প্রকাশিত:
৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১৪:৩০
কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর ও রৌমারী এলাকার উত্তর-দক্ষিণে চোখের দৃষ্টি দিলে দেখা মেলে সংকীর্ণ ব্রহ্মপুত্র নদের রেখাই চোখের সামনে ভেসে ওঠে । ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তিস্থল হিমালয়ের পর্বতমালায়।
বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর ও রৌমারী সংলগ্ন এলাকা দিয়ে এ নদের প্রবেশ। নদের বিস্তীর্ণ বুকজুড়ে জেগে ওঠেছে বালুচর। নেই দু’কূল ভাঙা উত্তাল স্রোতের রাশি।
গভীরতা হীন এ নদে পানির স্রোতধারা এখন প্রায় নেই বললেই চলে। ঠিক যেন কল্পনার মরুভূমি। বর্ণনা করছিলাম ব্রহ্মপুত্র নদের আত্মকাহিনী। এ নদ শুধু নাব্যতা সংকটেই নয়, রয়েছে অস্তিত্ব সংকটেও। পানিশূন্যের কারণেই নদের এমন অবস্থা। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ। পানি বিপর্যয়ের কারণে কৃষি সেচ ব্যবস্থার ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
রাজিবপুর উপজেলা সদর থেকে চিলমারী ঘাটে পৌঁছাতে সময় লেগে যাচ্ছে ৫ থেকে ৮ ঘন্টা পর্যন্ত। শুষ্ক মৌসুমে রাজিবপুর বাজার থেকে রাজিবপুর ঘাটের দূরত্ব ১ কি.মি থেকে বেড়ে ৩-৭ কি.মি হয়ে যাচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে যাচ্ছে হাজার হাজার নৌ-যাত্রী। এত অতিরিক্ত সময় ব্যয় এর পেছনের প্রধান কারণ নদীর নাব্যতা সংকট, অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন।
এমন অবস্থায় শুষ্ক মৌসুমে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ নৌ-রুটে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর লঞ্চঘাট, মোহনগঞ্জ, কোদালকাটি, মোগলভাবাসা, চিলমারী নৌ বন্দর, উলিপুর ফকিরের হাট, বদলমারা, ঘুঘুমারি খেওয়ারচর, কতিমারি ও নয়াচর নৌ-রুটে নৌ-যান চলাচল স্বাভাবিক অবস্থায় করতে পারছে না।
নৌ-যান নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে অনেকটা পথ ঘুরে। এ কারণে বেড়েছে পণ্য পরিবহন ও যাত্রী পারাপারের ব্যাপক ভোগান্তি। ঝুঁকি নিয়ে চলছে নৌ-রুটে নৌ-যান চলাচল। এতে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা, মুমূর্ষ রোগী, মামলার আসামি, চাকুরীজীবী ও কৃষকেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
নাব্যতা সংকটের পাশাপাশি যৌবন আর লাবণ্যহীন ব্রহ্মপুত্রের এমন হালে এ নদের পাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে হতাশা আর আক্ষেপের সুর। নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়ায় পানি প্রবাহের মাত্রা কমছে। পানির সংকটে বিপন্ন ব্রহ্মপুত্র নদ বর্ষাকাল ছাড়া বাকি মৌসুমে থাকে পানিশূন্য মরুময়। বছরের পর বছর গড়ালেও ব্রহ্মপুত্র নদ খনন না হওয়ায় এর ভাগ্যাকাশে জমেছে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ।
অপরদিকে, ব্রহ্মপুত্রে বালু উত্তোলনের নামে চলছে বাণিজ্যের অস্থিরতা। ঘাটে-ঘাটে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র বিভিন্ন স্থানে চলছে অসংখ্য ড্রেজার মেশিন । যা এলাকার লোকজনের কাছে নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে । এসবই এখন খুবই সাধারণ বিষয় ।
বর্ষাকালে ব্রহ্মপুত্রে থাকে ডুবোচরে। শুষ্ক মৌসুমে কোনো কোনো স্থানে থাকে চোরাবালি। এ চোরাবালি কোনো রহস্য নয়। এর মূল কারণ ড্রেজার। বালু উত্তোলনের জন্য ব্রহ্মপুত্রের বিভিন্ন স্থানে দিন-রাত অবৈধ ড্রেজার চালানো হয়।
মন্তব্য করুন: