প্রকাশিত:
৫ মার্চ ২০২৪, ১১:৪৭
মানুষের বাঁচার জন্য অবশ্যই খাবারের প্রয়োজন, তবে আমাদের উচিত মাত্রাজ্ঞান বুঝে খাওয়া- যদিও সামনে খাবার দেখলে অনেকেরই হুঁশ থাকে না! মানুষ আজকাল এমন খাওয়াই খায় যে, পশ্চাৎদেশ পর্যন্ত ফাটিয়ে ফেলে (অধিকাংশ মানুষ এখন অর্শ, পাইলস, গেজ নামক নোংরা রোগে আক্রান্ত)!
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ তার পুরো জীবদ্দশায় যে পরিমাণ খাদ্যগ্রহণ করে, তা ৬০,০০০ পাউন্ড বা ওজনে ছয়টি হাতির সমান। সেসব খাবারের অধিকাংশ আবার এমন অখাদ্য যে, সহজে হজম হতে চায় না, ভেতরের নাড়ি-ভুড়িকে পর্যন্ত ছাড়খার করে দেয়। শুধু জিহ্বাকে পরিতৃপ্ত করতে গিয়ে আমরা এমনসব খাবার এতো পরিমাণে খাই- যা কিনা পুরো দেহকে ভোগান্তিতে ফেলে দেয়। আমরা এমন কিছু অখাদ্য অকপটে শরীরের ভেতরে চালান করে দিচ্ছি- যেগুলো না খেলেই বরং দেহখানি অনেক বেশি নীরোগ ও ঝামেলামুক্ত থাকতে পারতো। দেহের ওপরে আমরা যে অত্যাচার চালাই, দেহের যদি আলাদা অস্তিত্ব থাকতো, তাহলে অনেক আগেই আমাদের ছেড়ে পালিয়ে বাঁচতো অথবা নিজেই নিজের খাদ্য সংগ্রহ করে নিতো!
পৃথিবীতে নিশাচর প্রাণী ছাড়া কেউ ভুলেও সূর্যাস্তের পর খাদ্যগ্রহণ করে না। অথচ সারাদিন ধরে অনেকবার অনেক কিছু খাওয়ার পরেও আমাদের যাবতীয় ভুড়িভোজন চলে রাতের বেলায়। যে খাবারটি না খেলেও দিব্যি চলত- সেটাও অবলীলায় পেটে চালান করে দিচ্ছি! এটা যে কত বড়ো বদাভ্যাস, মানবদেহের জন্য মহাক্ষতির কারণ- সেটা আমরা অনেকেই বুঝতে চাই না বা না বোঝার ভান করি। পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র প্রাণী- যে কিনা ক্ষুধা না লাগলেও খায়! এমনকি পাকস্থলী পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরেও গপাগপ খেতে থাকে। মানবসভ্যতা অনেক দূর এগিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত আমাদের আদর্শ খাদ্যজ্ঞান হয়নি। জন্মসূত্রে একটি দেহের মালিক হলেও অনেকেই জানি না- এই দেহটি কিভাবে কাজ করে এবং কিভাবে একে পরিচালনা করতে হয়?
ফলে চোখে যা ভালো লাগে, মুখে যা মজা লাগে, সবকিছুই গোগ্রাসে গিলতে থাকি। এর পরিণামে শরীরের ক্ষতি হলেও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই; হরহামেশা অসুস্থ হওয়ার পরও বিকার নেই কারো! গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখবেন- এই পৃথিবীতে মানুষ আর তাদের গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী গর্ভধারণ করলে মেডিকেল চেকআপ লাগে না, মুঠোভরে জিঙ্ক ট্যাবলেট গেলানো হয় না, ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করা লাগে না, এমনকি অন্য কারো সন্তান-প্রসবে অস্ত্রোপচারও লাগে না! তথাপি প্রাকৃতিক নিয়মে স্বাভাবিক প্রসব সুনিশ্চিত হয়। মানুষ ছাড়া সকল মা-প্রাণীর প্রসবকালীন মৃত্যু শূন্যের কোঠায়। এমনকি সন্তান প্রসবের পরমুহূর্ত থেকেই মা-প্রাণী স্বাভাবিক কাজ-কর্মে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে, কেবল সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ পারে না। তাইলে আপনারাই বলেন, কোনটা ঠিক? চিকিৎসা মাফিয়াদের খপ্পরে পড়ে মানব প্রজাতির অবস্থা কাহিল !!!
কেবলমাত্র ড্রাগস ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে অসুস্থ ও রোগাক্রান্ত মানুষকে কখনোই পুরোপুরি সুস্থ করে তোলা হবে না! চিকিৎসক সমাজ চাইলেও আমাদেরকে রোগমুক্ত করতে পারবেন না, কেননা তাঁরা শুধু প্রেসক্রিপশন লেখেন, আগেকার দিনের হেকিম, কবিরাজ, বৈদ্যর মতো নিজেই ওষুধ তৈরি করে দেন না। অসুস্থ রোগীকে সুস্থ করে তোলার নিয়ন্ত্রণ কোনো চিকিৎসকের হাতে নেই। এখনকার চিকিৎসক সমাজ ড্রাগস মাফিয়াদের ইচ্ছেমতো খেলার পুতুল মাত্র। তাহলে সাধারণ মানুষের রোগমুক্তি ঘটবে কিভাবে? এই প্রশ্নের সুস্পষ্ট জবাব হলো, মানুষ সুস্থ থাকে সঠিক প্রাকৃতিক খাবারে৷ সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য মানুষসহ প্রাণীকুলের যা কিছু প্রয়োজন, সব আছে প্রকৃতিতে। মহান সৃষ্টিকর্তা কোনো ড্রাগসের ভরসায় দুনিয়া ও মানুষ সৃষ্টি করেন নাই। মানুষকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতে ড্রাগসের কোনো কার্যকর ভূমিকাও নেই!
চলমান বিশ্বের অর্ধেকের বেশি পুরুষ সন্তান জন্মদানে অক্ষম, নারীদের দেখা দিচ্ছে PCOD-সহ হরমোনাল ইমব্যালেন্সের সমস্যা। এর জন্য দায়ী আমাদের ভুলভাল জীবনাচার আর উল্টাপাল্টা খাদ্যাভ্যাস। রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং কৃত্রিম হরমোনযুক্ত বিষাক্ত খাবার আমাদেরকে কখনো সুস্থ করতে বা রাখতে পারবে না। বিষাক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার দিয়ে উৎপাদিত খাবারগুলো মূলত জন্মবিরতিকরণ পিলের মতোই কাজ করছে এবং দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস, কিডনি বিকলসহ নানাবিধ জটিল রোগের সূত্রপাত ঘটাচ্ছে! অনুগ্রহ করে নিজের পরিবার এবং পরবর্তী প্রজন্মের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা ভাবুন৷ সঠিক প্রাকৃতিক কৃষিচর্চা করুন- নিজের ফসল নিজেই উৎপাদনের উদ্যোগ নিন৷ না পারলে যৌথভাবে দল গঠন করে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অংশ নিন, তবু বাজারের বিষাক্ত খাবার ছোবেন না। নচেৎ জীবনের কষ্টার্জিত সব সঞ্চয় চিকিৎসা-ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিলেও শেষ রক্ষা হবে না। আমাদের পূর্ব-পুরুষদের প্রধান পেশা ছিল কৃষিকাজ। বাবা, দাদা বা তাঁর বাবা সবাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষিকাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের কেউই কৃষিকাজ করতে বা কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে আগ্রহী নন।
পূর্ব-পুরুষেরা কৃষক ছিলেন- এই পরিচয় দিতেও কুণ্ঠিত বর্তমান প্রজন্ম। ফলে এই অঙ্গনে বিশাল এক শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে- কৃষিজমির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমে গেছে কৃষকের সংখ্যাও। কৃষি বিষয়ক পড়াশুনা করে যাঁরা কৃষিবিদ হচ্ছেন, তাঁরাও সুযোগ পেলেই নিজ ভূবন ছেড়ে অন্যান্য পেশায় ঢুকে যাচ্ছেন। শেষমেশ যাঁরা এই অঙ্গনে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, তাঁরাও কেউ কৃষক হচ্ছেন না, বরং নানাবিধ আবাদ সম্পৃক্ত পণ্য বিপণনে যুক্ত হয়ে পরোক্ষভাবে প্রকৃতির ক্ষতিসাধন করছেন! সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাপার- উচ্চশিক্ষিত কৃষিবিদেরা অশিক্ষিত কৃষককে অধিক উৎপাদনে বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে বিষাক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে মাটি তথা প্রকৃতিকে বিষাক্ত বানিয়ে ফেলছেন! এর পরিণাম মোটেও ভালো হবে না।
নিজে সরাসরি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যুক্ত না হয়ে ক্ষমতা বা অর্থের জোরে অন্যের উৎপাদিত কৃষিপণ্যে ভাগ বসানো পৃথিবীর আদিমতম পাপগুলোর একটি। সেটা এখন এতোটাই ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে যে. ক্রমাগত টাকার পেছনে ছুটতে গিয়ে আমরা গণহারে প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। যদিও টাকা নয়, প্রকৃতিতে উৎপাদিত ফসলই আমাদেরকে আমৃত্যু বাঁচিয়ে রাখে। কখনো কি ভেবে দেখেছেন- মানুষ অতিশয় বুদ্ধিমান ও বিবেকবান প্রাণী হওয়া সত্ত্বেও তার শরীরে ক্যান্সার বাসা বাঁধে; অথচ পশুদের কেন ক্যান্সার হয় না? কারণ তারা রান্না করা প্রক্রিয়াজাত খাবার খায় না!
আসুন, পশু-পাখির কাছ থেকে শিখে নিই সুস্থতার প্রাকৃতিক উপায়গুলো :-
• পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া আর কোনো প্রাণী রান্না করা খাবার খায় না (আলগা তেল ও সাদা চিনি ঢোকে না), সেজন্য তাদের অসুখ-বিসুখ হয় না বললেই চলে।
• পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী ফ্রিজে রাখা বাসি খাবার খায় না। এমনকি প্রচন্ড ক্ষুধা অনুভূত হলেও কোনো পশু-পাখি প্যাকেটজাত বা প্রক্রিয়াজাত খাবার ছুঁয়েও দেখবে না!
• পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী প্রকৃতির মুক্ত আলো-বাতাস ও সূর্যের আলো এড়িয়ে সারাক্ষণ AC-র মধ্যে বসে থাকে না বা ঘুমায় না!
• পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য সংরক্ষণ করে না!
• পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী প্রকৃতির নিঃশর্ত দান খাবারকে ব্যবসায়িক উপাদানে পরিণত করেনি!
• পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী ক্ষুধা না লাগলে খায় না এবং যখনই খাদ্যগ্রহণ করে, পাকস্থলীর কিছু অংশ খালি রাখে!
• পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী শক্ত খাবার ও পানি একইসঙ্গে খাদ্য হিসেবে উদরস্থ করে না! ভারী খাবার খাওয়ার পর খানিকটা বিরতি দিয়ে ধীরে-সুস্থে পানি পান করে।
• পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী জুতা পরিধান করে না, বরং সব সময় মাটির সংস্পর্শে থাকে। ফলে তাদের দেহ থাকে টক্সিন-মুক্ত।
• পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া সকল প্রাণী খাবার খাওয়ার সময় মৌন থাকে এবং নিঃশব্দে একাগ্রচিত্তে খাদ্যগ্রহণ করে। কোনো অবস্থাতেই খাদ্যগ্রহণের সময় অন্য কোনোদিকে/কাজে মনোযোগী হয় না (মুঠোফোন দেখতে দেখতে কিংবা কথা বলতে বলতে খায় না)!
• পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো দাঁতযুক্ত প্রাণী খাবার ভালোমতো না চিবিয়ে গলাধঃকরণ করে না!
• পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া সকল প্রাণী অসুস্থতা বোধ করলে সবার আগে খাদ্যগ্রহণে বিরতি দেয়, কিন্তু মানুষ শক্তি ফিরে পাওয়ার অজুহাতে আরো বেশি করে খাবার ঢোকায় (এর পাশাপাশি চিকিৎসা-ব্যবসায়ীদের শরণাপন্ন হলে তারা আবার "ঔষধ" নামক তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যুক্ত ড্রাগস বা মাদক যুক্ত করেন),যা কিনা অসুস্থতার ভয়াবহতা (মাত্রা)-কে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে!
• পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী ড্রাগস সেবন করে না (গৃহপালিত অবলা পশু-পাখিকে মানুষই জোর করে ড্রাগস সেবনে বাধ্য করে)- যেটা জুলুম ছাড়া কিছুই নয়)!
• পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী খাদ্যের সীমা লঙ্ঘন তথা প্রাকৃতিক বিধি-বিধান উপেক্ষা করে না। সঙ্গত কারণেই মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজনই হয় না।
প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসরণ করে আপনিও সুস্থ ও নীরোগ জীবনযাপন করতে পারেন :-
ক্ষুধা না লাগলে খাবেন না। যখনই খেতে বসবেন, ক্ষুধার অনুভূতি কিছুটা অবশিষ্ট থাকতেই খাদ্যগ্রহণে ছেদ টানবেন। খাবার খেতে হবে পাকস্থলীর এক-তৃতীয়াংশ। অল্প খাবার ভালো করে চিবিয়ে খেলেও পেট ভরার অনুভূতি হয়।
মুখে যেটা বেশি মজা লাগে, সেটা কম করে খেলে আজীবন সুস্থ থাকতে পারবেন।
মানুষ খাবার খায় মূলত মুখের মজা আর চোখের ভালো লাগাকে প্রাধান্য দিয়ে, কিন্তু খাদ্যগ্রহণ করা উচিত পায়ুপথের আরামবোধকে বিবেচনায় রেখে। আপনি কী খেলেন, তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- ঠিকঠাক মলত্যাগ করতে পারলেন কিনা?
মন্তব্য করুন: