প্রকাশিত:
২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ২০:২৪
ডায়াবেটিস আসলে একটি মেটাবলিক রোগ। যদি রক্তে ইনসুলিনের পরিমাণ কম থাকে অথবা ইনসুলিন যদি ঠিকমতো কাজ না করতে পারে, তখন রক্ত থেকে ইনসুলিনটা দেহকোষে প্রবেশ করে না। ফলে রক্তে শর্করার বা গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়।
ইনসুলিন মানুষের শরীরের কোষগুলি তে শর্করা প্রবেশ নিয়ন্ত্রন করে। অর্থাৎ একটি "চাবি" হিসাবে কাজ করে। এর দ্বারা আমাদের খাবার থেকে যে চিনি বা শর্করা (গ্লুকোজ) পাওয়া যায়, তা রক্তের মধ্য দিয়ে বাহিত হয়ে কোষের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। তারপর, কোষ শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তির জন্য সেই গ্লুকোজ ব্যবহার করে।
ডায়াবেটিস হয়েছে কিনা বা শর্করা (চিনি/সুগার) লেভেল কত আছে জানার জন্য আমরা হরহামেশাই কোনো ফার্মেসী বা রাস্তার পাশে বসে থাকা কোনো ব্যক্তির কাছে যাই। সুই দিয়ে গুতা মেরে মেশিন দিয়ে চেক করে বলে হুম ডায়াবেটিস আছে। আপনার সুগার লেভেল ৭ কিংবা ৮, বা ৯ অথবা ১০।
অর্থাৎ ৬ ক্রস করলেই সার্টিফিকেট ধরিয়ে দেয়া হয় আপনার "ডায়াবেটিস "। অথচ শর্করা বা সুগার লেভেল ১১ হলেও তা স্বাভাবিক। ৬ ক্রস করলেই আপনাকে ট্যাবলেট, ইনসুলিন ইনজেকশন ধরিয়ে দেবে। যেমন নির্দোষ ব্যক্তি কে দোষী বানিয়ে জেল খাটানোর মতো।
ঔষধ খেতে খেতে, সুইয়ের গুতা নিতে নিতে আমরা আসলেই রুগীতে পরিনত হই। আপনার শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংগ প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়। ইনসুলিন তৈরি হয় এই অগ্ন্যাশয়ের বিশেষ কোষ দ্বারা তৈরি হরমোন আইলেটস (আই-লেটস) থেকে।এখন আপনি যদি বাইরে থেকে নিয়মিত ইনসুলিন শরীরে প্রবেশ করান তাহলে কি এই অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন তৈরি করবে? করবেনা বেকার বসে থাকবে। বসে থেকে আরাম করতে পারলে কে কাজ করে খেতে চায় বলুন? আপনার বাসার ব্যবহৃত কোনো জিনিস যদি দীর্ঘদিন ফেলে রাখেন, তাহলে তার কি অবস্থা হবে একবার ভাবুন তো! যদি লোহার কিছু হয় মরিচা পড়ে অকেজো হয়ে যাবে না? ঠিক তেমনি পেনক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয় বেচারা বসে থাকতে থাকতে একদিন সত্যি অথর্ব হয়ে যাবে, নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। অর্থাৎ আপনি নিজেই নিজেকে ডায়াবেটিস রুগী বানালেন।তার মানে এবার আপনি সত্যি সত্যিই ডায়াবেটিস এর রুগী হয়ে গেলেন।
আপনি কি জানেন, ডায়াবেটিস হচ্ছে বড় বড় সব রোগের গর্ভধারিণী মা? ডায়াবেটিস থেকেই আপনার হার্ট, কিডনি, লিভার, চোখ সহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো একদিন ড্যামেজ বা নষ্ট হবার রোগ পয়দা হবে। ধীরে ধীরে আপনার ভাইটাল অর্গান গুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবেন।
অথচ লাইফ স্টাইল মডিফাই করে আমরা চাইলে সুস্থ থাকতে পারি। তার মানে এই নয় যে ১১ অতিক্রম করার আগ পর্যন্ত আপনি সুগার লেভেল কমানোর চেষ্টা না করে যা মন চায় তাই করে বেড়াবেন।
তবে এসব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হতে হবে। সুগার বা শর্করা লেভেল পরীক্ষা করতে হবে:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাদের বাবা-মা, ভাই-বোন বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের এই রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে।
এছাড়া যারা নিয়মিত হাঁটাচলা করেন না,পরিশ্রমী নন, অলস বা অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করেন, রাত জাগেন, দেরি করে রাতের খাবার খান, তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
এছাড়া নারীদের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস রোগ হতে পারে।
যাদের হৃদরোগ রয়েছে, রক্তে কোলেস্টেরল বেশি, উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাদেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
যেসব শিশুর ওজন বেশি, যাদের বাবা-মা, ভাই-বোন, দাদা-দাদী, নানা-নানী বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনের ডায়াবেটিস রয়েছে, যাদের মায়ের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হয়েছিল, সেই সব শিশুর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
আমাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে, শরীরচর্চা করে ডায়াবেটিস এর হাত থেকে বাঁচতে পারি।
তাই আমাদের সচেতনতাই জরুরি। সুগার লেভেল বেড়ে গেলে হতাশাগ্রস্থ না হয়ে, উদ্বিগ্ন না হয়ে স্বাভাবিক থাকুন। কারন হতাশা বা উদ্বিগ্নতা ডায়াবেটিস বাড়াবে।আপনি সঠিক ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কেমিক্যাল এড়িয়ে প্রাকৃতিক ভাবে সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন।
ফাইবার-সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খান। আটা, বাজরা, ওটসের মতো খাবার খান। পরিশোধিত চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। ট্রান্সফ্যাট খাবেন না। ফাস্টফুড, ভাজাপোড়া খাবেন না।প্রক্রিয়াজাত মাংস খাবেন না। এর বদলে তাজা ফল ও সবজি খান। এর পাশাপাশি শরীরকে সক্রিয় রাখুন। নিয়মিত যোগব্যায়াম করুন। আর সবচেয়ে জরুরি হল মানসিক চাপ কমান।মানসিক চাপ কমাতে পারলে দেখবেন ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ দুটোরই ঝুঁকি কমে গিয়েছে।
ডায়াবেটিস নীরব ঘাতক, তবে ভয় পাবার কিছু নেই। একে বসে আনাটাই জরুরী। নিয়ম মেনে চলতে পারলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রেখে আপনি আরামসে থাকতে পারবেন। জীবন কে উপভোগ করতে পারবেন। মনে রাখবেন, কখনোই সাইকোলজিক্যাল ট্র্যাপে পড়বেন না। প্যানিক নিবেন না।
আমার ডায়াবেটিস! আমি শেষ এটা ভাবার কিছু নেই।
বাংলাদেশের ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন বলছেন, ''ডায়াবেটিস যত তাড়াতাড়ি শনাক্ত করা যাবে, সেই রোগীর জন্য সেটা ততো ভালো। তাতে তিনি যেমন রোগটির চিকিৎসা দ্রুত শুরু করতে পারবেন, পাশাপাশি তার জীবনযাপনও একটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে।''
লেখক: ইনফ্লুএনশিয়াল স্পিকার, সফট স্কিলস ট্রেইনার, আয়ুর্বেদা প্রাক্টিশনার।
ফাউন্ডার- THE HERBALIVING
মন্তব্য করুন: