প্রকাশিত:
৩০ জানুয়ারী ২০২৪, ১৯:০৯
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অধিকাংশ একাডেমিক ভবন, বিভিন্ন বিভাগ, আবাসিক হল ও টিএসসিসির অধিকাংশ শৌচাগার ব্যবহারের অনুপযোগী৷ দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় শুধু শৌচাগারের অবয়ব পরিবর্তন নয় এই যেন ময়লা আবর্জনার ভাগাড়। এতে চরম ভোগান্তিতে ক্যাম্পাসে দিন কাটছে শিক্ষার্থীদের।
শৌচাগারের জরাজীর্ণ অবস্থা, ময়লা-দুর্গন্ধ, অনিয়মত পরিষ্কার এবং মেয়েদের জন্য পর্যাপ্ত আলাদা শৌচাগার না থাকায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের হরহামেশাই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবন, বিবিএ ফ্যাকাল্টি, মীর মোশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবন এবং আবাসিক হলগুলোর অধিকাংশ শৌচাগার ব্যবহার অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়াও কিছু ওয়াশরুমের দরজার ছিটকিনিও ভেঙে গেছে, বেসিন ভাঙা, ব্যবহৃত পানির ট্যাপগুলো নষ্ট। কয়েকটি পানির ট্যাপ ভেঙে অনবরত পানি পড়ে শৌচাগারের মেঝে স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে। ময়লা আবর্জনা জমে আছে ভবনের অধিকাংশ শৌচাগারে। মলমূত্রে নোংরা অবস্থা হয়ে আছে, নেই পর্যাপ্ত পানি, কোনো টিস্যু কিংবা সাবানের ব্যবস্থা। তীব্র দুর্গন্ধের কারণে ভেতরে ঢুকে দরজা লাগানোর মতো অবস্থাও নেই শৌচাগার গুলোয়। দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করায় এসব শৌচাগার এখন সংক্রামক রোগজীবাণুর উৎসে পরিণত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মাহমুদুল হাসান জিহাদী বলেন, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আন্তর্জাতিক ব্লকের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী। হলের নামকরণ একজন ক্যারিশম্যাটিক লিডার এর নাম অনুযায়ী হলেও হল-কতৃপক্ষের অবহেলায় এটা যেনপরিণত হয়েছে একটি বসবাসযোগ্যহীন সুউচ্চ কঙ্কালসাড়ে। নেই কোন সুষম খাবারের ব্যবস্থা, সুষ্ঠু থাকার জায়গা, না আছে কোন পড়াশোনা জন্য পর্যাপ্ত পরিবেশ। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে দু'দন্ড শৌচাগারে বসতে গেলে মনে হয় কোন দুর্গন্ধময় ম্যনহোলের মধ্যে বসে আছি। বাথরুমে এত দুর্গন্ধ থাকে যে ভেতরে গেলে প্রায় সময় বমি চলে আসে। অপরিচ্ছন্ন, দুর্গন্ধযুক্ত, দরজা-জানালা ভাঙা, কমোড ভাঙ্গা, নেই কোনো প্রয়োজনীয় হাত ধোয়ার সাবান, হ্যান্ডওয়াশ, অডোনিল, টিস্যু ও কোনো টিস্যু রাখার পাত্র। উপরন্তু হল কতৃপক্ষ টয়লেট পরিস্কারের জন্য যেসব হারপিক, এ্যাসিডপানি-সহ অন্যান্য তৈজসপত্র প্রদান করেন তাও পরিচ্ছন্নকর্মীরা যথোপযুক্ত ভাবে ব্যবহার না করে লো-পাট করে দিচ্ছে। অর্থাৎ বর্তমানে হলের টয়লেট গুলোর এমন অবস্থা যে- "সর্বাঙ্গে ব্যথা ঔষধ দিবো কোথা"
দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী বাংলা বিভাগের অহনা সুলতানা বলেন, আমাদের ওয়াশরুমের সমস্যা বহুদিনের। নিচতলায় ছাত্রী বেশি হওয়ায় অধিক সংখ্যক ওয়াশরুম প্রয়োজন। দুইবার ঠিক করালেও বেসিনের একটি ট্যাপ বাঁকা হয়ে থাকে। আয়নার নিচের তাক ভেঙ্গে পড়ে আছে বহুদিন যাবত। অন্য ওয়াশরুমের একটা ট্যাপ সহজে চালু করা যায় না, আবার চালু করলে বন্ধ হয় না। দরজা ভাঙ্গা, ছিটকিনি আটকানো যায় না যা আমাদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। একটাতে আবার ময়লা পড়ে এমন অবস্থা যে,ঠিকমতো ব্যবহার করা যায় না। একইসাথে লাইট নষ্ট আছে। সবমিলিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা।
লোকপ্রশাসন বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাইফ বলেন, বর্তমানে আমাদের ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ভবনের, টিএসসিসির এবং হলগুলোর ওয়াশরুমের অবস্থা খুবই লজ্জাজনক। ওয়াশরুম গুলোর এমন অবস্থা যে ১০ হাত দূর থেকেই এত তীব্র দুর্গন্ধ পাওয়া যায় যে ভেতরে যাওয়ার কথা ভাবাই যায় না। কয়েকটি আবার জ্যাম হয়ে আটকে আছে। প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বারবার জানিয়েও কোন সমাধান পাওয়া যায়নি।
খালেদা জিয়া হলের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের গণরুমের এক ছাত্রী জানান, আমাদের হলে দশটি গণরুমের শতাধিক ছাত্রীর জন্য ওয়াশরুম বরাদ্দ আছে মাত্র তিনটি। প্রয়োজনের তুলনায় যা নিতান্তই নগণ্য। এমতাবস্থায়, বাথরুমে ছাত্রীদের লাইন লেগেই থাকে। অনেক সময় জরুরী প্রয়োজনেও ব্যবহার করা সম্ভব হয়না যা প্রায়শই বিব্রতকর পরিস্থিতির উদ্রেক করে। এছাড়া পানির কল নষ্ট থাকায় সবকটি বেসিনও ব্যবহার করা যায় না।
সাদ্দাম হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মোয়াজ্জেম আদনান বলেন, হলের ওয়াশরুমের অবস্থা খুবই বাজে। পর্যাপ্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং দুর্গন্ধের কারণে ব্যবহার করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেসিন ও গোসলখানার আশেপাশে শ্যাওলা পরে পিচ্চিল হয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। বেসিনে ময়লা আটকে প্রায়ই জ্যাম হয়ে থাকে। ইতোপূর্বে এইসব সমস্যা নিয়ে হল অফিসে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে কিন্তু কোন কাজ হয় নাই।
ক্যাম্পাসের ওয়াশরুমের শোচনীয় অবস্থার কথা স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের প্রধান মো: সামছুল ইসলাম জোহা বলেন, আমাদের প্রধাণত লোকবল সংকটে ভুগছি। ১৪/১৫ বছর আগে যাদের সুইপার নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো তাদের অনেকেই মারা গেছে, অনেকে অবসরে গেছে। বাকিদের দিয়ে আমরা কাজ কোনো মতে চালিয়ে নিচ্ছি। আগে মাত্র ৪০০ ওয়াশরুম থাকলেও এখন এর সংখ্যা প্রায় ২০০০ এর অধিক। কিন্তু সে অনুপাতে জনবল বাড়েনি।
তিনি আরো বলেন, লোকবল সংকট ছাড়াও আর্থিক বরাদ্দের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ক্যাম্পাসে ওয়াশরুমের সংখ্যা বাড়লেও তা পরিষ্কারে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ বাড়েনি। উপরন্তু, সরঞ্জামাদির দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তবে খুব দ্রুতই সুইপার সংকটের সমাধান হবে বলে কর্তৃপক্ষের থেকে আশ্বাস পেয়েছি।
এদিকে ইবি চিকিৎসা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত চীফ মেডিকেল অফিসার ডাঃ মো: সিরাজুল ইসলাম জানান, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন তো আমাদের দায়িত্ব। দীর্ঘদিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না করার কারণে নানাবিধ জীবাণু সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তার চেয়ে মানসিক চাপ বা বিপর্যস্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশি। সাধারণত শৌচাগারে আমাশয় জীবাণু বেশি থাকেন।
মন্তব্য করুন: