প্রকাশিত:
১০ মার্চ ২০২৪, ১৫:৫১
কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক বর্তমান সরকারের দেশের জনগণের গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে টেকসই ও সুসংগঠিত সমাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতাভুক্ত করার লক্ষ্যে এবং ভবিষ্যতে কর্মক্ষম জনসংখ্যা হ্রাসের কারণে নির্ভশীলতার হার বৃদ্ধি পাবে বিবেচনায় নিয়ে মহান জাতীয় সংসদ কর্তৃক “সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩” এ অংশগ্রহনের লক্ষে রবিবার (১০ মার্চ) ফুলবাড়ী উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক সার্বজনীন পেনশন স্কিম বিষয়ক উদ্বুদ্ধকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিব্বির আহম্মেদ। সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সরকার। এছাড়াও ফুলবাড়ী মডেল প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক ইউনুস আলী আনন্দ, সাংগাঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক মোঃ নাজমুল হাসান, সাংবাদিক মাইদুল ইসলাম, সাংবাদিক এরশাদুল হক সহ ফুলবাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক এমদাদুল হক মিলন, উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক সাংবাদিক জাকারিয়া মিয়া, ফুলবাড়ী উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম সহ অন্যান্য সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টটের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের “সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩ এর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিব্বির আহম্মেদ। তিনি বলেন দেশের জনগণের গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে টেকসই ও সুসংগঠিত সমাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতাভুক্ত করার লক্ষ্যে এবং ভবিষ্যতে কর্মক্ষম জনসংখ্যা হ্রাসের কারণে নির্ভশীলতার হার বৃদ্ধি পাবে বিবেচনায় নিয়ে মহান জাতীয় সংসদ কর্তৃক “সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩” পাশ করা হয়েছে এবং গত ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩ মহামান্য রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভের পর আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। উক্ত আইনের আলোকে গঠিত জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি করে ১৮ (আঠারো) বৎসর তদূর্ধ্ব বয়স হইতে ৫০ (পঞ্চাশ) বৎসর বয়সি সকল বাংলাদেশি নাগরিক সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রণ করিতে পারিবে; তবে শর্ত থাকে যে, বিশেষ বিবেচনায় ৫০ (পঞ্চাশ) বৎসর উর্ধ্ব বয়সের নাগরিকগণও সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন এবং সেইক্ষেত্রে স্কিমে অংশগ্রহণের তারিখ হইতে নিরবচ্ছিন্ন ১০ (দশ) বৎসর চাঁদা প্রদান শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হইবেন সেই বয়স হইতে আজীবন পেনশন প্রাপ্ত হইবেন; বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীগণ এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভূক্ত হইতে পারিবেন; প্রত্যেক চাঁদাদাতার জন্য একটি পৃথক ও স্বতন্ত্র পেনশন হিসাব থাকিবে; পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ (পচাঁত্তর) বৎসর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে পেনশনারের নমিনি অবশিষ্ট সময়কালের (মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ (পঁচাত্তর) বৎসর পর্যন্ত) জন্য মাসিক পেনশন প্রাপ্ত হবে ; চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ (দশ) বৎসর চাঁদা প্রদান করিবার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে, জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তাহার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে এবং পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে।
এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিব্বির আহম্মেদ আরো বলেন, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩ এর আলোকে মোট ০৪ (চার)টি স্কিমে পেনশন সুবিধা প্রদান করা হবে। যার মধ্যে প্রবাস স্কিমে বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যে কোন বাংলাদেশী নাগরিক তার অভিপ্রায় অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধের শর্তে নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। প্রবাস হতে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর সমপরিমাণ অর্থ দেশীয় মুদ্রায় পরিশোধ করাসহ প্রয়োজনে স্কিম পরিবর্তন করতে পারবেন। পেনশন স্কিমের মেয়াদ পূর্তিতে পেনশনার দেশীয় মুদ্রায় পেনশন প্রাপ্য হবেন। এছাড়াও, প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক ''সুরক্ষা'' স্কিমে তাঁর পরিবারের ১৮ বা তদূর্ধ্ব এক বা একাধিক সদস্যের (যেমন স্বামী, স্ত্রী, বাবা, মা, ভাই, বোনের) জন্য আবেদন করে বৈদেশিক মুদ্রায় চাঁদা প্রদান করতে পারবেন। এক্ষেত্রে তিনি যার জন্য পেনশনার অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করবেন তাঁর এনআইডি, ব্যাংক হিসাব নম্বর, এবং নমিনির তথ্য প্রদানপূর্বক নিবন্ধন করবেন।
চাকরি করি বেসরকারি, পেনশন স্কিমে আমিও আছি স্লোগানকে সামনে রেখে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী বা উক্ত প্রতিষ্ঠানের মালিক তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে উহার কর্মচারীগণের জন্য এই স্কিমে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে স্কিমের চাঁদার ৫০% কর্মী এবং বাকী ৫০% প্রতিষ্ঠান প্রদান করবে। কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ না করলেও, উক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোন কর্মচারী নিজ উদ্যোগে এককভাবে এ স্কিমে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন।
কৃষক শ্রমিক জেলে তাঁতী, পেনশন স্কিমে সবাই মাতি স্লোগানকে সামনে রেখে অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন: কৃষক, রিক্সাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতিসহ সকল অনানুষ্ঠানিক কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
সমতা স্কিমের নিশ্চয়তা, সরকার দেবে সহায়তা স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক সময়ে সময়ে প্রকাশিত আয় সীমার ভিত্তিতে দারিদ্র্য সীমার নিম্নে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের ব্যক্তিগণ (যাহাদের বর্তমান আয় সীমা বাৎসরিক অনুর্ধ্ব ৬০(ষাট) হাজার টাকা) তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন এবং সমতা স্কিমে কর্তৃপক্ষ বিধি অনুসারে সমপরিমাণ অর্থ জমা করবে।
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিব্বির আহম্মেদ জানান যে, আগ্রহী ব্যক্তি অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন এবং এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন সর্বাতক সহায়তা করবেন।
মন্তব্য করুন: