প্রকাশিত:
১৪ মার্চ ২০২৪, ১৬:৪৬
মহান রব্বুল আলামীন আমাদের পূর্বের উম্মতগণকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তোমরা সপ্তাহের শ্রেষ্ঠতম দিনে আমার জন্য বিশেষ একটি ইবাদত কর। কিন্তু তারা সেই শ্রেষ্ঠতর দিনটি নির্ণয় করতে ভুল করেছে। চিন্তা-ভাবনা করে ইহুদীরা আল্লাহর ইবাদতের জন্য শনিবারের দিনকে নির্বাচন করেছিলল আর নাসারারা নির্ধারণ করেছিলো রবিবার দিনকে। অথচ সবচেয়ে সম্মানিত দিন হল জুমাবার (শুক্রবার)।
জুমাবারের ব্যাপারে অনেক অনেক ফযীলত, অনেক বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। আর আল্লাহ তাআলা মেহেরবানী করে সে দিনটি উম্মতে মুহাম্মদীকে দান করেছেন।
হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
আমরা পরে আগমনকারীরাই কিয়ামতের দিন অগ্রগামী হব (অর্থাৎ আমরা উম্মত হিসেবে পরবর্তীতে আসার পরও অগ্রগামীদের কাতারে শামিল থাকবো)। তবে অন্যদেরকে (আসমানী) কিতাব দেওয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে। এই দিন (অর্থাৎ শ্রেষ্ঠতম একটি দিনে সকলে একত্র হয়ে বিশেষ ইবাদত করা) তাদের উপর ফরয করা হয়েছিল। কিন্তু তারা এতে মতবিরোধ করেছে। তাই আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক দিনটির (জুমাবারের) পথ দেখিয়েছেন। সুতরাং এক্ষেত্রে মানুষ আমাদের অনুগামী। ইহুদীদের শ্রেষ্ঠ দিন জুমার পরের দিন শনিবার আর খ্রিস্টানদের শ্রেষ্ঠ দিন এর পরের দিন রবিবার। -বুখারী : ৮৭৬, মুসলিম : ৮৫৫।
অন্য এক হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
আল্লাহ তাআলা আমাদের আগের উম্মতকে জুমার (সপ্তাহের এক দিন সকলকে একত্র হয়ে ইবাদত করার) ব্যাপারে সঠিক দিনের পথ দেখাননি। ফলে ইহুদীদের জন্য হয়েছে শনিবার আর খ্রিস্টানদের জন্য হল রবিবার। এরপর আল্লাহ তাআলা আমাদের এনেছেন এবং জুমার জন্য সঠিক দিনের নির্দেশনা দান করেছেন। সুতরাং আল্লাহ তাআলা (সম্মানিত দিন) নির্ধারণ করেছেন এভাবে- জুমাবার, শনিবার, রবিবার।
(শ্রেষ্ঠ দিবস নির্ধারণের ক্ষেত্রে যেমন অন্যান্যরা আমাদের অনুগামী) তেমনি কিয়ামতের দিনও তারা হবে আমাদের অনুসারী। আমরা দুনিয়ায় সবার শেষে আগমণকারী, কিন্তু কিয়ামতের দিন হব সবার থেকে অগ্রগামী। সেদিন আমাদের ফায়সালা করা হবে সকলের আগে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৫৬; সুনানে নাসাঈ, হাদীস ১৩৬৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১০৮৩
জুমার দিনের বিশেষ ফযীলত :-
জুমার দিনের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদায় অন্যতম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বদরী সাহাবী হযরত আবু লুবাবা ইবনে আবদুল মুনযির রা. বর্ণনা করেন -
নিশ্চয় জুমার দিন হল সমস্ত দিনের সর্দার। জুমার দিন আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে মহান দিবস। এমনকি এই দিন আল্লাহ তাআলার কাছে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর তথা ইসলামের দুই ঈদের দিন থেকেও মহান।
জুমার দিনের বিশেষ পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ দিন আল্লাহ তাআলা আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেছেন। এ দিন তাঁকে জান্নাত থেকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। এদিনেই আল্লাহ তাঁকে মৃত্যু দান করেছেন। জুমার দিন একটা সময় আছে, যাতে বান্দা আল্লাহর কাছে যা চাইবে আল্লাহ তাআলা তাকে তা-ই দান করবেন, যদি না সে হারাম কোনো বিষয়ের প্রার্থনা করে। তদ্রূপ, কিয়ামতও সংঘটিত হবে জুমার দিনেই।
নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতারা পর্যন্ত জুমার দিন (কিয়ামতের আশঙ্কায়) ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে। পৃথিবী, আকাশ, বাতাস, পাহাড়, পর্বত, সাগর সবকিছু জুমার দিন (কিয়ামতের আশঙ্কায়) উদ্বিগ্ন থাকে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা : ৫৫৫৯, মুসনাদে আহমাদ : ১৫৫৪৮, ইবনে মাজাহ : ১০৮৪১।
তবে জুমার এইসব ফজিলত ইবাদতের মাস রমজানের ফজিলতের সাথে মিশ্রিত হয়ে আরো বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছ। তাই পবিত্র রমজান মাসের এই প্রথম জুমাকে আমরা আমাদের ইবাদাতের মোক্ষম সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে অধিক পরিমাণ ইবাদতের মাধ্যমে দুনিয়ার কল্যাণ ও আখিরাতের ক্ষমার কারণ হিসেবে বেছে নেই।
আল্লাহ তাআলা আমাদের আজকের এই বরকতময় দিনকে নাজাতের উসিলা হিসেবে গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মন্তব্য করুন: