দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রথম কার্যনির্বাহী সংসদের সভা ডেকেছে আওয়ামী লীগ। আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় জাতীয় নির্বাচন পর্যালোচনার পাশাপাশি আগামী দিনের করণীয় নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেবে ক্ষমতাসীনরা। একই সঙ্গে নির্বাচনে দলীয় ও দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরোধ নিরসন নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে।
পাশাপাশি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের জেলা সফর এবং কেন্দ্রীয় এবং জেলা-উপজেলায় বর্ধিত সভা নিয়েও আলোচনা করবে আওয়ামী লীগ। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের কৌশল চূড়ান্ত হতে পারে আজকের সভায়। এছাড়া দ্রব্যমূল্যসহ সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে আলোচনা হবে কার্যনির্বাহী সংসদের সভায়। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও দলীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে এটা প্রথম সভা। ফলে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সভায় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যে বিশাল বিজয় সেটা নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া নির্বাচনের আগে ও পরের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হবে। দলকে আরও ঐক্যবদ্ধ করে সামনে দিকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে।
তিনি আরও বলেন-জেলা, উপজেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বর্ধিত সভা করা নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে। জেলা সফর নিয়ে আলোচনা করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সামনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। সেখানে কিভাবে নির্বাচন হবে, তার কৌশলগত বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। যারা নির্বাচন করে না, তারা না এলে প্রতীক ছাড়াও নির্বাচন করা যেতে পারে কিনা তা নিয়ে কথাবার্তা হবে। একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন এমপি বলেন, আশা করছি নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বিক বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারসহ পঞ্চমবারের মতো সরকার গঠন করেছেন। তার নেতৃত্বে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। এ যাত্রায় সামনের দিনের করণীয় বিষয়ে তিনি প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন বলে আশা করছি।
বিএনপি ও তাদের মিত্ররা ভোট বর্জন করায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে এবার দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও মাঠে রেখেছিল আওয়ামী লীগ। এতে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে অনেক জায়গায় বিভক্ত হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূল। শুরু হয় নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত। যা ভোটের পরেও অব্যাহত রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এখনো ঘটছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষের ঘটনা। নির্বাচনে পরে এখন বিষয়গুলো নিরসন করতে চায় আওয়ামী লীগ। আজকের সভায় এ বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে বলে জানা গেছে।
সারা দেশে ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে প্রায় সাড়ে চারশ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করার উপযুক্ত। এবারও কয়েক ধাপে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মার্চে প্রথম ধাপের নির্বাচন শুরু হতে পারে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রস্তুতি ও কৌশল কি হবে সে বিষয়ে আজকের সভায় বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জন করতে পারে বিএনপি। ফলে বিষয়টি মাথায় রেখেই নিজেদের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রার্থী না দিয়ে নির্বাচন সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে নাকি জাতীয় নির্বাচনের মতো দলীয় প্রার্থী দিলেও স্বতন্ত্রদের বিষয়ে নমনীয় থাকবে তা নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে আওয়ামী লীগের আজকের সভায়।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, নির্বাচনের পরে দলের নেতাকর্মীদের করণীয়, সামনে উপজেলা নির্বাচন, তাছাড়া রমজানে মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, দ্রব্যমূল্যের দিকটাও থাকবে, সেদিকে খেয়াল রাখাসহ নানা বিষয় উঠবে বৈঠকে। একই সঙ্গে নির্বাচন পরবর্তী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমসাময়িক নানা বিষয়ও আলোচনা সভায় উঠে আসবে বলেও মনে করেন তিনি।
মন্তব্য করুন: