প্রকাশিত:
৩ মার্চ ২০২৪, ১৫:৫৯
নেত্রকোনার 'মোহনগঞ্জ প্রেসক্লাবের' তহবিলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ সম্পাদক মাসুম আহমেদের বিরুদ্ধে।
বিভিন্ন উৎস থেকে আসা দান-অনুদানের টাকা ক্লাবের একাউন্টে জমা না করা ও অনেক অনুদান গায়েব করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। এতে ক্লাবের প্রায় ৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
হিসেবের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রেসক্লাবের সদস্যর বাইরে সমাজের গণ্যমান্য তিনজনকে নিয়ে ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকাল চারটায় মোহনগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা চলে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত।
সভায় ক্লাবের তিন বছরের আয়ের হিসাব করলে এমন অনিয়মের চিত্র উঠে আসে। প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম আজাদের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় সাধারণ সম্পাদক মাসুম আহমেদ, কার্যকরী সদস্য সাইফুল আরিফ জুয়েল, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জালাল উদ্দীন, নরোত্তম রায়সহ ক্লাবের প্রায় সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
অনিয়মের বিষয়ে প্রেসক্লাবের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মোহনগঞ্জ প্রেসক্লাবে একাধারে তিনবার সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন মাসুম আহমেদ। গত তিন বছরে প্রেসক্লাবের দান-অনুদানসহ সকল আয়ের টাকা তিনি রেজ্যুলেশন ছাড়াই তুলে নিয়েছেন। গত বছর প্রেসক্লাবের আয়োজনে হওয়া মেলা থেকে পাওয়া দুই লাখ টাকা ক্লাবের কাউকে না জানিয়ে আত্মসাৎ করেন। এছাড়া সসদ্যদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে সেই টাকা আত্মসাৎ করেন। প্রেসক্লাবে নতুন একজন সদস্য ভর্তির ফি ১২০ টাকার পরিবর্তে তিন হাজার টাকা করে ছয় জন সদস্যর কাছ থেকে ১৮ হাজার টাকা তুলে সেই টাকা তিনি খাতায় লিখেননি বা ব্যাংক একাউন্টেও জমা দেননি। সব মিলিয়ে ৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
এছাড়াও প্রেসক্লাবের নামে বই বের করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় লাখ টাকা নেন মাসুম। বই ছাপানোর পর আবার স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন অফিসে প্রতি বই ৫০০ টাকার বিনিময়ে জোরপূর্বক নিতে বাধ্য করা হয়। ওই বই থেকেও ৩-৪ লাখ টাকার বেশি আয় হয়। তবে এর থেকে প্রেসক্লাবে এক টাকাও জমা দেওয়া হয়নি। শেষে বইটি তাঁর ব্যক্তিগত বলে দাবি করেন মাসুম আহমেদ।
সাধারণ সভায় এসব বিষয়ে নিয়ে ক্লাবের সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সভায় সাধারণ সম্পাদক মাসুৃম আহমেদ সভায় জমা খরচের বিল-ভাউচার দেখাতে পারেননি। লাখ টাকার মতো মনগড়া খরচের হিসাব দেন। তবে এসব প্রত্যাখ্যান করেন সদস্যরা।
পরে গত তিন বছরের আয় ব্যয়ের সঠিক হিসাব বের করতে তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি (উচ্চতর অডিট কমিটি) গঠন করা হয়। ক্লাবের সদস্য নন এমন তিনজনকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
অভিযুক্ত সাধারণ সম্পাদক মাসুম আহমেদ টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে নিয়মানুযায়ী আয় ব্যয়ের বিল ভাউচার সংরক্ষণ করা হয়নি বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে প্রেসক্লাবের কার্যকরী কমিটির সদস্য সাইফুল আরিফ জুয়েল বলেন, প্রেসক্লাবে আয় ব্যয়ের কোন কিছুই সংরক্ষণ করেননি সাধারণ সম্পাদক। একাউন্ট প্রায় শূন্য। অথচ গত তিন বছরে প্রায় ৮ লাখ টাকা ক্লাবে এসেছে বিভিন্ন খাত থেকে। মেলার টাকা তিনি নানা বাহানায় আত্মসাৎ করেছেন। সবকিছু মনগড়া কাজ করেছেন তিনি।
মোহনগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম আজাদ বলেন, চিকিৎসাজনিত কারণে দীর্ঘদিন দেশের বাহিরে ছিলাম। দেশে আসার পর ব্যাংকের একাউন্টের খবর নিয়ে জানতে পারি সাধারণ সম্পাদক প্রেসক্লাবের একাউন্টে জমাকৃত টাকা ইচ্ছামত উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।
ক্লাবের টাকা পয়সার আয় ব্যায়ের কোন হিসাব পত্র সংরক্ষণ নেই। প্রেসক্লাবের আয়োজনে হওয়া বাণিজ্য মেলা থেকে পাওয়া দুই লাখ টাকা কাউকে না জানিয়ে তিনি আত্মসাৎ করেছেন । বিভিন্ন খাত থেকে পাওয়া টাকার কোনটা জমা দেয়নি, কোনটা জমা দিলেও রেজ্যুলেশন ছাড়াই তুলে নিয়েছে। এমনকি আমার নামে থাকা ৫০ হাজার টাকার ব্যাংক চেকটি জমা না দিয়ে স্বাক্ষর জাল করে টাকা তুলে নিয়েছে সাধারণ সম্পাদক মাসুম।
প্রেসক্লাবের নাম ব্যবহার করে রীতিমতো বাণিজ্য চালিয়েছে। তাই সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিতে এসব অনিয়ম তদন্তে কমিটি (উচ্চতর অডিট কমিটি) গঠন করা হয়েছে। এপ্রিলের ৩০ তারিখের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া কথা। প্রতিবেদন পাওয়ার পর সাধারণ সভা ডেকে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন: