বুধবার, ২৭শে নভেম্বর ২০২৪, ১৩ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • ২৫ শহীদ পরিবারকে ৮ লাখ টাকা করে অনুদান প্রদান
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে সুখবর দিলো বিআরটিএ
  • রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ
  • গণমাধ্যমে হামলা-ভাঙচুর হলে ব্যবস্থা
  • কঠোর হতে চায় না সরকার, আমরা চাই শান্তিপ্রিয় সমাধান
  • বুড়িচংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত
  • নিম্নচাপে উত্তাল সাগর, ৪ সমুদ্রবন্দরে সতর্কসংকেত
  • ঢাকার যে ৫ এলাকায় আজ বেশি বায়ুদূষণ
  • সংঘর্ষে না জড়িয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের
  • যাত্রাবাড়ী-ডেমরায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

ইবাদতে আগ্রহ নষ্ট হওয়ার দশ কারণ

এইচ এম জহিরুল ইসলাম মারুফ

প্রকাশিত:
২০ মার্চ ২০২৪, ১৫:০২

উম্মতে মুসলিমার জন্য প্রধানতম কাজ হলো আল্লাহর ইবাদত করা। ইবাদত না করলে পরকালীন জীবনে মুক্তির আশা করা যায় না। মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করে চিরস্থায়ী সুখময় জান্নাত লাভের জন্য ঈমানের সঙ্গে ইবাদত পালন করা আবশ্যক। তবুও নেক আমলের ব্যাপারে আমরা অনেকে চরম অনীহা প্রদর্শন করি। নেক আমলে বিশেষ সময় দিতে অনেকের কাছে একদম ভালো লাগে না। এ অনীহাবোধ জীবনে অপূরণীয় ক্ষতি ডেকে আনে। এর জন্য অনেক কারণ রয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১০টি কারণ এবং আমলে আগ্রহ সৃষ্টির উপায় সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা করা হলো:-

১. শয়তানের প্ররোচনা : শয়তানের প্রধান কাজই হলো মানুষের অন্তরে নানা ধরনের কুমন্ত্রণা ঢেলে দেওয়া। শয়তানের কুমন্ত্রণা মানুষকে নেক আমল হতে উদাসীন করে রাখে। এ জন্য সর্বদা আল্লাহর স্মরণে মশগুল থাকতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্য এক শয়তান নিয়োজিত করে দিই, অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী। শয়তানরাই মানুষকে সৎপথে বাধা দান করে, আর মানুষ মনে করে যে, তারা সৎপথে রয়েছে।’ -যুখরুফ : ৩৬-৩৭।

২. নফসের প্ররোচনা : মানুষের নফস নেক আমলের জন্য কোনো ধরনের কষ্ট স্বীকার করতে চায় না। এ জন্য নেক আমলের ব্যাপারে সে চরম অবহেলা প্রদর্শন করে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা হজরত ইউসুফ (আ.)-এর উক্তি বর্ণনা করেন, ‘আমি নিজেকে নির্দোষ বলি না। নিশ্চয় মানুষের মন মন্দ কর্মপ্রবণ। কিন্তু সে নয়, আমার পালনকর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয় আমার পালনকর্তা ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ -সুরা ইউসুফ : ৫৩।

৩. অসৎ সঙ্গীর প্রভাব : অসৎ সঙ্গীর প্রভাবেও নেক আমলে অনীহা সৃষ্টি হয়। অসৎ সঙ্গী নেক আমলের পথে বড় প্রতিবন্ধক। তাই সৎ লোকদের সঙ্গে থাকার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো’ -সুরা তাওবা : ১১৯।

৪. গুনাহের প্রভাব : গুনাহের দ্বারা অন্তর প্রভাবিত হয়। গুনাহের পরিমাণ যত বৃদ্ধি পায় অন্তরে এর কুপ্রভাব ততবেশি পড়ে।
যে অন্তর গুনাহের কাজে মজা অনুভব করে সে অন্তরে নেক আমলের আগ্রহ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। গুনাহ মানুষের হৃদয়ে মরিচা ধরায়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘কখনো না, বরং তারা যা করে, তাই তাদের হৃদয় মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে।’ (সুরা মুতাফফিফিন : ১৪)

৫. পরিবেশের প্রভাব : মানুষ পরিবেশের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। অনেককে দেখা যায়, ভালো কোনো পরিবেশে থাকলে নেক আমলের ব্যাপারে বেশ ভালো আগ্রহ থাকে। কিন্তু খারাপ পরিবেশে সে আগ্রহ একদম থাকে না। তাই পরিবেশ পরিবর্তনের চেষ্টা করা।

৬. তাকওয়ার অভাব : ইবাদতে অনাগ্রহের প্রধান কারণ তাকওয়ার অভাব। যার অন্তরে তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় আছে সে নেক আমলে অনীহা প্রদর্শন করতে পারে না। তাকওয়া মানুষের অন্তরে আল্লাহর কাছে জবাবদিহির ভয় সৃষ্টি করে। এর ফলে নেক আমলে আগ্রহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, যাদের মনে তাকওয়া রয়েছে, তাদের ওপর শয়তানের আগমন ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনাশক্তি জাগ্রত হয়।, -সুরা আরাফ : ২০১।

৭. আখিরাতের প্রতি উদাসীনতা : অনেকে আখেরাতে নেক আমলের সুফল এবং নেক আমলে অবহেলার ভয়াবহ পরিণতির ব্যাপারে সচেতন নয়। অনেকে আখেরাতের জীবন বিশ্বাসই করে না। ফলে নেক আমলেও তাদের তেমন আগ্রহবোধ জাগে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে না, তাদের অন্তর সত্যবিমুখ এবং তারা অহংকার প্রদর্শন করেছে।’ -সুরা নাহল : ২২।

৮. জ্ঞানের অভাব : বিভিন্ন নেক আমলের অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। এসব অনেকেই জানে না। ফলে এসব আদায়ের নিয়ম-পদ্ধতি সম্পর্কে যথাযথ ইলম অর্জনেও তারা কোনো চেষ্টা করে না। আর ইলম ছাড়া সঠিকভাবে নেক আমল করা সম্ভব নয়। এর ফলে নেক আমলেও তাদের অনীহা দেখা যায়। এ ছাড়া জ্ঞানহীনদের হৃদয়ে আল্লাহ তায়ালা মোহর মেরে দেন। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, এমনিভাবে আল্লাহ জ্ঞানহীনদের অন্তরে মোহর মেরে দেন। -সুরা রুম : ৫৯।

৯. মন্দ লোকের সমালোচনা : সমাজে কিছু অসৎ লোক আছে, যারা কাউকে নেক আমল করতে দেখলেই সমালোচনা শুরু করে। অনেক ভীতু লোক সমালোচনার ভয়ে নেক আমলের ব্যাপারে অনীহা প্রদর্শন করে। কারও সমালোচনা ও উপহাসকে তোয়াক্কা না করে নেক আমল করে যেতে হবে। কেননা সব নবী-রাসুলের সঙ্গেই ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হয়েছিল কিন্তু তারা এর কোনো ভ্রুক্ষেপ করেনি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এমনিভাবে তাদের পূর্ববর্তীদের কাছে যখনই কোনো রাসুল আগমন করেছেন, তারা বলছে, জাদুকর, না-হয় উন্মাদ।’ (সুরা যারিয়াত : ৫২)

১০. দুনিয়ার প্রতি মোহ : মানুষের নেক আমলে গাফিলতির অন্যতম প্রধান কারণ দুনিয়ার মহব্বত। অনেকে দুনিয়ার মোহে অন্ধ হয়ে পরকালকে বেমালুম ভুলে যায়। সেই সঙ্গে নেক আমলের প্রতি সামান্যতম আগ্রহও তার থাকে না। তাই দুনিয়ার মোহ ও মহব্বত থেকে বাঁচতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘প্রাচুর্যের লালসা তোমাদেরকে গাফেল রাখে’ -সুরা তাকাসুর : ১।

আল্লাহ সবাইকে বোঝার ও আমল করার তওফিক দিন।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর