প্রকাশিত:
৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১৪:১৭
গত শুক্রবার থেকে নেত্রকোণা কালেক্টরেট মাঠে বিসিক জেলা কার্যালয়ের উদ্যোগে ১০ দিন ব্যাপি শুরু হয়েছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলা।
মেলায় ৪৫ টি স্টল হস্ত ও কুটির শিল্পের তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসে আছে। স্টলগুলোতে দর্শকদের উপচেপড়া ভিড় থাকলেও এবারের মেলায় দর্শকদের নজর কেড়েছে তৃতীয় লিঙ্গের রবিউল আওয়াল পলাশের স্টল। রবিউল আওয়াল পলাশ কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এল এল বি অনার্স অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী এবং একজন সফল উদ্যোক্তা।
পলাশের স্টলে সব বয়সী মানুষদের আকৃষ্ট করতে সাজিয়েছেন ব্যতিক্রমী ও আকর্ষণীয় বাহারি উপকরণ। তৃতীয় লিঙ্গের সফল উদ্যোক্তা পলাশ জানান, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী সমাজের কাছে বোঝা এমনকি পরিবারের কাছেও অবহেলিত। তাই এই জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে এনে প্রতিষ্ঠিত করতে শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি উদ্যোক্তা হওয়ায় আহবান জানান। তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিটি হাত কারোও কাছে ভিক্ষা করবেনা। তারা দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসাবে ভূমিকা রাখবে চায়। আত্মপ্রত্যয়ী পলাশ বলেন, সামাজিকভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে ভারতের রাজস্থান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এমএমই উদ্যোক্তা হয়েছি।
২০১১ সালে আমার মতো তৃতীয় লিঙ্গের কিছু অসহায় মানুষদের নিয়ে শুরু করি, এখন আমার সাথে ৪০ জন তৃতীয় লিঙ্গের লোকদের নিয়ে বেবি হ্যান্ডিক্রাফট তৈরি করি। পলাশ বলেন, ভারত থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে সেগুলোর সাথে বাংলাদেশি বিভিন্ন কাঁচামালের সংমিশ্রণে ঝলমলে সব পণ্য তৈরি করি। আমার পণ্য আনকমন তাই চাহিদা বেশি। আমার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরর প্রতিদিনের বেতন প্রতিদিন প্রদান করি। তারা এখানে কাজ করে এখন বেশ ভালো আছেন। জীবন জীবিকার জন্য তাদের এখন আর কারো কাছে হাত পাততে হচ্ছে না। তারা আত্মমর্যাদা নিয়ে সমাজে বসবাস করছেন। তারা এখন আত্মপ্রত্যয়ী। আমার প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্য নেপাল যাচ্ছে। এছাড়া এ পণ্য পুনাক ও আড়ংএ বিক্রি হচ্ছে পলাশ বলেন, আমি সারাদেশের থার্ড জেন্ডারের জনগাষ্ঠেীর হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করতে চাই। সে লক্ষ্যেই আমি কাজ শুরু করেছি। এদের মধ্যে থেকে উদ্যোক্তা ও ভালো কর্মী আমি সৃষ্টি করতে চাই। বিসিক নেত্রকোণা কার্যালয়ের উদ্যোগে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলায় এসে বিসিকের উপব্যবস্থাপক আক্রাম হোসেন, অন্যান্য কর্মকর্তা ও স্থানীয়দের যতেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছি।
সুযোগ্য জেলা প্রশাসক আমার স্টল পরিদর্শনে এসে জেলার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য কাজ করার সার্বিকভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়াও মদন উপজেলার সুযোগ্য নির্বাহী অফিসার মো. শাহ আলম স্যার আমার মাধ্যমে মদন উপজেলার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তা ও কর্মী তৈরি করতে চান। স্যার আমার স্টলে এসেছিলেন এবং বিভিন্ন উপকরণ ক্রয় করেছেন।
পলাশের স্টলে বাহারী পণ্য থাকায় সাধারণ দর্শক ও ক্রেতাদের নজর কেড়েছে। ফলে স্টলটিতে সব সময় উপচেপড়া ভীড় লেগে থাকে। এছাড়াও মেলায় আগত দর্শকদের বিনোদন দিতে সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত নাচে গানে মাতিয়ে রাখেন পলাশ। মেলাটি প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত চালু থাকে।
নেত্রকোণা কালেক্টরেট মাঠে বিসিক জেলা কার্যালয়ের উদ্যোগে ১০ দিন ব্যাপি শুরু হয়েছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলাটি পরিদর্শণে জেলার সুযোগ্য জেলা প্রশাসক সবাইকে আহবান জানিয়েছেন।
মন্তব্য করুন: