প্রকাশিত:
২৯ জানুয়ারী ২০২৪, ১৮:০৮
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুর ১ টায় কেএমপি’র সদর দপ্তরস্থ সম্মেলন কক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এএন্ডও) সরদার রকিবুল ইসলাম, বিপিএম-সেবা লবণচরা থানা পুলিশ কর্তৃক ১ টি বিদেশী পিস্তল, ৪ রাউন্ড গুলি ও ১ টি ম্যাগজিনসহ ২ জন আসামী গ্রেফতার সংক্রান্তে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিং করেন।
কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এএন্ডও) মিডিয়া বিফ্রিংয়ে বলেন, “খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং নগরবাসীর সেবায় সর্বদা তৎপর। আমরা বিগত কয়েক মাস থেকেই অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী, জঙ্গী, মাদক ব্যবসায়ী, সাজাপ্রাপ্ত পরোয়ানাভুক্ত আসামী, হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী ও ভূমিদস্যুসহ সমাজে প্রভাব প্রতিপত্তিশালী যারা নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে তাদের গ্রেফতারের জন্য সাঁড়াশী অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছি। গত আগস্ট-২৩ থেকে ইতোমধ্যেই আমরা ২০ টি আগ্নেয়াস্ত্র (আজকেরটাসহ ২১ টি), ১৪৪ রাউন্ড গুলি (আজকেরটাসহ ১৪৮ রাউন্ড গুলি), ২৫ টি চোরাই মোটরসাইকেল, ককটেল, গান পাউডার, চাপাতি, রাম দা, ছোরা, চাইনিজ কুড়ালসহ স্বল্প সময়ে ক্লু-লেস হত্যা মামলার মূল রহস্য উদঘাটনসহ আসামী গ্রেফতার, চোরাই স্বর্ণালঙ্কার ও বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।”
তিনি আরো বলেন, “এরই ধারাবাহিকতায় গত (২৮ জানুয়ারি-২৪) লবণচরা থানার জিডি নং-৫৭১ মূলে রাত ১২ টায় কেএমপি’র লবণচরা থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম উক্ত থানাধীন আমতলা মদিনাবাদ উকিলের কালভার্ট এর সামনে পাঁকা রাস্তার উপর চেকপোস্ট ডিউটি করাকালীন সময়ে তাদের সামনে দিয়ে একজন ব্যক্তি দ্রুতগতিতে হেটে যাওয়ায় পুলিশের সন্দেহ হলে তাকে দাঁড় করিয়ে নাম ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলে সে তার নাম মোঃ সোহাগ হোসেন (৩৫), পিতা-মোঃ মানিক, মাতা-কুলসুম বেগম, সাং-হঁরিদচর পুরন বড়বাড়ি, থানা-রামগঞ্জ, জেলা-লক্ষীপুর, এ/পি-সাং-ইসলামপাড়া ২য় গলি (বাচ্চু মিয়ার বাড়ীর ভাড়াটিয়া), থানা-লবণচরা, জেলা-খুলনা বলে জানায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোঃ সোহাগ হোসেন অসংলগ্ন কথাবার্তা বলায় পুলিশের সন্দেহ হলে তখন উপস্থিত নিরপেক্ষ সাক্ষীদের সম্মুখে দেহ তল্লাশী করে তার পরিহিত প্যান্টের ডান পকেট হতে ২ রাউন্ড পিস্তলের গুলি উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত মোঃ সোহাগ হোসেন (৩৫) কে তার কাছে প্রাপ্ত ২ রাউন্ড গুলির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসামী মোঃ সোহাগ হোসেন জানায় উক্ত ২ রাউন্ড গুলি সে মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৩), পিতা-মোঃ জাহাঙ্গীর, মাতা-রিনা বেগম, সাং হোল্ডিং নং-৪৯, বাইতুল আমান সড়ক টুটপাড়া, থানা-খুলনা সদর, জেলা-খুলনার কাছ থেকে ক্রয় করেছে এবং ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সোহাগ হোসেন আরো জানায় যে, মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৩) এর হেফাজতে ১ টি বিদেশী পিস্তল ও গুলি আছে। জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যমতে গ্রেফতারকৃত ১নং আসামী মোঃ সোহাগ (৩৫) কে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে গত ২৮ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১ টা ৩০ মিনিটে আর্জুর কালভার্ট এলাকা হইতে মামলার ২নং আসামী মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৩) কে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৩) কে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় যে, লবণচরা থানাধীন খান বাহাদুর সড়কস্থ মতি মিয়ার মিলের উত্তর পাশে সোহেল ওরফে পালসার সোহেল এর নির্মাণাধীন ১তলা ভবনের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে টিনের নিচে বালুর ভিতরে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় ২ রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশী পিস্তল লুকিয়ে রাখা আছে। লুকিয়ে রাখা ঐ পিস্তলটি আমি সহ সোহাগ ও সোহেল মিলে একত্রে এই এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যবহার করি। আসামী মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুনের দেওয়া তথ্য মেতাবেক গ্রেফতারকৃত আসামীদের নিয়ে অভিযান পরিচালনাকালে লবণচরা থানাধীন খান বাহাদুর সড়কস্থ মতি মিয়ার মিলের উত্তর পাশে সোহেল ওরফে পালসার সোহেল এর নির্মাণাধীন ১তলা ভবনের তালাবদ্ধ অবস্থায় অবস্থায় পাওয়া যায়। তখন উপস্থিত স্থানীয় জনসাধারণ ও জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এবং তাদের সহায়তায় উক্ত ভবনের তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে ২নং আসামী মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৩) এর দেখানো ও নিজ হাতে বাহির করে দেওয়া মতে উপস্থিত নিরপেক্ষ সাক্ষীদের সম্মুখে ঘটনাস্থল নির্মানাধীন একতলা ভবন এর দক্ষিণ-পূর্ব পাশের রুমের ভিতরে মেঝের বালুর নিচে সিমেন্টের বস্তার মধ্যে নীল রংয়ের পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় ১ টি বিদেশী পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি ও ১ টি ম্যাগজিনসহ পিস্তলটি লোড করা অবস্থায় সোয়া ২ টায় উদ্ধারপূর্বক বিধি মোতাবেক জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয় অবৈধ অস্ত্র-গুলি নিজ হেফাজত ও নিয়ন্ত্রণে রাখায় তাদের বিরুদ্ধে লবণচরা থানায় অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। পলাতক আসামী সোহেল ওরফে পালসার সোহেলকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।”
উল্লেখ্য যে, ১) আসামি মোঃ সোহাগ হোসেনের মূল পেশা হলো- মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, ভূমি দখলবাজ, চাঁদাবাজি। সে ব্যক্তি জীবনে বিবাহিত। তার পিতা একজন শ্রমিক। সে ছোটবেলা থেকে লবণচরা ও খুলনা সদর থানা এলাকায় বেড়ে উঠেছে। সে গ্রেনেট বাবুর অনুসারি। ২) আসামি মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুনের মূল পেশা হলো- মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, ভূমি দখলবাজ, চাঁদাবাজি। সে ব্যক্তি জীবনে বিবাহিত। তার পিতা একজন বাবুর্চি। সে ছোটবেলা থেকে খুলনা সদর থানার চাঁনমারি ও মতিয়াখালি এলাকায় বেড়ে উঠেছে। ৩) পলাতক আসামীর নাম ও ঠিকানা, সোহেল ওরফে পালসার সোহেল (৩৮), পিতা-আজিজ, সাং- ছোট বান্দা, খান বাহাদুর সড়ক, মতি মিয়ার মিলের উত্তর পাশে, থানা-লবণচরা, জেলা-খুলনা। খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী আশিক গ্রুপের একজন সক্রিয় সদস্য। সিডিএমএস পর্যালোচনা করে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়ের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মারামারি, মাদকসহ ফৌজদারি আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।
উক্ত মিডিয়া বিফ্রিংয়ে কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক এন্ড প্রটোকল অতিঃ দায়িত্বে ক্রাইম) মোছাঃ তাসলিমা খাতুন; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম; অতিঃ ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) পলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন্ হাছান, পিপিএম-সেবা; সহকারী পুলিশ কমিশনার (খুলনা জোন) রুবাইয়াত সানজিদ হোসেন; লবণচরা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হাফিজুর রহমান-সহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এবং পুলিশ অফিসারবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন: