মঙ্গলবার, ২৬শে নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • সংঘর্ষে না জড়িয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের
  • যাত্রাবাড়ী-ডেমরায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
  • ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে অটোরিকশাচালকরা
  • ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন
  • ঢাকার ৫ এলাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’
  • রাজধানীর বেশির ভাগ ফুটপাত দখলে, যানজটের পাশাপাশি বাড়ছে দুর্ঘটনা
  • সম্পদের হিসাব দিতে আরও ১ মাস পাবেন সরকারি কর্মচারীরা
  • শপথ নিলেন নতুন সিইসি ও ৪ নির্বাচন কমিশনার
  • বঞ্চিত কর্মকর্তাদের গ্রেড-১ দেওয়া হবে
  • ৫ বিসিএসে ১৮ হাজার প্রার্থী নিয়োগ দেবে সরকার

নরসিংদীর বোরো চাষে বুনছেন স্বপ্ন ব্যাস্ত চাষীরা

হারুনূর রশিদ ,নরসিংদী

প্রকাশিত:
২৪ জানুয়ারী ২০২৪, ১৬:৩৪

চলছে ইরি-বোরো মৌসুম। নরসিংদী জেলার চাষিরা কুয়াশামাখা তিব্র শীত উপেক্ষা করে ভোর থেকে সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত বোরো চাষের জমি প্রস্তুত ও চারা রোপণ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতি বছরই বোরো ধানের আবাদ হয় এ জেলায়। তবে ধানের আবাদ খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশী জাতের ধানে লোকসানের কারণে উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের ধান আবাদ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেচ্ছে। এতে করে যেমন এ জেলায় খাদ্যশস্য উৎপাদনে উদ্বৃত্তের ধারাবাহিকতা রক্ষা হচ্ছে, অধিক ফলন ও লাভের আশায় বোরো চাষে স্বপ্ন বুনছেন তারা।

সরেজমিন জেলার বিভিন্ন উপজেলার নারায়নপুর, শিবপুর মুছাপুর, মির্জাপুর, মহেষপুর, মরজাল, বাঁশগাড়ী, পাড়াতলী, শ্রীনগর, অলিপুরা, আমিরগন্জ, আদিয়াবাদ, উত্তর বাখর নগর, পলাশতলী, রায়পুরাসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে মাঠে মাঠে ধানের কচি চারার সবুজ গালিচা, কোথাও কোথাও কুয়াশায় বীজতলায় চলছে পরিচর্যা। পাশাপাশি চাষীরা জমির আইল কোদাল দিয়ে সমান করা, সেচের জন্য ড্রেন নির্মাণ, পানি সেচ, সার প্রয়োগ, ট্রাক্টর,পাওয়ার টিলার দিয়ে হালচাষ, মই দিয়ে চলছে জমি সমান করার কাজ। আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে বীজ উঠানো ও প্রস্তুতকৃত জমিতে চারা রোপণ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন চাষিরা। আমন ধানের ফলন এবং ভালো দাম পাওয়ায় এবার কৃষকদের বোরো আবাদে আগ্রহ বেড়েছে।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫৬হাজার ৫১০হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫১ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল(উফশী)এবং ৫হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ৫০হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বোরো ধান আবাদরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের মধ্যে উচ্চফলনশীল (উফশী) ৯১.০৬ ভাগ, হাইব্রিড ৮.৮৫ ভাগ এবং স্থানীয় জাতের বোরো ধান মাত্র ০.০৯ ভাগ।


নরসিংদী সদর উপজেলায় ৮ হাজার ৫২০ হেক্টর, পলাশে ৪হাজার ১৯২হেক্টর, শিবপুরে ১০হাজার ১৬৫ হেক্টর, মনোহরদীতে ১১হাজার ৪৮হেক্টর, বেলাবতে ৫হাজার ৭৬৫ হেক্টর এবং রায়পুরা উপজেলায় ১৬হাজার ৮২০হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বোরো চাষাবাদের জন্য বীজতলা তৈরি করা হয়েছে প্রায় ৮৪৫হেক্টর জমিতে।

বোরো আবাদে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়ায় মজুরিও বৃদ্ধি পেয়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় খেটে খাওয়া দিন মজুর শ্রমিকরাও দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসে জীবিকা নির্বাহের লক্ষে প্রচন্ড শীতকে উপেক্ষা করে মাঠে কাজ করছে। মজুরি ভালো পেয়ে আনন্দিত তারা।

পূর্ব হরিপুর গ্রামের কৃষক মুজিবুর রহমান, বাদল, আঃ রহমান বলেন, পুরোদমে ধান লাগাচ্ছি। শ্রমিক সংকট জমি লাগাতে জনপ্রতি শ্রমিককে ৫০০-৬৫০ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। শ্রমিকের দাম বেশি থাকায় নিজেও দিন-রাত পরিশ্রম করতে হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ও বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

আব্দুর রহিম, রহিম মিয়া, হারুন, আব্দুস সালামসহ কয়েকজন কৃষক জানান, উপযুক্ত সময়ে প্রচন্ড ঠান্ডায় বোরো ধান লাগানো শুরু করতে পারছিনা। ঠান্ডায় বীজ তলা পরিপক্ব হয়ে উঠে নি। এ বছর সময় একটু সময় বেশি লগছে। কৃষি অফিস থেকে সর্ব সময় সার্বিক সহযোগিতা পেয়ে থাকি। সরকারি ধানবীজ ও সারও পেয়েছি। এতে করে আমার অনেক উপকার হয়েছে।


এসময় শত ব্যস্ততায় মাঝে কথা হলো চাষী নজরুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পানি সেচ ও চাষে গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। ধান চাষ নিয়ে বিপাকে আছি। তবুও আশায় বুক বেঁধে ধান রোপণ করেছি। ভালো ফলনের আশায় কাজ করে যাচ্ছি।
মুছাপুরের চাষী আব্দুস সালাম বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধিতে ধান চাষ অনেক খরচের বিষয়, আমাদের এই অঞ্চলের প্রায় কৃষকই বর্গা চাষী। এদের নিজের জমি নেই, এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে অন্যের জমি লিজ নিয়ে চাষ করে থাকে। এমনিতেই যে টাকা খরচ করে ধানের চাষ করা হয় ধান বিক্রয় করে সে টাকা আয় হয় না। এছাড়াও প্রতিটি জমিতে পানি সেচের সুব্যবস্থা না থাকায় বেশি টাকা ব্যয় করে পানি সেচ দিয়ে চাষাবাদ করার সামথ্য সবার নেই। চলতি মৌসুমে আমি ৫ বিঘা জমিতে চারা রোপন করেছি। রোপনের সময় দিগুণ টাকা খরচ হয়েছে। দাম নিয়ে খুবই চিন্তিত।


মনোহরদী উপজেলার খিদিরপুর ইউনিয়নের কালিরচর গ্রামের কৃষক হামিদ উদ্দিন বলেন, বোরো ধান আবাদ করার জন্য জমি প্রস্তত করেছি। কিন্তু বিদ্যুৎ ও সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বোরো চাষে এবার খরচ বেশী হবে। তাছাড়াও সেচ মেশিন মালিকরা গতবারের চেয়ে এবছর অতিরিক্ত ৮০০/৯০০ টাকা বেশী দাবী করেছেন। একবিঘা জমিতে চাষ করতে বর্তমানে ট্রাক্টর খরচ-১ হাজার ৮০০ টাকা, চারা বাবদ-২ হাজার টাকা, সার ৮০০ টাকা, চারা রোপণ বাবদ মুজুরী বাবদ ৪ হাজার টাকা, পানি সেচ ৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং চারা রোপনের ১৪ দিন পর পূনরায় সার-কীটনাশক বাবদ ৬০০ টাকা, লেবার খরচ ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং পরিশেষে ধান কাটাবাবদ লেবার খরচ ৫ হাজার টাকাসহ মোট খরচ হয় ১৯ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু গত বছর একই জমি চাষ করতে খরচ লেগেছে ১৪ হাজার টাকা।

রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের বালুয়াকান্দী গ্রামের কৃষক তাজুল ইসলাম জানান, তিনি আগে দেশী জাতের ধানের আবাদ বেশী করতেন। তবে গত তিন বছরে সার, কীটনাশক, বীজ, তেল ও দিনমুজুরসহ ধান আবাদে সব ধরনের সরঞ্জাম অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ায় এবং দেশী ধান আবাদে লোকসানের কারণে দেশী ধানের আবাদ বাদ দিয়েছেন। স্থানীয় ধানের চাইতে উফশী ধান আবাদে দ্বিগুনেরও বেশী ফলন পাওয়া যায় এবং আবাদ খরচ একই হওয়ায় এখন উচ্চফলনশীল (উফশী) ধান আবাদ করছেন তিনি।


জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আজিজুর রহমান জানান, চলতি বছর জেলার ৬টি উপজেলায় ৫৬ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চফলনশীল (উফশী) ৫১হাজার ৪৬০হেক্টর, হাইব্রিড ৫ হাজার ও স্থানীয় জাতের ৫০হেক্টর। জেলার প্রতিটি উপজেলায় সরেজমিনে গিয়ে কৃষকদের সব ধরণের সহযোগিতা করে থাকি।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর