বুধবার, ২৭শে নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • ২৫ শহীদ পরিবারকে ৮ লাখ টাকা করে অনুদান প্রদান
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে সুখবর দিলো বিআরটিএ
  • রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ
  • গণমাধ্যমে হামলা-ভাঙচুর হলে ব্যবস্থা
  • কঠোর হতে চায় না সরকার, আমরা চাই শান্তিপ্রিয় সমাধান
  • বুড়িচংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত
  • নিম্নচাপে উত্তাল সাগর, ৪ সমুদ্রবন্দরে সতর্কসংকেত
  • ঢাকার যে ৫ এলাকায় আজ বেশি বায়ুদূষণ
  • সংঘর্ষে না জড়িয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের
  • যাত্রাবাড়ী-ডেমরায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

রমযানুল মুবারকের মৌলিক কিছু আমল

এইচ এম জহিরুল ইসলাম মারুফ

প্রকাশিত:
১৩ মার্চ ২০২৪, ১৬:৩৭

ইসলাম ধর্মের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম হলো রোজা বা সিয়াম। দীর্ঘ ১১টি মাসের পাপরাশি থেকে মুক্ত হওয়ার অপূর্ব সুযোগ এনে দেয় এ মাস। এ মাস প্রশিক্ষণের মাস। রোজা ইসলামের মৌলিক ইবাদতের মধ্যে অন্যতম। আর এ রোজা মুসলমানদের ওপর ফরজ করা হয়েছে।

রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে পাকে ইরশাদ করেন, ‘রমযানুল মুবারকের শুরুতে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকেন, হে কল্যাণ অন্বেষী! অগ্রসর হও। হে অকল্যাণ অন্বেষী! নিবৃত্ত হও, নিয়ন্ত্রিত হও।’ সেই হাদীসে একথাও আছে যে, ‘রমযানুল মুবারকের শুরুতে শয়তান ও দুষ্ট জিনদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয় এবং জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়’। এ থেকে বোঝা যায়, রমযানুল মুবারক ইবাদতের শ্রেষ্ঠ মৌসুম। কাজেই এই সুযোগকে কাজে লাগানো চাই।

নিম্নে রমযানুল মোবারকের কিছু মৌলিক আমলের কথা উল্লেখ করা হল। আল্লাহ তাআলা সবাইকে তাওফীক দান করুন।

১. রোযা রাখা ও তাকওয়া অর্জনের চেষ্টা করা :

রমযানুল মুবারকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হল, রোযা রাখা। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে―

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَیْكُمُ الصِّیَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَی الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ .

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরয করা হয়েছিল। যেন তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো। ―সূরা বাকারা (২) : ১৮৩।

রমযানুল মুবারকে তাই সকল মুসলিমের রোযা রাখা ফরয।


২. সেহরী খাওয়া :

রমযানুল মুবারকের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল সেহরী খাওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সেহরী খাও, সেহরীতে বরকত রয়েছে। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯২৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৯৫

অন্য হাদীসে আছে, আমাদের রোযা ও আহলে কিতাবীদের রোযার মাঝে পার্থক্য হল সেহরী খাওয়া (আমরা সেহরী খাই, তারা খায় না)। ―সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৯৬


৩. ইফতার করা :

রমযানুল মুবারকে ইফতার করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা কর্তব্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মত কল্যাণের মাঝে থাকবে―যতদিন তারা সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করবে। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯৫৭


৪. ইফতারের সময় দুআ করা :

ইফতারের সময় দুআ করা চাই। হাদীস শরীফে এসেছে, ইফতারের সময় রোযাদারের দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ―ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৭৫৩

এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রা. ইফতারের সময় নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন―

اَللّٰهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ، أَنْ تَغْفِرَ لِي.

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আপনার ঐ রহমতের ওছিলায় প্রার্থনা করছি, যা সবকিছুকে পরিব্যাপ্ত করে রেখেছে। (আমি প্রার্থনা করছি,) আমাকে ক্ষমা করে দিন। ―সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৭৫৩

ইফতারের দুআ -

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে আছে, ইফতারের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুআ পড়েছিলেন―

ذَهَبَ الظَّمَأُ، وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ، وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللهُ.

‘পিপাসা নিবারিত হল, শিরা উপশিরা সতেজ হল আর সওমের সওয়াবও অবধারিত হয়েছে ইনশাআল্লাহ। ―সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৩৫৭

৫. তারবীহ পড়া :

রমযানের অন্যতম একটি আমল হল, তারাবীহ নামায। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে সওয়াবের আশায় রমযানের রাতে (নামাযে) দণ্ডায়মান হয় তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ২০০৯

তাই গুনাহ মাফের আশায় সওয়াবের নিয়তে গুরুত্ব ও যত্নের সাথে তারাবীহ নামায পড়া চাই।

তারাবীহের নামাজ ২০ রাকাত। ‘বিশ রাকাত তারাবীহ খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত। মুহাজির ও আনসার সাহাবীগণের ঐকমত্য (ইজমা) ও খায়রুল কুরূন থেকে অদ্যাবধি উম্মতের অবিচ্ছিন্ন কর্মধারা এবং সর্বসম্মত পথ (সাবীলুল মুমিনীন)-এর মতো অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত।

৬. তাহাজ্জুদ পড়া :

রমযানে সাধারণত সেহরীর জন্য ওঠা হয়, তাই একটু আগে উঠে দুই-চার রাকাত তাহাজ্জুদ পড়া তুলনামূলক সহজ। আর যদি এ সুযোগে সব সময়ের জন্য তাহাজ্জুদের অভ্যাস হয়ে যায়, তাহলে তো খুবই ভালো। পরিবারের লোকদেরও তাহাজ্জুদে ওঠার জন্য অনুপ্রেরণা দান করা চাই। কারণ তাহাজ্জুদের ফযীলত অনেক। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘ফরয নামাযের পরে সর্বোত্তম নামায হল রাতের নামায (অর্থাৎ তাহাজ্জুদ)। ―সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬৩

৭. বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা :

সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে এসেছে, রমযান মাসে কুরআন মাজীদ অবতীর্ণ হয়েছে। তাই এ মাসে কুরআনের প্রতি বেশি মনোযোগী হওয়া কর্তব্য। হাদীসে এসেছে, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম রমযানের প্রতি রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসতেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০২

৮. শবে কদর অন্বেষণ করা :

শবে কদর এক মহা ফযীলতপূর্ণ রাত। এ রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) নিশ্চয়ই আমি তা (কুরআন) নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। ―সূরা কদর (৯৭) : ১-৩

হাদীস শরীফে এসেছে, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে নামাযে দণ্ডায়মান থাকবে, তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। ―সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৬০; সহীহ বুখারী, হাদীস ২০১৪


৯. শেষ দশকে ইতিকাফ করা :

শেষ দশকে মসজিদে ইতিকাফ করা রমযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। (দ্র. সহীহ বুখারী, হাদীস ২০২৬)

তাছাড়া শবে কদর লাভের উত্তম উপায় হল ইতিকাফ। ইতিকাফরত অবস্থায় থাকলে শবে কদর লাভের সুযোগ বেশি।

১০. যথাসাধ্য দান করা :

রমযান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হল, সাধ্য মোতাবেক দান করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে অনেক দান করতেন। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ার সকল মানুষ অপেক্ষা অধিক দানশীল ছিলেন। রমযানে তাঁর দানের হাত আরো প্রসারিত হত। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০২

১১. গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা :

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রোযা হচ্ছে ঢাল। যখন তোমাদের কেউ রোযা থাকে, সে যেন গর্হিত কথা না বলে এবং মূর্খের ন্যায় কাজ না করে। কেউ যদি তাকে গালি দেয় বা ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়, তাহলে সে যেন বলে, আমি রোযাদার, আমি রোযাদার। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৫১

অন্য হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও মন্দ কাজ বর্জন করল না, তার (রোযা রেখে) পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। ―সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০৩

এ হাদীসদ্বয় থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, রোযা কেবল পানাহার ত্যাগের নাম নয়। বরং রোযার মর্যাদা রক্ষার জন্য আরো কিছু করণীয় আছে। রোযার মর্যাদা রক্ষার্থে শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে অপছন্দনীয় সকল কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। নতুবা এই রোযা আল্লাহর কাছে মাকবুল রোযা হিসেবে গৃহীত হবে না এবং রোযার কাঙ্ক্ষিত সুফলও পাওয়া যাবে না। তাই রোযার মর্যাদা রক্ষার্থে সব ধরনের গর্হিত কাজ ও কথাবার্তা থেকে বিরত থাকতে হবে।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর