প্রকাশিত:
১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১১:০৪
প্রতিবছর বিশ্বে অন্তত চার লাখ শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। উন্নত দেশগুলোতে ক্যান্সার থেকে রোগীর সুস্থ হওয়ার হার প্রায় ৮০ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশে এ হার প্রায় ৩০ শতাংশ। তবে যথাসময়ে ক্যান্সার শনাক্ত করা গেলে এবং উন্নত চিকিৎসা পেলে ৭০ শতাংশ রোগী ভালো হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতার অভাব, মাত্রাতিরিক্ত চিকিৎসার ব্যয়, স্বাস্থ্যসেবার সুযোগের অভাবসহ নানা কারণে বেশির ভাগ ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু মারা যায়।
চিকিৎসায় সেরে ওঠে ৩০% রোগী
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে আজ (১৫ ফেব্রুয়ারি) বৃহস্পতিবার পালন করা হচ্ছে ‘বিশ্ব শিশু ক্যান্সার দিবস’। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসায় শিশু ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব’। দিবসটি উপলক্ষে সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) মিলনায়তনে শিশু হেমাটোলজি বিভাগের উদ্যোগে শোভাযাত্রা ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, শিশুদের ক্যান্সার বা চাইল্ডহুড ক্যান্সার বলতে ১৮ বছরের কম বয়সীদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়াকে বোঝায়। প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের ক্যান্সার কিছুটা ভিন্ন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, শিশুদের মধ্যে সাধারণত লিউকেমিয়া বা রক্তের ক্যান্সার বেশি হয়। ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত।
বাংলাদেশের পরিস্থিতিও প্রায় একই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজির বহির্বিভাগে চার হাজার ৭৮০ ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু চিকিৎসা নিতে আসে। এর মধ্যে এক হাজার শিশুকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। এসব রোগীর ৭৮ শতাংশের রক্তের ক্যান্সার, ৮.৬ শতাংশের বিভিন্ন ধরনের টিউমার, ১৩ শতাংশের রক্তের বিভিন্ন রোগ। প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া তথ্য মতে, রক্তের ক্যান্সারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া।
বিএসএমএমইউয়ের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ টি এম আতিকুর রহমান বলেন, প্রতিবছর নতুন করে কত শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে, এর কোনো পরিসংখ্যান নেই। ধারণা করা হয়, প্রতিবছর নতুন করে আট হাজার শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি।
ডা. এ টি এম আতিকুর রহমান বলেন, গত এক বছরে বিএসএমইউতে চিকিৎসা নেওয়া ৭০ শতাংশ শিশু এখন ভালো আছে। সমস্যা হলো দেশের চিকিৎসার প্রতি আস্থা না থাকা, সচেতনতার অভাব ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা।
তিনি বলেন, দেশে উন্নত ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে বলেই ১০ হাজার ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু পুরোপুরি রোগমুক্ত। তবে অপপ্রচারের কারণে মানুষ বিদেশমুখী হচ্ছে। ক্যান্সারের অনেক ওষুধ সরকার দিচ্ছে, তবে তা অপ্রতুল। অ্যান্টিবায়োটিকসহ আরো কিছু ওষুধ সরকারিভাবে পেলে রোগীর চিকিৎসা খরচ কমে আসবে এবং মানুষ চিকিৎসায় আগ্রহী হবে।
‘এমন বাচ্চারও এ রোগ হয়’
রক্তের ক্যান্সারে আক্রান্ত চার মাসের শিশু কাসফিয়া মরিয়ম এক সপ্তাহ ধরে বিএসএমএমইউতে ভর্তি। শিশু হেমাটোলজি বিভাগের ৩০৭ নম্বর ওয়ার্ডে ১২ নম্বর শয্যায় আছে সে। শিশুটির মা রুমা আক্তার বলেন, ‘আমার মায়ের ক্যান্সার, এমন বাচ্চারও আল্লাহ এ রোগ হয়!’ তিনি জানান, শিশুটিকে এ পর্যন্ত সাত-আট ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে।
মরিয়মের পাশেই ১১ নম্বর শয্যায় শুয়ে আছে চার বছরের আরেক শিশু আফরিন। সে-ও রক্তের ক্যান্সারে আক্রান্ত। জানতে চাইলে শিশুটির চাচা মোহাম্মদ সাইদ বলেন, ‘হঠাৎ করে গলায় চামড়ার নিচে চাকার মতো ফুলে আছে। ফরিদপুরের স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে গেলে দ্রুত ঢাকা পাঠিয়ে দেন। এখানে এসে জানতে পারলাম রক্তের ক্যান্সার।’
শিশুদের ক্যান্সার কেন হয়
ডা. এ টি এম আতিকুর রহমান বলেন, ক্যান্সারের মূল কারণ অনেক ক্ষেত্রে অজানা। তবে জিনগত কারণে অনেক শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, শব্দদূষণ, খাদ্যে ভেজাল, অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার ও ক্ষতিকর রশ্মি বা বিকিরণের সংস্পর্শে আসাটা অন্যতম। এ ছাড়া অধিক মাত্রায় অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও উন্নয়ন শিশুদের শরীরে ক্যান্সারের জন্ম দিচ্ছে। তাই সুস্থ ও ক্যান্সারমুক্ত প্রজন্ম গড়ার লক্ষ্যে পরিবেশবান্ধব নগরায়ণকে প্রাধান্য দিতে হবে।
প্রাথমিক লক্ষণগুলো
শিশুদের ক্যান্সার আক্রান্তের প্রাথমিক উপর্সগের মধ্যে রয়েছে ঘন ঘন জ্বর হওয়া, শরীরের কোনো অঙ্গ থেকে রক্তপাত হওয়া; যেমন—দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত পড়া, চামড়ার নিচে রক্তপাত, কান দিয়ে রক্ত আসা, চোখের নিচে রক্ত আসা, গায়ে কালো কালো দাগ। এগুলো হলো সাধারণ রক্তের ক্যান্সারের উপসর্গ। এ ছাড়া শিশুকে ফ্যাকাসে মনে হলে, যদি কোনো কারণ ছাড়াই বারবার সর্দি-কাশি-জ্বর হয়, শরীরে কোনো অঙ্গ হঠাৎ ফুলে যায়, পেটে চাকা হওয়া বা খিঁচুনি হওয়া বা হাঁটতে না পারা।
শিশুদের মধ্যে এসব উপসর্গ থাকলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মন্তব্য করুন: