প্রকাশিত:
৩ মার্চ ২০২৪, ১৮:০১
“মন জুড়ানো খেই হারানো /ধ্যান ভাঙ্গানো ঘ্রাণ, গাছের দু-কূল আমের মুকুল/ জুড়িয়ে দেয় প্রাণ!”
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাসে যে দিকে তাকায় গাছে গাছে এখন শুধু দৃশ্যমান সোনালি মুকুলের আভা। মুকুলের ভারে নুয়ে পড়ার উপক্রম প্রতিটি গাছ। শোভা ছড়াচ্ছে নিজস্ব মহিমায়।
ছয় ঋতুর এই বাংলাদেশে পাতাঝড়া ষড়ঋতুর রাজা বসন্ত। আবহমান বাংলার সৌন্দর্যের রাজা বলে পরিচিত গ্রীষ্মকাল। ফাগুনের ছোঁয়ায় পলাশ-শিমুলের বনে লেগেছে আগুন রাঙা ফুলের মেলা। শীতের জড়তা কাটিয়ে কোকিলের সেই সুমধুর কুহুতানে মাতাল করতে আবারও ফিরে এলো বাংলার বুকে ঋতুরাজ বসন্ত। রঙিন-বন ফুলের সমারোহে প্রকৃতি যেমন সেজেছে বর্ণিল সাজে, তেমনি নতুন সাজে সেজেছে ইবি ক্যাম্পাসের আমবাগান।
সোনালি হলুদ রঙের আমের মুকুলের মনকাড়া ঘ্রাণ। মৌমাছির দল ঘুরে বেড়াচ্ছে গুনগুন শব্দে। ছোট পাখিরাও মুকুলে বসেছে মনের আনন্দে। এমন দৃশ্যের দেখা মিলেছে ক্যাম্পাসের সর্বত্রে। আমের সোনালি মুকুলে ঢেকে গেছে গাছের ডালপালা। বাতাসে মুকুলের ঘ্রাণ মিলেমিশে একাকার।
‘আয় ছেলেরা, আয় মেয়েরা, ফুল তুলিতে যাই, ফুলের মালা গলায় দিয়ে, মামার বাড়ি যাই। ঝড়ের দিনে মামার দেশে, আম কুড়াতে সুখ, পাকা আমের মধুর রসে, রঙিন করে মুখ।’ _পল্লী কবি জসীম উদ্দিনের ‘মামার বাড়ি’ আর আম কুড়ানো কবিতা ছোট বেলায় কেউ পড়ে নাই এমন কেউ আছে বলে আমার জানা নেই।
এই যে, পাকা আমের এই বাস্তব রূপ পেতে বাকি রয়েছে আর মাত্র কয়েক মাস। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে এই মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ। বাতাসে মিশে সৃষ্টি করছে মৌ মৌ গন্ধ। যে গন্ধ শিক্ষার্থীদের মনকে বিমোহিত করে।
তবে শিক্ষার্থীদের দাবি পর্যাপ্ত আমের ফলন পেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে দেখবাল করা লাগবে। মুকুলে যত পরিচর্যা হবে ততই ফলন বেশি পেতে পারে বলে মনে করছে শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাসের পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্যের সভাপতি ইমন বলেন, আমের মুকুল, মুকুলের উপর সকালের রোদ আমাদের মনে করিয়ে দেয় বসন্ত উঁকি দিলো জানালায়। এই রংবেরঙের আনন্দ আমাদের সকলেরই জানা। তবে প্রশাসনের উচিত আম গাছগুলোর যত্ন নেওয়া। আমরা গত বছরেও অভয়ারণ্যের সদস্যদের নিয়ে বসেছিলাম, কথা বলেছিলাম কীভাবে আম গাছের যখন মুকুল হয় সে সময়ে গাছগুলোর যত্ন নেওয়া হয়। এবারও আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করবো। আমের মুকুল থেকে ফল হওয়া অব্দি সময়টুকুতে প্রসাশনের বিশেষ যত্ন দেওয়া দরকার এবং ফল হওয়ার পর এসব ফল দিয়ে কোনোভাবে 'ফল উৎসব' করা যায় কিনা যেখানে অসচ্ছল পরিবারের ছাত্ররা সরাসরি অংশগ্রহণ করবে সে ব্যপারেও ভাবা দরকার।
পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন ভয়েসের সভাপতি মাজিদুল বলেন, ক্যাম্পাসের সোনালি আমের মুকুল আর তার মিষ্টি ঘ্রানে জানিয়ে দিচ্ছে শীতের বিদায় এবং বসন্তের আগমনী বার্তা। এই মুকুলের ঘ্রাণই আমাদের কোকিল ডাকা, ঋতুরাজ বসন্তের প্রতীক্ষায় রাখে। কিন্তু গাছপালা আশংকাজনক হারে কমে যাওয়ায় জলবায়ু এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়ার পথে এগোচ্ছে। তাই আমাদের দেশও ষড়ঋতুর পরিবর্তে দুই ঋতুতে পরিণত হচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে এখনই সচেতন হতে হবে। ক্যাম্পাসের মুকুল গুলো যেন অকালেই ঝরে না যায় সেই জন্য প্রশাসনের যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
এছাড়াও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা আরেক সংগঠন তারুণ্যের সভাপতি মারুফ জানান, ইবি ক্যাম্পাস বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম একটা সুন্দর ও পরিপাটি ক্যাম্পাস। বছরের প্রতিটি ঋতুতেই এটি তার নতুন রূপে সাঁজে। বসন্তের আগমনেও ইবি তার অপরূপ সৌন্দর্য মেলে ধরে। এখানে যেমন আছে উঁচু উঁচু দালান তেমনি আছে নানান ধরণের ফল-ফলাদিসহ সৌন্দর্যবর্ধন গাছ। বসন্তের এ সময়টাতে আমগাছগুলোও থাকে নতুন মুকুলের সুবাসে ভরা। পাখির ডাক, মৌমাছির আনাগোনায় মুখরিত থাকে গাছগুলো। কিন্তু এ বছর অধিকাংশ আমগাছগুলো মুকুলহীন অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় গাছগুলো ক্রমশ তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। আমগাছ সহ সকল ধরণের গাছগুলোর যথেষ্ট তদারকি প্রয়োজন। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য ও সম্পদ এ গাছগুলোর প্রতি কর্তৃপক্ষের যথাযথ দেখভাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশটা আরও মনোমুগ্ধকর করতে সক্ষম।
মন্তব্য করুন: