প্রকাশিত:
১৭ মার্চ ২০২৪, ১৪:৫৩
ইসলামী শরিয়তে গিবত বা পরনিন্দা একটি ভয়াবহ গুনাহ। তবুও এই মারাত্মক গুনাহের প্রবণতা আমাদের সকলের মাঝে কম-বেশি আছে। মহাপবিত্র রমজানুল মোবারকেও গিবতের মতো কবিরা গুনাহ থেকে আমাদের বেঁচে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। যেখানে মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাষায় গিবত তথা পরনিন্দাকে আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা দিয়ে এ মারাত্মক গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার আদেশ দিয়েছেন।
গিবতের ভয়াবহতা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ ফরমান, ‘আর তোমরা একে অপরের গিবত করো না। তোমাদের কেউ কি এটা পছন্দ করবে যে, সে তার (আপন) মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করবে। নিশ্চয়ই তোমরা এটাকে অপছন্দ করবে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সিমাহীন ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু।’ -সূরা হুজরাত : ১২ ।
পবিত্র কুরআনুল কারীমের অন্যত্র সুরা হুমাজায় ইরশাদ হয়েছে "প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর জন্য রয়েছে দুর্ভোগ" -হুমাজাহ : ০১।
একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম রাঃ দেরকে বললেন তোমরা কি যানো গীবত কি?
অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, গিবত হলো কোনো ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার এমন দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা, যা শুনলে সেই ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হয় এবং অন্তরে আঘাত পায়, তাকেই গিবত বলে। অর্থাৎ কারো অগোচরে তার এমন দোষ চর্চা করা , যা বাস্তবেই তার মধ্যে আছে, তা-ই গিবত। আর যদি তার মধ্যে সেই দোষ না থাকে, তবে তা হবে অপবাদ। যা গিবত থেকেও মারাত্মক ভয়াবহ গুনাহ। -মুসলিম : ২৫৮৯।
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত,
রাসুল (সা.) হাদিসে ইরশাদ করেন, ‘গিবত ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্যতম গুনাহ। তিনি (বর্ণনাকারী) রাসুল (সা.)-এর কাছে জানতে চাইলেন, এটা কিভাবে? তিনি বললেন, এক ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তাওবাহ করলে তার গুনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু যে গিবত করে তার গুনাহ প্রতিপক্ষ মাফ না করা পর্যন্ত মাফ হয় না’ -তিরমিজি : ২৪১২।
এই পাপের পরকালীন পরিণতি অনেক কঠিন।
গিবতের ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মিরাজের রাতে আমি কিছু লোককে দেখলাম, তাদের তামার নখ রয়েছে এবং তা দিয়ে তারা নিজেদের মুখমণ্ডল ও বুক আঁচড়াচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাইল, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা সেসব লোক যারা মানুষের গিবত করতো এবং তাদের ইজ্জত-সম্ভ্রম নিয়ে ছিনিমিনি খেলত। ’ -আবু দাউদ : ৪৮৭৯।
আমাদের সবার উচিত, কারো ব্যাপারে গিবত করে থাকলে জীবিত অবস্থায় তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। যদি সে জীবিত না থাকে, তাহলে তার মাগফিরাতের দোয়া করা। এবং ভবিষ্যতে গীবত না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। আল্লাহ তায়ালা গীবতের মতো ভয়াবহ গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মন্তব্য করুন: