প্রকাশিত:
৫ মার্চ ২০২৪, ১৫:৫৫
রাজধানীর খিলগাঁওয়ে শহীদ বাকি সড়কে থাকা রেস্টুরেন্টগুলোর মালিকরা অভিযানের খবরে সেগুলো বন্ধ করে দেন। যে কারণে অভিযান শুরুর দেড় ঘণ্টা পর সেটি স্থগিত করে দিতে হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আভিযানিক দলকে।
এরমধ্যে একটি ভবন সিলগালা করলেও খালি হাতে ফিরেছেন তারা।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় খিলগাঁও এলাকার শহীদ বাকি সড়কে রেস্টুরেন্টসমূহে বিদ্যমান অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা তদারকির লক্ষ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর আলম।
দিনব্যাপী খিলগাঁও এলাকার রেস্টুরেন্টগুলোয় অভিযান পরিচালনা করার কথা থাকলেও দুপুর একটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান বন্ধ করতে বাধ্য হয়। কারণ, এদিনে কোনো রেস্টুরেন্ট মালিক কিংবা তাদের পক্ষের কোনো প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিল না। ফলে আভিযানিক দলকে রেস্টুরেন্ট তদারকি থেকে ফিরে আসতে হয়। জনগণের সঙ্গে যায় না বা তাদের খাবার সংশ্লিষ্ট অপরাধে জরিমানাও করতে পারেননি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
প্রথম দফা মুলতবির পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দ্বিতীয় দফা অভিযান পরিচালনার জন্য খিলগাঁও চৌধুরী পাড়ায় অবস্থিত ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টে যান সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু সেখানে কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে চলে যায়। সাইন বোর্ডে লেখা- ‘রেস্টুরেন্টের উন্নয়ন কাজের জন্য প্রতিষ্ঠানটি সাময়িক বন্ধ, আদেশক্রমে কর্তৃপক্ষ। ’
অভিযান শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে খিলগাঁও এলাকার অভিযানে এসেছিলাম। আমরা একটি ভবনে অভিযানে ঢুকেছিলাম। সে খবর পেয়ে বাকিরা সবাই সকাল থেকে রেস্টুরেন্ট বন্ধ রেখেছে। তারা রেস্টুরেন্টগুলোর সামনে ‘উন্নয়ন কাজের জন্য রেস্টুরেন্ট আপাতত বন্ধ আছে’ লেখা প্ল্যাকার্ড টাঙিয়ে দিয়েছে। রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ থাকায় আমরা খিলগাঁও এলাকায় আজ আর অভিযান পরিচালনা করতে পারছি না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরাও অভিযানে যোগ দিয়েছিলেন। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিপূর্ণ নাইটিং স্কাই ভিও ভবনে নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়। যেসব ভবনকে অগ্নিকাণ্ডের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিস থেকে নোটিশ দেওয়া হচ্ছে, সেসব ভবনের দৃশ্যমান স্থানে ঝুঁকিপূর্ণের নোটিশ টানানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই মোতাবেক অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের দৃশ্যমান স্থানে নোটিশ টানায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে অভিযানের শুরুতেই স্কাই ভিউ নাইটেঙ্গল টাওয়ার নামে ৮তলা রেস্টুরেন্ট ভবন পরিদর্শন করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। সেখানে তারা দেখতে পান ৩ মিটার সিঁড়ির বদলে সেখানে রয়েছে ৩ ফিট সিঁড়ি। সঙ্গে রয়েছে ছোট্ট একটি লিফট। ভবনটিতে কোনো ফায়ার এস্টিংগুইসার দেখা যায়নি। অভিযানের খবরে ভবনের দুয়েকটি রেস্টুরেন্ট খোলা থাকলেও বাকিগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।
রুফটপ ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় পুরো ভবনটি সিলগালা করে দিয়েছে অভিযানিক দল। সেখানে ‘অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন ২০০৩ অনুযায়ী এই ভবনটি অগ্নি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ। সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো’ লেখা একটি প্ল্যাকার্ডও ঝুলিয়ে দেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, অভিযানিক দলের গাড়ি দেখে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার ঘাটতি থাকা খিলগাঁও এলাকার দোকানগুলোর মালিকরা ‘ওই শাটার নামা’, ‘শাটার নামা’ বলে কর্মীদের দোকান বন্ধের নির্দেশ দেন। কর্মীরাও সেই নির্দেশ মেনে দোকান বন্ধ করে দেয়। এরপর হুড়মুড় করে সবাই বেরিয়ে যান।
উল্লেখ্য, শহীদ বাকি সড়কের দুই পাশে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের এলাকা। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অভিযান চললেও ভয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনেও আওতায় থাকা দোকানগুলো বন্ধ করে চলে যান সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুন লাগে। আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২০ জন। তাদের সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক।
মন্তব্য করুন: