মঙ্গলবার, ২৬শে নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ
  • গণমাধ্যমে হামলা-ভাঙচুর হলে ব্যবস্থা
  • কঠোর হতে চায় না সরকার, আমরা চাই শান্তিপ্রিয় সমাধান
  • বুড়িচংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত
  • নিম্নচাপে উত্তাল সাগর, ৪ সমুদ্রবন্দরে সতর্কসংকেত
  • ঢাকার যে ৫ এলাকায় আজ বেশি বায়ুদূষণ
  • সংঘর্ষে না জড়িয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের
  • যাত্রাবাড়ী-ডেমরায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
  • ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে অটোরিকশাচালকরা
  • ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন

সড়ক আইন সংশোধন নিয়ে দোটানা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত:
২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১১:১৯

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধনের চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বিভ্রান্তিতে রয়েছে। এমনটি মনে করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি অনুমোদিত হলে একদিকে যেমন দুর্বল আইন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, তেমনি আইন সংশোধনে রয়েছে পরিবহন মালিকদের আবদার রক্ষার চাপ। এমন পরিস্থিতিতে দোটানায় থাকা সড়ক মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আইনের সংশোধনী শেষ পর্যন্ত কেমন হবে, তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে প্রথম সংশোধনীর খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সড়ক মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংশোধিত আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে আইনের কার্যকারিতা কমে আসবে। বিদ্যমান আইন অনেকটা দুর্বল আইনে পরিণত হবে। রাজপথে শিক্ষার্থীদের যে তুমুল আন্দোলনের মুখে এই সড়ক আইন সংসদে পাস হয়েছিল, সেই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বিতর্কের মুখে পড়তে পারে সরকার।

আবার পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা সরকারি দলের পক্ষে নানা সময় কাজ করে যাচ্ছেন।


এমনকি মালিকপক্ষের নেতারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় পদেও রয়েছেন। সেদিক থেকেও আইন সংশোধনে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে চাপ তৈরি হচ্ছে। দুই দিক সামাল দিতে গিয়ে এই আইন সংশোধনের উদ্যোগে গড়িমসি চলছে সড়ক মন্ত্রণালয়ে। গেল বছরের মাঝামাঝি সময় সংশোধিত আইনের খসড়া চূড়ান্ত হয়।

প্রক্রিয়া অনুযায়ী জনমত যাচাই-বাছাই করার কথা। সেটি একবার হয়েছে। এরপর সংশোধিত খসড়া জনমত যাচাইয়ের জন্য আর প্রকাশ করা হয়নি। ফলে চূড়ান্ত খসড়ায় কী ধরনের সংশোধনী আইনে আসতে যাচ্ছে, তা অনেকাংশে অপ্রকাশিত রয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এরই মধ্যে একবার সড়ক আইনের সংশোধিত খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।


মন্ত্রিপরিষদের আইন বিভাগ থেকে খসড়া অনুমোদন করা হয়। কিন্তু সংশোধনী খসড়ায় আরো কিছু বিষয় যুক্ত ও বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে সড়ক মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ। এখন সেগুলোর ওপর কাজ চলছে। আরো কিছুদিন আগেই খসড়া চূড়ান্ত করা সম্ভব হতো। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সড়ক আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিতে চায়নি সরকার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা  বলেন, ‘এই মুহূর্তে সংশোধনী খসড়াকে আর চূড়ান্ত বলার সুযোগ নেই। তাতে ফাইন টিউনিং করা হচ্ছে। কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আসছে। তবে পরিবহন চালক-শ্রমিকদের শাস্তি কমিয়ে যে সংশোধন করা হয়েছিল, এতে বড় পরিবর্তন হচ্ছে না। শাস্তি কমছে। কিন্তু নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণে পাঁচ লাখের পরিবর্তে তিন লাখ দেওয়ার যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, সেটা বাতিল হতে পারে। ক্ষতিপূরণ পাঁচ লাখই থাকবে।’

এখন প্রক্রিয়া অনুযায়ী, আইনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। সেখানে আলোচনায় অনুমোদন পেলে খসড়াটি চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। এরপর পাঠানো হবে আইন মন্ত্রণালয়ে। আইন মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি নিয়ে চূড়ান্ত খসড়া যাবে সংসদে। সংসদ চাইলে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য খসড়াটি সড়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটিতে পাঠাতে পারে। সে ক্ষেত্রে কমিটি যাচাই-বাছাই করে দেখবে। প্রয়োজনে সড়ক মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠাবে। তা না হলে অনুমোদনের জন্য সংসদে পাঠাবে।

এক প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ‘আমরা আমাদের কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছি। আগামী সপ্তাহের মধ্য ফাইল ক্যাবিনেটে পাঠিয়ে দেব। এরপর আমাদের হাতে আর কিছু নেই।’

জানতে চাইলে পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান  বলেন, নিঃসন্দেহে সরকার বিরাট বিভ্রান্তিতে পড়েছে। একদিকে যেমন নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করার দায়, অন্যদিকে রজনৈতিক প্রেক্ষাপট। এ অবস্থায় সড়ক মন্ত্রণালয় পরিবহন মালিকদের অন্যায় আবদারে সায় দেবে কি না, সেটাই দেখার বড় বিষয়। প্রথম খসড়া অনুযায়ী আইনটি সংশোধন হলে এটি দুর্বল আইনে পরিণত হবে।

চূড়ান্ত খসড়ায়ও কমছে চালক-শ্রমিকের শাস্তি

শুরুতে আইনের মোট ১২৬টি ধারার মধ্যে ২৯টিতে পরিবর্তন এনে সংশোধিত আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়। এর মধ্যে ১৫টি ধারায় বিদ্যমান কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড কমানো হচ্ছে। ভারী ও মাঝারি মোটরযানের সংজ্ঞাসহ আটটি বিষয়ের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এই খসড়ার ওপর এখন আবার সংশোধনের কাজ চলছে।

সংশোধনের খসড়া অনুযায়ী, ওভারলোডিং (গাড়ি মাত্রাতিরিক্ত বোঝাই) এবং মোটরযানের আকার পরিবর্তনের অপরাধকে জামিনযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে, যা বর্তমানে অজামিনযোগ্য। অষ্টম শ্রেণির পরিবর্তে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেই একজন চালক নিবন্ধিত তিন চাকার গাড়ি চালাতে পারবেন। আবার একজন সহকারী বা সুপারভাইজার ১০ বছর কাজ করে যদি দক্ষ হয়ে ওঠেন এবং ড্রাইভিং সক্ষমতা বোর্ডে পাস করেন, তাঁর ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ কয়েকটি শর্ত মানা প্রয়োজন হবে না।

এত দিন যেখানে নকল, ভুয়া বা জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করলে সর্বনিম্ন ছয় মাস এবং সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ছিল, সেখানে সংশোধনীতে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তির ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রত্যাহার করার পরও সে গাড়ি চালালে ২৫ হাজারের পরিবর্তে ১৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে। সরকারের নির্ধারিত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে শাস্তিস্বরূপ জরিমানা ও কারাদণ্ড অর্ধেক করা হচ্ছে।

চলমান আইন অনুযায়ী, অনির্ধারিত জায়গায় গাড়ি পার্ক করলে বা যাত্রী ওঠানামা করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। সেখানে প্রস্তাব অনুযায়ী এ অপরাধের জন্য মাত্র এক হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।

৫৭ ধারায় ভুক্তভোগী বা তার পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ দিতে আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠনের বিষয়ে বলা হয়েছে। ওই তহবিলের উৎস হিসেবে নিয়ন্ত্রণহীন চালক ও মোটরযান মালিকের কাছ থেকে আদায় করা জরিমানার কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু সংশোধনের প্রস্তাবে বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে সরকারি তহবিল বা পরিবহন সংগঠনগুলোর দেওয়া চাঁদার ওপরই নির্ভর করতে হবে।

বর্তমানে আইনের ৮৪, ৯৮ ও ১০৫ ধারা অজামিনযোগ্য অপরাধ। কিন্তু আইনটি সংশোধন করা হলে ৮৪ ও ৯৮ ধারার অপরাধ জামিনযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। ৮৪ নম্বর ধারায় অবৈধভাবে মোটরযানের আকৃতি পরিবর্তনে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। ৯৮ নম্বর ধারায় ওভারলোডিং বা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গাড়ি চালানোর শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে।

বর্তমান আইনের ১০৫ নম্বর ধারায় দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতর আহত বা নিহত হলে দায়ী ব্যক্তির সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাওয়া থেকে আহতদের বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির পরিবারকে পাঁচ লাখের পরিবর্তে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা সড়কে মৃত্যু কমাতে পারছি না, উল্টো দুর্ঘটনার কারণে শাস্তি কমানোর আলোচনা করছি। জেল-জরিমানা কমাতে যাচ্ছি। এটা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের চরম উদাসীনতার লক্ষণ।’

এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ  বলেন, ‘আমরা ৩৪টি সংশোধনীর প্রস্তাব দিয়েছি। ক্যাবিনেট থেকে খসড়া ফেরত আসার পর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে এখনো বসা হয়নি। বসলে আমরা পরামর্শ দেব।’


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর