওয়ার আগ পর্যন্ত তার ভাইবা দেওয়ার সুযোগ থাকবে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা করেছি কিন্তু তাকে রাজি করাতে পারিনি। আমরা তাকে বলেছিলাম যে ভবিষ্যতে যদি নারী শিক্ষিকা কেউ না থাকে, তখন তাকে সেভাবেই ভাইভা দিতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য কখনোই তার নেকাব খোলানো ছিল না। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল তাকে স্টুডেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা।
উক্ত বিভাগের শিক্ষক উম্মে সালমা লুনা বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা তো এডমিশন টেস্টে মুখ, কান খুলেই এক্সাম দিয়েছেন। আমাদের ক্লাসরুমেও অনেক শিক্ষার্থী নেকাব করেন, আমরা কখনোই তাদের বিরূপ কিছু বলি না। এখন, ভাইভার দিন ওই শিক্ষার্থীকে দুই দফায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট বোঝানো হয়েছে। কিন্তু সে রাজি হয়নি।
ফিমেল টিচার দিয়ে আইডিন্টিফাই করার প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রশাসন কাছ থেকে এমন লিখিত কোন নির্দেশনা পায়নি। প্রশাসন যদি এব্যাপারে কোন নির্দেশনা দেয় তবে আমরা অবশ্যই তা পালন করব।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলিনা নাসরিন বলেন, মানুষ ধর্ম কর্ম করবে আমরা সেখানে বাধা দিব না। তবে যে-কোনো ফ্যাকাল্টি ই হোক না কেনো তাকে ভাইবায় আইডিন্টিফাই করার ব্যবস্থায় আসতে হবে। যেভাবেই হোক না কেনো। অনেকে আছে যারা ফিমেল টিচার ছাড়া করতে চায় না সেক্ষেত্রে ফিমেল টিচারকে দিয়ে করানো হবে।
যদি বোর্ডে ফিমেল টিচার না থাকে সেক্ষেত্রে জানতে চাইলে বলেন, সেজন্য বিকল্প ব্যবস্থা আছে। তার বান্ধবীরা থাকবে বা কোনো ম্যামকে এনে তা করা যাবে। এইজন্য যে আমরা পরীক্ষা নিবো না বা পরীক্ষা নেওয়া যাবে না এমন না বিষয়টা।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, এই কাজটি উচিৎ হয়নি। আমাদের সামনেও অনেক সময় এরকম শিক্ষার্থীরা থাকে আমরা সবসময়ই নারী শিক্ষকের মাধমে তাদের আইডেনটিফাই করেছি। ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে গেলে তাদের পেনাল্টি হতে পারে।
মন্তব্য করুন: