প্রকাশিত:
২৩ মার্চ ২০২৪, ১৫:৪৬
রংপুর বিভাগের সীমান্ত ঘেষা কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত ফুলসাগর লেক, যা উপজেলা থেকে উত্তরে মাত্র ৭০০ মিটার দূরে অবস্থিত।
ফুলবাড়ী বাসী এ ফুলসাগর লেকটিকে ঐতিহ্যবাহী পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে দেখতে চায়। এ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ঐতিহ্যবাহী ফুলসাগর লেকটিকে উত্তরাঞ্চলের সেরা পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে দেখা। তাদের স্বপ্ন যদি এটি একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হয় তাহলে হাজার হাজার দর্শনার্থী এখানে এসে ভীর জমাবে।
বিশেষ করে ভোরের আকাশে সূর্যের উদিত হওয়া, সন্ধ্যার গোধুলি বেলায় সূর্যাস্ত যাওয়ার দৃশ্যটা মুগ্ধ করে তুলবে সকলকে, কেননা এই ফুলসাগড় লেকটি প্রকৃতির সৌন্দর্য্য অনুভবের একটি জায়গা। গোধলী লগ্নে কিংবা গ্রীষ্মের প্রচন্ডে গরমে ফুলবাড়ী এলাকার সাধারন মানুষ সহ দর্শনার্থীরা সারাদিনের ক্লান্তি শেষে হয়তো প্রকৃতির সাথে আলিঙ্গন করতে পারবে, কিন্তু দুংখ জনক হলেও সত্য এই যে, লেকটি ফুলসাগড় নাম করণ করা হলেও এখানে নেই একটি ফুলের গাছ।
বিষয়টি স্থানীয় জনতা অনুভব করলেও তা অনুভব করেনি এ অঞ্চলের বিগত দিনের বিভিন্ন দলের এমপি, মন্ত্রী, কিংবা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কোন ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান। তবে দেশ স্বাধীনের পর এই প্রথম ফুলবাড়ীর মাটির স্পর্শে বেড়ে উঠা একজন ডাঃ হামিদুল হক খন্দকার। তিনি এমপি হিসেবে মহান সংসদে জনগনের জন্য কথা বলছে, আর সে কারনেই ফুলবাড়ী বাসীর প্রাণের দাবী ফুলবাড়ীর ফুলসাগর লেকটিকে পর্যটন কেন্দ্র করা হোক।
ফুলসাগর লেক খনন ইতিহাসের ব্যাপারে এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, এক সময় ফুলসাগর লেকটিকে সকলে ফুলবাড়ীর ছড়া নামে জানতো। ভারতের কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার কুর্শাহাটের দক্ষিনে প্রবাহিত হয়ে উপজেলার গোরকমন্ডল সীমান্ত দিয়ে বারোমাসিয়া নাম নিয়ে একটি নদী সরাসরি ধরলা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। সেই বারোমাসিয়া নদীর একটি ¯নালা নীলকমল নাম ধারন করে উপজেলার সীমান্তবর্তী নন্দিরকুটি গ্রামের কোল ঘেষে ছাইতন তলা হয়ে সরাসরি উপজেলা সদরের পাশে এসে ফুলবাড়ীর ছড়ার উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে নীলকমল নদী হয়ে ধরলা নদীতে মিলিত হয়।
ভারতের নদীটি ক্ষরস্রোত হওয়ায় ফুলবাড়ীর ছড়াটি গভীরতা বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে তৎকালীন সরকার ফুলবাড়ীর ছড়াটি খনন করেন। পরে এটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ফুলসাগর। সেই থেকে সরকারী ভাবে এর নাম ব্যবহার হচ্ছে ফুলসাগর লেক। এলাকাবাসী জানান, যদি বর্তমান সরকার ফুলসাগর লেকের চারি দিকে বিভিন্ন প্রজাতির সৌন্দর্য বর্দ্ধক ফুল জাতীয় গাছ, নারিকেল জাতীয় গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধী, বনজ ও ফলের গাছ লাগিয়ে সাজিয়ে তুলে- তাহলে ফুলবাড়ীর সৌন্দর্য ফুলসাগরের মাধ্যমে ফুটে উঠবে বলে মনে করেন। ফুলসাগরের চারদিকের পাড়গুলি প্রাণবন্ত করে তুলতে পারলে দেখার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।
এই কাঁচা ভাঙ্গা-চোরা পাড় সংস্কার করে একটু প্রশস্ত করে পাকা করতে পারলে, একদিকে যেমন মানুষ চলাচলের পাশাপাশি মোটর বাইক, অটোরিকশা যাওয়ার উপযোগী হবে। অপরদিকে সুন্দর ও সুসজ্জ্বিত হয়ে উঠবে। এবাবে ধীরে ধীরে ফুলসাগরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের দুর-দুরান্তের জেলা উপজেলা থেকে লোকজন এই ফুলবাড়ীর ফুলসাগর লেকটি শুধু এক নজর দেখারজন্য ছুটে আসবে। এটা শুধু ফুলবাড়ী বাসীর স্বার্থে নয় বরং দেশের উন্নয়নের স্বার্থে লেকটি পর্যটন কেন্দ্র হওয়া দরকার। এটি হলে সরকার এখান থেকে মোটা অংকের রাজস্ব আদায় করতে পারবে। বর্তমান ফুলসাগর লেকটি উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের অধিনে আছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে সাধারন জেলেরা প্রতি বছরে তাদের কাছ থেকে লিজ নিয়ে মাছ চাষ করে আসছে। বর্তমানে ফুলসাগরের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। প্রতি বছর বর্ষায় এর চারপাশের পাড় ভেঙ্গে যায়। এ ফুলসাগর লেকটির পূনরায় খনন করা সহ চারপাশের পাড়গুলি দৃষ্টি নন্দিত ভাবে বাধাই করা গেলে মাছ চাষের পাশাপাশি এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এতে এক দিকে যেমন সরকারের আয় বাড়বে ফুলসাগর লেক হতে অপর দিকে ফুলবাড়ীর জনগন ফুলসাগরের লোভনীয় সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারবে। এই ফুলসাগর লেকটিকে পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করলে ফুলবাড়ীতে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।
মন্তব্য করুন: