নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার পরিচালক শহিদুল ইসলাম লিটন গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা। তিনি উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনার পর আব্দুল কাইয়ুম (৪৩) নামে ব্যাংকটির রায়পুরা উপজেলার ৩০টি আউটলেট (এজেন্ট শাখা)এরিয়া ম্যানেজারের দ্বায়িত্বে ছিলেন। তিনি উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর নগর (মধ্যপারা) গ্রামের মো আব্দুল আজিজের ছেলে। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের মানসিক চাপে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
আজ মঙ্গলবার রাতে ময়না তদন্ত শেষে নিজ বাড়িতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। সন্ধ্যায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে রায়পুরা থানায় অভিযোগ দেন। নিহত কাইয়ুম সোমবার রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যু বরণ করেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার কর্তৃপক্ষের লোকজন তাকে বিভিন্ন ভাবে মানসিক গালমন্দ চাপ প্রয়োগ করেন। এ নিয়ে গত শনিবার তিনি মানসিক বিপর্যস্ত হয়ে নিজ বাড়িতে বিষ পান করেন। বিষ পানের পর স্বজনরা তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার প্রথমে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়েগেলে কর্তৃপক্ষ চিকিৎসক ভাগলপুর জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেন। ওইখানকার চিকিৎসকরা উন্নয়ন চিকিৎসার জন্য ঢাকায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সোমবার দিবাগত রাতে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহত আব্দুল কাইয়ুম এর স্ত্রী আমেনা বেগম।
নিহতের স্ত্রী আমেনা বেগম মেয়ে কনক ও স্বজনরা জানান, আলগী বাজার আউটলেট (এজেন্ট শাখা)র গ্রাহকদের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার পর থেকেই কাইয়ুমের উপর মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করেন ব্যাংকটির আর.এম. দেওয়ান মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সিএসবিও আনোয়ার ফারুক তালুকদার, এমডি শিরিন ও আবুল কাসেম। এক পর্যায়ে কর্তৃপক্ষ তাকে ডেকে নিয়ে গ্রাহকদের সকল টাকা পরিশোধ করতে হবে এ সংক্রান্তে আব্দুল কাইয়ুম এর কাছ থেকে জোরপূর্বক ভাবে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। মোবাইলে বারবার কর্তৃপক্ষের এমন মানসিক চাপ সইতে না পেরে কাইয়ুম শনিবার সকাল ৮ টায় নিজ বাড়িতে আত্মহত্যার চেষ্টায় বিষপান করে। বিষপানের কিছুক্ষন পর স্বজনরা টের পেয়ে প্রথমে কাইয়ুমকে স্বজনরা ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যায়। সেখান থেকে ভাগলপুর জহিরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওই খানেও তার অবস্থার অবনতি দেখে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কাইয়ুম সোমবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় মৃত্যু বরন করেন।
কাইয়ুমের মৃত্যুর ব্যাপারে ব্যাংকটির কর্মকর্তা (আর.এম) রেদোয়ান মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে দায়ী করছেন নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী। এ ঘটনার পর থেকে ব্যাংকটির অন্যান্য কর্মকর্তারা নিজেদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায় বলে অভিযোগ নিহতের স্বজনদের।
এদিকে ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা জানান, ডাচ-বাংলা ব্যাংককে বিশ্বস্ত হিসেবে অনেকেই এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিলেন। তাদেরকে শাখা থেকে জমা রশিদও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকের উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটন গ্রাহকদের না জানিয়ে কৌশলে টাকা আত্মসাৎ করে রোববার শাখাটি তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায়। টাকা সহ কর্মকর্তা লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অতিদ্রুত তাকে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
এবিষয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা (আর.এম) রেদোয়ান মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগযোগ করতে গেলে নাম্বারটি বন্ধ থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ডাচ-বাংলা ব্যাংক নরসিংদীর ম্যানেজার ইনচার্জ মো. আনিসুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যায় এবং হেড অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। রায়পুরা থানার পরিদর্শক(তদন্ত)মীর মাহাবুবুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এরিয়া ম্যানেজারের আত্মহত্যার বিষয়ে নিহতের লোকজন এসেছিলেন। টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার ব্যাপারে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি।
উলেখ্য, রায়পুরা উপজেলার আলগী বাজারের সততা এন্টারপ্রাইজ নামের এই এজেন্ট ব্যাংকের কার্যালয়ে গত বৃহস্পতিবার তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান শাখা পরিচালক শহিদুল ইসলাম লিটন। সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, শাখা কার্যালয়ের সামনে ভিড় করছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা। অনেকেই অনলাইনে নিজেদের হিসাবে টাকা দেখতে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় এজেন্ট ব্যাংকিং ইনচার্জ ও অন্য কর্মচারীদের কাছে নিজেদের জমা রাখা টাকা দাবি করেন গ্রাহকেরা।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী গ্রাহক সূত্রে জানা গেছে, সর্বত্রই ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সুনাম রয়েছে। বিশ্বস্ত হিসেবে অনেকেই রায়পুরার আলগী বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিলেন। তাঁদেরকে শাখা থেকে ভূয়া জমা রসিদও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকের উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটন এক হাজারের বেশি গ্রাহকের টাকা মূল শাখায় জমা না দিয়ে কৌশলে নিজের অ্যাকাউন্টে নেন। এভাবে অন্তত কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে তিনি পালিয়ে যান বলে দাবি গ্রাহকদের। এ সময় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দ্রুত আটক করে টাকা আদায়সহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন ভুক্তভোগীরা। এদিকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রতারক উদ্যোক্তার নামে সাধারণ ডায়েরি ও আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
মন্তব্য করুন: