প্রকাশিত:
২৫ জানুয়ারী ২০২৪, ১৬:০৯
নরসিংদীতে চলতি মৌসুমে ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় অন্য অন্য সবজির পাশাপাশি শিম চাষে ঝুঁকছে চাষিরা। উৎপাদন খরচ কম বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় তিনগুণ লাভে বেজায় খুঁশি এখানকার চাষীরা।
জানা গেছে, নরসিংদী জেলা সবজি চাষাবাদ ও রপ্তানিতে ব্যাপক প্রসিদ্ধ। এখানকার সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় তা সরবরাহে বিশেষ ভূমিকা অপরিসীম। তাছাড়া নরসিংদীর সবজি বহির্বিশ্বেও রপ্তানি হয়ে আসছে।
বৃহস্পতিবার কয়েকটি উপজেলা শিবপুরের যশোহর, বেলাব নারায়নপুর, বারৈচা , রায়পুরার মরজাল, আদিয়াবাদ, উত্তর বাখরনগর, মির্জানগর, পলাশতলী, বাঙ্গালীনগর, নয়াচরর প্রভৃতি এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিগন্ত জোরা বিস্তীর্ণ মাঠে সারি সারি শিম খেতে বেগুনি রং এর ফুলে ফসলে চেয়ে গেছে। ব্যাপক হারে শিমের চাষ হয়েছে। চাষিরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খেত থেকে বিক্রির উপযোগী ফসল উঠিয়ে বাজারে বিক্রির জন্য খাঁচায় জমিয়ে রাখছেন।
চাষিরা জানান, মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি শিম ১০০/১২০ টাকায় বিক্রি হয়। বর্তমানে প্রতি কেজি শিম পাইকারি ৫০/৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকা সিলেট মহাসড়কের নারায়নপুর, বারৈচা, জঙ্গি শিবপুর রাধাগন্জ বেশ কয়েকটি বাজার গুলো ঘুরে জানা গেছে ,শীত মৌসুমে সবজি দাম বেশি থাকায় প্রতি কেজি শিম পাইকারি ৫০/৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, রায়পুরা উপজেলায় চলতি বছর ১হাজার ৪০হেক্টর জমিতে বারী শিম-২, আশ্বিনী, টংগীয়া, নলডুক, হাতিরকান জাতের শিম চাষাবাদ হয়েছে।
এ বছর শীত ঘন কুয়াঁশা, পঁচনরোগ, ছত্রাকসহ নানা রোগ বালাই কিছুটা কম থাকায় চাষিরা অল্প পুঁজিতে অধিক লাভে বেজায় খুশি।সামনের বছর চাষাবাদ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগ।
চাষি জমিনা খাতুন বলেন, 'পুরুষদের পাশাপাশি আমরাও ঘর সামলিয়ে কৃষি কাজে সহযোগিতা করে থাকি। কৃষি অফিসাররা মাঝে মধ্যে আসে। তবে তারা যদি রোগবালাইর সময় পরামর্শ দিতো তাহলে আরও কিছুটা উপকৃত হতাম।'
শেরপুর গ্রামের শিম চাষী গোলাম কিবরিয়া। তিনি বলেন, ৪০শতক জমিতে সীম চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত এতে তার খরচ হয়েছে ২৫/৩০ হাজার টাকা। এ মৌসুমে ফলন ও দামে ভালো পাওয়ায় ৭০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। সিজন শেষে প্রায় ১লাখ টাকা বিক্রি আশা করছি।
উত্তর বাখরনগর গ্রামের শিম চাষি স্বপন বিশ্বাস বলেন, 'ঘন কুয়াশায় শিমের ছত্রাকজনিত রোগ দেখা দেয়। কিছু শিম নষ্ট হয়ে ঝরে পড়ে। এ বছর কিছুটা কম। ক্ষতিগ্রস্ত থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে সার পানি নিড়ানি দিতে হয়। তারপর আবার সার কীটনাশকের দাম বেশি। এতে করে খরচ বেশি হচ্ছে। যার ফলে আমরা লোকসানের আশংকায় আছি। আধা বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছি এতে ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। আগামী বছর আরও বেশি জমিতে চাষ করব।' একই এলাকার ইব্রাহিম মিয়া, মজিবুর রহমান একই কথা বলেন।
চাষি লাল মিয়া বলেন, 'সরকার কৃষিতে বিভিন্ন সহযোগিতা করে আসছে। সবজি চাষিদের দিখে কিছুটা নজর দিলে আরও উৎপাদন সরবরাহ বৃদ্ধি লাবভান হতাম।'
বাঙ্গালী নগরের শিম চাষী মারুফা বেগম বলেন, তিনি ৭০ শতক জমিতে সীম চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫/৪০ হাজার টাকা। সামনে পঁচনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারলে বিক্রি করতে পারবেন প্রায় লক্ষাধিক টাকা। গাছের ছত্রাক রোধের জন্য তিনি কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা কামনা করছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক কৃষকদের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। কৃষকরা যাতে পুরাতন বীজ বপনে চাষ না করে নতুন বীজ এবং উচ্চফলনশীল জাত ব্যবহার করে সে বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছি। এ বছর শিমের ভালো দাম থাকায় চাষিরা বেজায় খুশি। আশা করি আগামী বছর শিম চাষাবাদ বৃদ্ধি পাবে।
মন্তব্য করুন: