প্রকাশিত:
২৯ জানুয়ারী ২০২৪, ১১:৪৭
দেশে কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বেকার মানুষের সংখ্যা কমছে। গত এক বছরে বেকার কমেছে লক্ষাধিক। গত ছয় বছরে দেশে বেকার কমেছে প্রায় আড়াই লাখ। বেকারের সংখ্যা গত বছর সবচেয়ে বেশি কমেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বিবিএস বলছে, গত এক বছরে দেশে পুরুষের চেয়ে নারী বেকার কমেছে বেশি।
সম্প্রতি সর্বশেষ ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩-এর চতুর্থ প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিএস। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান বের করা হয়েছে।
বিবিএস এক লাখ ২৩ হাজার ২৬৪টি খানা থেকে বছরব্যাপী তথ্য সংগ্রহ করে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে শ্রমশক্তি জরিপটি করা হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে ত্রৈমাসিক বা প্রান্তিকভিত্তিক শ্রমশক্তি জরিপ শুরু করেছে বিবিএস। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল প্রান্তিকভিত্তিক শ্রমশক্তি জরিপ ও এর ফলাফল প্রকাশ করা।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে ২৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষ বেকার ছিল। আগের বছর ২০২২ সালে বেকার ছিল ২৫ লাখ ৮০ হাজার। অর্থাৎ শুধু ২০২৩ সালে বেকার কমেছে এক লাখ ১০ হাজার। ২০১৫-১৬ সালে দেশে বেকার ছিল ২৭ লাখ মানুষ। অর্থাৎ ছয় বছরে দেশ থেকে বেকার মানুষের সংখ্যা কমেছে দুই লাখ ৩০ হাজার।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুযায়ী বেকার মানুষের হিসাব করে বিবিএস। আইএলওর সংজ্ঞা অনুযায়ী, ৩০ দিন ধরে কাজপ্রত্যাশী একজন মানুষ যদি সর্বশেষ সাত দিনে মজুরির বিনিময়ে এক ঘণ্টাও কাজ করার সুযোগ না পান, তাহলে তাঁকে বেকার হিসেবে ধরা হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই সংজ্ঞা ঠিক নয়। বাংলাদেশের পরিবেশ ভিন্ন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দেশে যে পদ্ধতিতে বেকারের সংজ্ঞা ধরা হয়, তা আমাদের দেশের জন্য উপযুক্ত নয়। যেসব দেশে ফরমাল কাজ অ্যাভেইলএবল, কেউ চাইলেই তার প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারে, সে দেশের জন্য এই সংজ্ঞা যথোপযুক্ত। আমাদের দেশে যারা কাজ না পেয়ে ছোটখাটো কাজ করে, তাদের এই সংজ্ঞা দিয়ে বেকার বা কর্মে নিয়োজিত বলে উল্লেখ করা ঠিক নয়।’
বিবিএসের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশে বর্তমানে ২৪ লাখ ৭০ হাজার বেকারের মধ্যে পুরুষ বেকার রয়েছে ১৬ লাখ ৪০ হাজার। ২০২২ সালে বেকার পুরুষ ছিলেন ১৬ লাখ ৬০ হাজার। অর্থাৎ, ২০২২ সালের তুলনায় পুরুষ বেকার কমেছে ২০ হাজার।
২০২৩ সালে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বেকার নারীর সংখ্যা। বর্তমানে দেশে নারী বেকার রয়েছে আট লাখ ৩০ হাজার, যেখানে ২০২২ সালে ৯ লাখ ২০ হাজার নারী বেকার ছিলেন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বেকার নারী কমেছে ৯০ হাজার।
বিবিএসের তথ্যে বেকারত্বের হারেও কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে। ২০২৩ সালে দেশের মোট জনশক্তির ৩.৩৬ শতাংশ বেকার ছিল, যা আগের বছর ২০২২ সালে ছিল ৩.৫৩ শতাংশ। বেকারের হারের দিক থেকেও নারীর চেয়ে পুরুষ এগিয়ে। বর্তমানে বেকার পুরুষের হার ৩.৪০ শতাংশ এবং নারী বেকারের হার ৩.২৮ শতাংশ।
সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের শ্রমশক্তিতে আছে সাত কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। ২০২২ সালে ছিল সাত কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার। অর্থাৎ গত এক বছরে শ্রমশক্তিতে নতুন করে যুক্ত হয়েছে চার লাখ মানুষ। গত এক বছরে নারীর চেয়ে পুরুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হয়েছে বেশি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে শ্রমশক্তিতে যুক্ত রয়েছে চার কোটি ৮১ লাখ ১০ হাজার পুরুষ এবং দুই কোটি ৫৩ লাখ ৪০ হাজার নারী। ২০২২ সালে ছিল চার কোটি ৭২ লাখ ৭০ হাজার পুরুষ এবং দুই কোটি ৫৭ লাখ ৮০ হাজার নারী।
কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যাও বেড়েছে। ২০২২ সালে কর্মে নিয়োজিত ছিল সাত কোটি চার লাখ ৭০ হাজার। সেখানে কর্মে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা ২০২৩ সালে পাঁচ লাখ বেড়ে হয়েছে সাত কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার।
বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরে কর্মে নিয়োজিত মোট জনসংখ্যা বাড়লেও কমেছে নারীর সংখ্যা। বর্তমানে দেশে কর্মজীবীদের মধ্যে চার কোটি ৬৪ লাখ ৭০ হাজার পুরুষ এবং দুই কোটি ৪৫ লাখ ১৯ হাজার নারী। ২০২২ সালে ছিল পুরুষ চার কোটি ৫৬ লাখ ১০ হাজার এবং নারী দুই কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার। অর্থাৎ এক বছরে কর্মে নিয়োজিত পুরুষ বেড়েছে আট লাখ ৬০ হাজার। বিপরীতে নারীর সংখ্যা কমেছে তিন লাখ ৫০ হাজার।
খাতভিত্তিক কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কৃষি থেকে সরে শিল্প ও সেবা খাতে ঝুঁকছে মানুষ। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কৃষি খাতে কর্মে নিয়োজিত তিন কোটি ১৫ লাখ ৮০ হাজার, সেবায় দুই কোটি ৭২ লাখ ২০ হাজার এবং শিল্প খাতে রয়েছে এক কোটি ২২ লাখ ৪০ হাজার।
২০২২ সালে কৃষিতে ছিল তিন কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজার, সেবায় দুই কোটি ৬৫ লাখ ২০ হাজার এবং শিল্পে ছিল এক কোটি ১৯ লাখ ৭০ হাজার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে সেবা খাতে বেড়েছে সাত লাখ এবং শিল্প খাতে বেড়েছে দুই লাখ ৭০ হাজার। অন্যদিকে কৃষি খাতে কর্মে নিয়োজিত জনসংখ্যা কমেছে চার লাখ ৬০ হাজার। তবে কৃষি খাতে কমলেও সার্বিকভাবে এখনো এই খাতে কর্মে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা বেশি।
মন্তব্য করুন: