প্রকাশিত:
২৪ জানুয়ারী ২০২৪, ১৬:৪৪
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলগুলোতে সিট বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। এমনকি সেই অর্থের ভাগ শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের আস্থাভাজনদের হাতে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
সিট বাণিজ্য নিয়ে আল আমিন পিয়াস নামের এক ছাত্রলীগকর্মীর কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড সোমবার সাংবাদিকদের হাতে আসে। ওই অডিওতে পিয়াসের বক্তব্যে সিট বাণিজ্যের প্রমাণ এবং টাকা ভাগাভাগির কিছু বিষয় উঠে এসেছে।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগকর্মী পিয়াস পদার্থবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। জানা গেছে, তিনি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী এবং তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিল আহম্মেদের সঙ্গে হল দেখাশোনা করেন।
অডিও রেকর্ডে পিয়াসকে বলতে শোনা যায়, ‘একটা সিটের বিনিময়ে আট হাজার করে দিতে হবে।...এর আগে তো সাত-আট করেই চলত...আমরাও ওই আট (আট হাজার) করে তুলতেছি।
কিন্তু তোর সিটের গ্যারান্টি আমি দিব। তোর সম্পূর্ণ দায়ভার আমার। আমরা যে কাজ করব, সেগুলো শিউর সিট।’
এভাবে টাকার বিনিময়ে সিট নিলে ‘সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতি করা লাগবে না’ বলেও প্রতিশ্রুতি দিতে শোনা যায় তাঁকে।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো প্রগ্রাম করতে হবে না। তবে ন্যাশনাল প্রগ্রামগুলোতে শুধু অ্যাটেন্ড করবি। আমার ক্ষেত্রে যেমন হইছে, আমি টাকা দিয়ে হলে উঠছি। কিন্তু পরে আমাকে পলিটিকস করতে হচ্ছে। তোর ক্ষেত্রে এ রকম হবে না।
’
এক পর্যায়ে এই ছাত্রলীগকর্মী বলেন, ‘হলের রুমওয়ার্ক, ছেলেদের প্রগ্রামে ডাকা এবং কোন সিটগুলো খালি হচ্ছে তা শাকিলের (হলের সাংগঠনিক সম্পাদক) অধীনে তিনিই দেখাশোনা করেন।’
সিট বাণিজ্যের এ টাকার অংশ কয়েক ভাগে ভাগ হয় বলে জানা যায় অডিওর মাধ্যমে। পিয়াস বলেন, “শাকিল ভাই টাকা পাবে। আমি পাব না। শাখায় কিছু টাকা যাবে ‘মাল খাওয়ার’ জন্য। তবে শাকিল ভাই শেষে খুশি হয়ে আমাকে কিছু দিতে পারে।”
সিট বাণিজ্যের টাকার অংশ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর কাছে যাবে কি না সেই বিষয়ে তিনি বলেন, “বাবু ভাই নিজে খাবে না, তার আশপাশের যে ‘চ্যালা’ (অনুসারী) আছে তারা হালকা কিছু রাখবে। আর কিছু শাকিল ভাইয়ের কাছে থাকবে। তবে আমাকেও কিছু দিতে হবে। কারণ ভাই তো একা হল চালাচ্ছে না, আমিও চালাচ্ছি।”
তবে হলগুলোতে সিট বাণিজ্য না করার জন্য শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে কড়া নির্দেশনা আছে বলেও স্বীকার করেন আল আমিন পিয়াস। কথার এক পর্যায়ে টাকার বিনিময়ে হলে ওঠার বিষয়টি গোপন রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগকর্মী পিয়াস বলেন, ‘এগুলো সব মিথ্যা ইনফরমেশন। আমাকে ফাঁসানোর জন্য এগুলো করা হচ্ছে। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে যে আমরা সিট বাণিজ্য করেছি বা টাকার বিনিময় কাউকে তুলেছি, তাহলে যে শাস্তি দেওয়া হবে তা মাথা পেতে নেব।’
এদিকে বিষয়টি অস্বীকার করেন শহীদ শামসুজ্জোহা হলের সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিল আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি হলে আছি। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারী আমরা যারা আছি, তারা কেউই সিট বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত না।’
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা হিল গালিব বলেন, ‘সিট বাণিজ্যের যে প্রমাণ আছে তা নিয়ে আমি শাখা সভাপতির সঙ্গে কথা বলব। তিনি যদি ব্যবস্থা না নেন, তাহলে আমি সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। আর যদি সেটাও না হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে বিষয়টি অবহিত করব।’
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘শাকিল ও পিয়াস কেউ দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়। ওই হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মোমিন। সে হলে না থাকায় তারা হল দেখাশোনা করছে। তাদের বিরুদ্ধে এ রকম কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করব।’
মন্তব্য করুন: