প্রকাশিত:
৯ মার্চ ২০২৪, ১৬:০৪
দেশপ্রেম ও সেবার মনোভাব নিয়ে বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে সততা নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
শনিবার (০৯ মার্চ) রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজে কনভেনশন হলে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২৪’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের চেতনা হবে স্বাধীনতার চেতনা, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ। বর্তমান সরকারের রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে অন্যতম প্রধান নিয়ামক শক্তি বাংলাদেশ পুলিশ।
তিনি বলেন, শৃঙ্খলা-নিরাপত্তা, প্রগতি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতি বছরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিহত ও আহত হচ্ছেন। ২০২৩ সালে চাকরিরত অবস্থায় পুলিশের বিভিন্ন পদবির ৩৯৯ জন সদস্য বিভিন্ন কারণে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের মধ্যে ১৩৪ সদস্য কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গ করেছেন।
তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মন্ত্রী বলেন, পুলিশ সদস্যরা আন্তরিকতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, জীবন উৎসর্গ করার মত চরম ত্যাগ স্বীকার করে যে অনন্য নজীর স্থাপন করছেন তার জন্য পুলিশ বাহিনীসহ সারা দেশ আজ গর্বিত।
মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদাত্ত আহ্বানে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বীরত্বের যে পরিচয় দিয়েছেন তা কখনো জাতি ভুলবে না। কারণ সে রাতে পুলিশই প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের ২৬২ জন সদস্য শহীদ হন।
দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য জীবন দেয়া পুলিশ সদস্যদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, জনগণে জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা পুলিশ বাহিনীর অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। দেশ সেবার মন্ত্রে উদ্দীপ্ত পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। যখনই দেশে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায়, তখনই পুলিশ বাহিনী সেই অপচেষ্টাকে রুখে দিয়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক রাখে। তাদের এই সক্ষমতা প্রশংসার দাবিদার।
বর্তমান সরকার সব সময় পুলিশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, চাকরিরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যের পরিবারের জন্য আর্থিক অনুদান এককালীন পাঁচ লাখ টাকার প্রজ্ঞাপন বাতিল করে ২০২০ সালে ১ অক্টোবর এই অনুদানের পরিমাণ ৮ লাখ টাকা করা হয়। এছাড়া বাহিনী থেকে স্থায়ী অবসরে গেলে বা চাকরিতে অক্ষম হয়ে গেলে এই সাহায্যের অনুদান ৪ লাখ টাকা করা হয়েছে।
তিনি জানান, ২০১৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিএনপি, জামায়াত-শিবির, হেফাজতে ইসলামসহ দুর্বৃত্তদের হামলায় কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে এককালীন ১০ কোটি ২৬ লাখ টাকা প্রদান করেন। এছাড়া আজীবন রেশন সুবিধা চালু করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকারের উন্নয়ন রূপকল্প বাস্তবায়ন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক রাখা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা একান্ত অপরিহার্য। তা বাস্তবায়নে অন্যতম নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ।
এজন্য এ অর্জনে সততা, আন্তরিকতা, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সকল পুলিশ সদস্যকে আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশের নিরাপত্তা প্রদান করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। একটি মৃত্যু সেই পরিবারের জন্য অনেক কষ্টের। দেশকে স্থিতিশীল ও নিরাপদ রাখতে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে। মানবাধিকার সমুন্নত রেখে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে নিয়ে যাবার সব ধরনের বাধা দমন করেছে। দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন করেছে পুলিশ।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) কামরুল আহসান বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশই প্রথম স্বাধীনতার যুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় পুলিশ সদস্য জীবন দিয়ে কাজ করে গেছে। দেশের যেকোনো সংকট ক্রান্তিকালে পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গেও পিছপা হয় না। গত বছর ১৩৪ পুলিশ সদস্য কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন দিয়েছেন। সকল শহীদ সদস্যদের জন্য নানা আর্থিক সুবিধা ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে অত্যাধুনিক করতে বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এরআগে, কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২৪ উপলক্ষে সকাল ১০টায় পুলিশ স্টাফ কলেজে স্থাপিত ‘পুলিশ মেমোরিয়াল’ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
উল্লেখ্য, গত বছর কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গ করেছেন পুলিশের বিভিন্ন স্তরের ১৩৪ সদস্য।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন দেশে কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর জীবন দেওয়া সদস্যদের স্মরণ করা হয়। এজন্য তৈরি করা হয়েছে মেমোরিয়াল।
১৯৯৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কর্মরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ পুলিশ ২০১৭ সাল থেকে মেমোরিয়াল-ডে পালন করছে।
প্রতি বছর মেমোরিয়াল-ডে তে ওই বছরে মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের উপস্থিতিতে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। মেমোরিয়াল-ডে পালন করার জন্য ইতোপূর্বে রেপ্লিকা স্মৃতি তৈরি করে পালন করা হয়েছে। জেলা/ইউনিটে একই দিনে রেপ্লিকা স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করে মেমেরিয়াল-ডে পালন করা হচ্ছে।
এ স্তম্ভের আন্ডারগ্রাউন্ডে ১৯৯৩-২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ পুলিশে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত বীর পুলিশ সদস্যদের ডাটা সংরক্ষিত রয়েছে।
অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সভাপতিত্ব উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত আইজিপি (অর্থ) আবু হাসান মুহাম্মদ তারিক, র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) খুরশীদ হোসেন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি নূরুল ইসলাম, প্রমুখ।
মন্তব্য করুন: